যে কোনও ব্যবসা, তা সে একটি ভাড়ার দোকানঘর হোক অথবা একটি বা একাধিক দোকানঘর তৈরি করাই হোক বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা বাণিজ্যিক আবাসন গড়া হোক না কেন, সমৃদ্ধি, মুনাফা ও উন্নতির জন্য বাস’শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত ও নিয়ম মেনে চলতে হবে।চললে সুফল পাওয়া যাবে।
ভাড়া করা দোকান :
দোকান ঘরটির মুখ অর্থাৎ প্রধান প্রবেশদ্বার কোন দিকে, এটা দেখতে হবে।যদি উত্তর বা পূর্ব দিকে মুখ হয়, তা হলে সেই দোকান পশ্চিম বা দক্ষিণের চেয়ে ভাল হবে।
দোকানঘরটি যদি উত্তর-পূর্বদিকে বেড়ে থাকে, তা হলে এ ধরনের দোকান থেকে অনেক বেশি মুনাফা ও সমৃদ্ধি পাওয়া যাবে।
দোকান যদি দুই রাস্তার সংযোগস্থলে হয়, পূর্ব ও উত্তর দিকে রাস্তা থাকে, তা হলে ভাল।
যদি বেখাপ্পা আকারের দোকানঘর হয় তা হলে কিছুতেই ওই দোকান নেওয়া উচিত নয়।ত্রিকোণ ও সিংহ আকারের দোকান সাধারণ মানের।
দোকানঘরের সামনে অথব ঢোকার মুখে যেন কোনও রকমের বাধা, যেমন টেলিফোন বক্স, ইলেকট্রিক বক্স, ল্যাম্পপোস্ট, বড় গাছ ইত্যাদি না থাকে।প্রধান প্রবেশপথের ঠিক উলটো দিকে এইসব থাকলে তা দ্বারভেদ সৃষ্টি করে।
নিজের দোকান :
যদি নিজের দোকান হয় বা দোকানটি কিনে নেওয়া সম্ভব হয়, তা হলে সে ক্ষেত্রে নীচে দেওয়া নিয়মগুলি বিবেচনা করতে হবে, তাতে ফল ভাল হবে।
প্রথমেই দেখে নিতে হবে দোকানঘরটির আকার কেমন।চৌকো বা আয়তাকার হলে ভাল।বেখাপ্পা আকারের দোকান শুরু করার আগে সেটিকে সংশোধন করে নিতে হবে।যদি বাস’শাস্ত্র অনুসরণ করে তা সংশোধন করা সম্ভব না হয় তা হলে সেই দোকান নেওয়া উচিত।
আগেই বলা হয়েছে, পূর্ব ও উত্তর দিকে রাস্তাযুক্ত দোকান ভাল।যদি পশ্চিম, দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক খোলা থাকে তা হলেও দোকানঘরটি ভালই হবে।
উত্তর-পূর্ব দিক যদি সামান্য এগিয়ে থাকে তা হলে দোকান বিশেষ ভাল।
দোকানঘরের দরজা উত্তর বা পূর্ব দিকে খোলা থাকবে।যদি সম্ভব হয় দক্ষিণ খোলা দোকান না নেওয়াই উচিত।
দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে শো-কেস রাখতে হবে।উত্তর-পূর্ব দিকে শো কেস বসানো চলবে না।
দক্ষিণ-পশ্চিম, দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে দোকানের মালপত্র জড়ো করে রাখতে হবে।
দোকানের মালপত্র দোকানের দক্ষিণ-পশ্চিম, পশ্চিম অথবা দক্ষিণ দিকের তাকে রাখতে হবে।
দোকানের মধ্যেই যদি চিলেকোঠা, চিলেঘর বা মেজেনাইন ফ্লোর তৈরি করতে হয় তা হলে সেটি করতে হবে শুধু দক্ষিণ এবং পশ্চিম দিকে।পূর্ব বা উত্তর দিকে যেন কিছুতেই না করা হয়।
দোকানের মধ্যে নামাজের জায়গা, পবিত্র আয়াত বা চিহ্ন উত্তর-পূর্ব কোণে রাখতে হবে।স্থানটি সব রকমের বাধামুক্ত ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকবে।এখানে কোনও রকমের মালপত্র রাখা চলবে না।জায়গার অভাবে প্রয়োজনে ছোট শো-কেসে পবিত্র আয়াত বা চিহ্ন রাখা যাবে।
মালিক বা ম্যানেজার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে বসবেন, মুখ থাকবে উত্তর বা পূর্ব দিকে।
অন্যান্য কর্মচারীর বসার জায়গা এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে কাজ করার সময় তাদের মুখ থাকে উত্তর বা পূর্ব দিকে।
টাকা-পয়সা, পাশবই, অ্যাকাউন্টস বই ইত্যাদির আলামরি এমনভাবে রাখাতে হবে যাতে তা খোলার সময় মুখ থাকে উত্তর অথবা পূর্ব দিকে।
দোকানে পানির ব্যবস্থা যেন উত্তর-পূর্ব বা পূর্ব দিকে থাকে।
দক্ষিণ মুখি দোকান :
দক্ষিণমুখী দোকানের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে মালিকের বসার ব্যবস্থা রাখতে হবে।দোকানদারকে পূর্ব অথবা পূর্বাংশের উত্তর-পূর্ব দিকে মুখ করে টেবিল নিয়ে বসতে হবে।তার ডানদিকে আয়রন চেস্ট বা আলমারি অথবা ক্যাশবাক্স থাকবে।এই ক্যাশবাক্স ইত্যাদির মুখ থাকবে উত্তর বা পূর্ব দিকে।ক্যাশবাক্স বা আলমারি সম্পূর্ণরূপে উত্তর-পূর্ব দিকে ঘুরিয়ে রাখা যাবে না।কারণ, ওরকম ঘুরিয়ে রাখলে আলমারির পিছনে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে একটা শূন্যস্থান সৃষ্টি হবে এবং তার কুপ্রভাব পড়বে।দোকানের মালপত্র তাকে রাখতে হলে সেই তাকগুলিকে পশ্চিমের দেওয়াল ঘেঁসে রাখতে হবে।এগুলি যেন আটকানো থাকে।এই সব তাকের মধ্যে ভারী মালপত্র মজুদ করতে হবে।হালকা মালপত্র উত্তর এবং পূর্ব দিকের তাকে রাখতে হবে।এ ক্ষেত্রে উত্তর ও পূর্ব দিকের দেওয়াল থেকে অন-তপক্ষে তিন ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে।
পূর্ব দিকের দেওয়ালের উত্তর অংশে অর্থাৎ উত্তর-পূর্ব বা ঈশান কোণে পশ্চিমমুখী করে পবিত্র আয়াত বা সূরা রাখা যাবে।এ ক্ষেত্রে উত্তর-পূর্ব কোণের উত্তরদিকের দেওয়াল ঘেঁসে আয়াতুল কুরসী বসাতে হবে।উত্তর-পূর্বের কুলুঙ্গিতে কোরআন শরীফের সূরা বা পবিত্র চিহ্ন রাখা যেতে পারে।উক্ত স্থান থেকে কমপক্ষে ছয় ইঞ্চি জায়গা ছেড়ে মালপত্র রাখা যেতে পারে।দোকানের বেশিরভাগ জিনিসপত্র সম্ভব হলে পশ্চিম দিকের মেঝেতে চটের বস্তা, কাঠের বা কার্ডবোর্ডের বাক্স ইত্যাদি ভরে রাখতে হবে।এইগুলি তাকে না রাখাই ভাল।মালপত্র প্রচন্ড ভারী হলে সে সব পূর্ব ও উত্তর দিকে নূন্যতম ৩ ইঞ্চি এবং উত্তর-পূর্বে ন্যূনতম ১ ফুট জায়গা ছেড়ে রাখতে হবে।এভাবে জিনিসপত্র রাখলে ব্যবসায় দিনে দিনে উন্নতি ঘটবে।জিনিসপত্র রাখার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে এবং সে জন্যই দোকানের মুখ যে দিকেই হোক না কেন, দোকানের মালপত্র যদি ওইভাবে রাখা হয় তা হলেও দোকানের ভালই হবে।দক্ষিণমুখী দোকানের চিত্রময় নির্দেশ
পশ্চিমমুখী দোকান :
পশ্চিমমুখী দোকান বাস’মতে সাধারণ মানের।পশ্চিম দিকের সীমানা দেওয়াল সংলগ্ন দোকান তৈরি করতে হবেদ।োকানের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে চেয়ার টেবিল এরকমভাবে বসাতে হবে যাতে মুখ উত্তর দিকে থাকে।দোকান মালিককে উত্তরের দিকে মুখ করে বসতে হবে।আলমারি বা ক্যাশবাক্স দোকান মালিকের বাঁদিকে থাকবে।এগুলির মুখ থাকবে পূর্ব, পূর্বাংশের উত্তর-পূর্ব, উত্তর অথবা উত্তরাংশের উত্তর-পূর্ব দিকে।ক্যাশবাক্স বা আলামারি সম্পূর্ণরূপে উত্তর-পূর্ব দিকে না ঘুরে যায় এটা লক্ষ্য রাখতে হবে।কারণ, তা না হলে ক্যাশ বাক্স বা আলমারির পিছনের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে একটা ফাঁক রয়ে যাবে।এবং তার ফলে খারাপ প্রভাব পড়বে।
পবিত্র আয়াত বা চিহ্ন একই রকম জায়গায় থাকবে যেমনটি দক্ষিণমুখী দোকানের জন্য বলা হয়েছে।
উত্তরমুখী দোকান :
বাস্তুমতে দোকান তৈরি করলে উত্তরমুখী দোকান থেকে বিশেষ সুফল পাওয়া যায়।উত্তরমুখী দোকান উত্তরের সীমানা দেওয়াল কিছুটা ছেড়ে দিয়ে তৈরি করতে হবে (এ ক্ষেত্রে অবশ্যই পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন আইন অনুসারেই ছাড়তে হবে)।যে জায়গা ছেড়ে দেওয়া হবে তাতে দোকানের গ্রাহকদের প্রবেশের সিঁড়ি তৈরি করা যেতে পারে।দোকান মালিক পশ্চিমাংশের উত্তর-পশ্চিম কোনায় টেবিল বা চেয়ার পেতে পূর্বাংশের উত্তর-পূর্বদিকে মুখ করে বসবেন।ডান দিকে থাকবে ক্যাশবাক্স বা আলমারি।দোকান মালিক ইচ্ছে করলে তার ডান দিকে একটি টুলে ক্যাশবাক্স বা আলমারি রাখতে পারেন।ইচ্ছে করলে দোকান মালিক মেঝেতেও বসতে পারেন।দক্ষিণ-পশ্চিম কোনায় টাকা রাখার ক্যাশবাক্স বা আলমারি রাখা যেতে পারে।
দোকানের গ্রাহকরা এগিয়ে থাকা উত্তর বা উত্তরাংশের উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে দোকানে ঢুকবেন।মালপত্র রাখা, মজুদ করা ও পবিত্র আয়াত বা চিহ্ন টাঙানোর ক্ষেত্রে দক্ষিণ ও পশ্চিমমুখী দোকানের মতোই নিয়ম মানতে হবে।
উত্তরমুখী দোকানের চিত্রময় নির্দেশ :
উত্তরমুখী দোকানের মালিক যতখানি সম্ভব উত্তর-পশ্চিম কোণ ছেড়ে নিজের বসার জায়গা করবেন।এরকম বসার জাগয়া না হলে মামলা-মকদ্দমা ও অযথা আশঙ্কা থাকবে।
পূর্বমুখী দোকান :
পূর্বমুখী দোকানপাট ভাল সুফল দেয়।এরকম দিকের দোকানও পূর্ব দিকের সীমানা দেওয়াল কিছুটা ছেড়ে তৈরি করতে হবে।পূর্ব দিকে ছেড়ে দেওয়া ফাঁকা জায়গায় দোকানের প্রবেশপথ রাখা উচিত।দক্ষিণ-পশ্চিম কোনায় দোকান মালিকের বসার জায়গা করতে হবে।বসা অবস’ায় দোকান মালিকের মুখ যেন পূর্বদিকে থাকে।এরকম দোকান গ্রাহকদের প্রবেশের পথ থাকবে পূর্ব অথবা উত্তরাংশের উত্তর-পূর্ব দিকে।দোকানের পশ্চিমাংশের উত্তর-পশ্চিম এবং পশ্চিমমুখী করে ঠাকুরের ছবি টাঙানো বা পুজো করা যাবে।পূর্বমুখী দোকানের মালিক যদি দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় বসে কারবার করেন তা অশুভ।শত্রু ভয়, চুরির ভয়, আগুন, দুর্ঘটনার আশঙ্কা তো থাকবেই, এমনকি দোকান মালিকের স্বাস্থ্যহানিও ঘটতে পারে।সুতরাং অবশ্যই দক্ষিণ-পুর্ব কোণ থেকে দুরে দোকান মালিক বসবেন।
পূর্বমুখী দোকানের চিত্রময় নির্দেশ