fbpx

বাস্তুশাস্ত্রে বিভিন্ন প্রকারের ভূখণ্ডের বর্ণনা করা হয়েছে। সাধারণত দুটি অংশে তা ভাগ করা হয়েছে।

১। ভূমির বিভিন্ন দিকে উঁচু অথবা নিচু স্থান। ২। আকারের ভিত্তিতে। প্রথমোক্ত ঢালু ভূখণ্ড সম্পর্কে জানার আগে আমাদের বিভিন্ন দিকের ভূমির উঁচু অথবা নিচু থাকার পরিণাম কী হতে পারে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা দরকার।

বিভিন্ন দিকে ভূমি ঢালু হওয়ার শুভাশুভ :
পূর্ব দিকে ঢালু থাকলে সেটি হবে ধনদায়ী ও উন্নতিকারী।
আগ্নেয় দিকে ঢালু থাকলে কষ্ট, মৃত্যু ও পীড়াদায়ী।
দক্ষিণ দিকে ঢালু থাকলে যশোহানি ও পুত্রহানি।
নৈর্ঋত দিকে ঢালু থাকলে যশোহানি ও পুত্রহানি।
পশ্চিম দিকে ঢালু থাকলে ধনহানি ও পীড়াদায়ী।
বায়ব্য দিকে ঢালু থাকলে উদ্বেগ ও প্রবাসকারী।
উত্তর দিকে ঢালু থাকলে ধনদায়ী।
ঈশান দিকে ঢালু থাকলে বিদ্যা, ধনধান্য, সুখদায়ী।
মধ্য স্থানে ঢালু যুক্ত জমি হয় অনিষ্টকারী।

বিভিন্ন দিকে ভূম উঁচু হওয়ার শুভাশুভ :
পূর্ব দিকে ভূমি উঁচু থাকলে সন্তানহানি।
আগ্নেয় দিকে উঁচু থাকলে ধনলাভ।
দক্ষিণ দিকে উঁচু থাকলে সেই ভুমি রোগ সৃষ্টিকারী।
নৈর্ঋত দিকে ভূমি উঁচু থাকলে সন্তান লাভ।
বায়ব্য দিকে উঁচু থাকলে ধননাশ।
উত্তর দিকে উঁচু হলে সেই ভূমি রোগ সৃষ্টিকারী।
ঈশান দিকে ভূমি উঁচু হলে তা হবে ক্লেশ সৃষ্টিকারী ও অমঙ্গলকারক।
পশ্চিম দিকে ভূমি উঁচু হলে হল তা সুখদায়ক।

উচ্চতা ও ঢালুর ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রকারের ভূখণ্ড : আমরা যে ভূখণ্ড বাস্তুর জন্য ব্যবহার করি সেই ভূখণ্ড নানা ধরণের হয়। সেই ভূমির ঢালও নানা দিকে থাকে। ঢাল অনুসারে বিভিন্ন প্রকারের জমিকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। এদের মোট ২৬ প্রকারে বিভক্ত করা হয়েছে। নিম্নে তারই বিশদ বর্ণনা দেওয়া হল। সঙ্গের চিত্রগুলিতে প্রতিটি জমির ঢাল বুঝাতে উঁচু দিকটি (+) চিহ্নযুক্ত এবং নিচু দিকটি (-) চিহ্নযুক্ত নির্দেশিত হয়েছে। জমির দিকগুলি অধ্যায় শুরুতে নির্দেশিত দিক অনুসারে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন, পূর্ব (-) চিহ্নযুক্ত, পশ্চিম (+) চিহ্নযুক্ত, উত্তর (+) চিহ্নযুক্ত এবং দক্ষিণ (-) চিহ্নযুক্ত।

১। গোবীথি : পশ্চিম দিকে উঁচু ও পুর্ব দিকে ঢালু থাকলে সেই ভূমিকে গোবীথি বলা হয়। এই ধরণের ভুমিতে সন্তান লাভ হয়। (চিত্র-১)

২। জলবীথি : উত্তর দিকে উঁচু ও দক্ষিণ দিকে ঢালু থাকলে সেই জমি জলবীথি। এ ধরণের ভূমিতে সন্তান লাভ হয় । ( চিত্র-২)

৩। যমবীথি : উত্তর দিকে উঁচু ও দক্ষিণ দিকে ঢালু থাকলে সেই জমিকে যমবীথি বলা হয়। এই ভূমি স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর (চিত্র-৩) চিত্র:
৪। গজবীথি : দক্ষিণ দিক উঁচু ও উত্তর দিকে ঢালু জমি গজবীথি। এই ধরণের জমি আরোগ্যকারী ( চিত্র -৪)

৫। ভূতবীথি : ঈশাণ দিকে উঁচু ও নৈর্ঋত দিকে ঢালু থাকলে সেই জমিকে ভূতবীথি বলা হয়। এর ফল কষ্টদায়ী (চিত্র-৫)

৬। নাগবীথি : আগ্নেয় দিকে উঁচু ও বায়ব্য দিকে ঢালু হলে সেই ভূমি নাগবীথি। এই ধরণের ভূমি অর্থ লাভ প্রদানকারী (চিত্র – ৬)

৭। ধনবীথি : নৈর্ঋত দিকে উঁচু ও ঈশান দিকে ঢালু হলে সেই ভূমিকে ধনবীথি বলা হয়। এ ধরণের জমি প্রচুর ধনদায়ী।

৮। বৈশ্বানরবীথি : বায়ব্য দিকে উঁচু ও আগ্নেয় দিকে ঢালু ভূমি বৈশ্বানরবীথি। এ ধরণের জমি ধননাশকারী।

৯। পিতামহ বাস্তু : যে ভূমি পূর্ব ও আগ্নেয় দিকের মাঝখানে সর্বাধিক উঁচু এবং পশ্চিম ও বায়ব্য দিকের মাঝখানে সর্বাধিক নিচু থাকে তাকে পিতামহ বাস্তু বলা হয়। এ ধরণের ভূমিতে মানুষ সুখী হয়।

চিত্র:

১০। সুপন্থ বাস্তু : যে ভূমি আগ্নেয় দিক ও দক্ষিণ দিকের মাঝখানে সর্বাধিক উঁচু হবে এবং উত্তর দিক ও বায়ব্য দিকের মধ্যে সব থেকে নিচু থাকবে তাকে সুপন্থ বাস্তু বলা হয়। এই ধরণের জমি সকল রকমের কাজের পক্ষে অনুকূল।

১১। দীর্ঘায়ু বাস্তু : যদি ভূমি দক্ষিণ দিক ও নৈর্ঋত দিকের মধ্যে সব থেকে উঁচু থাকে এবং উত্তর দিক ও ঈশান দিকের মধ্যে সব থেকে নিচু থাকে তা হলে সেই ভূমি হল দীর্ঘায়ু বাস্তু। এই ধরণের ভূমিতে বংশ বৃদ্ধি হয়।

১২। পুণ্যক বাস্তু : ভূমি যদি নৈর্ঋত দিক ও পশ্চিম দিকের মাঝখানে সব থেকে উঁচু হয় এবং পূর্বদিক ও ঈশান দিকে সব থেকে নিচু হয় তা হলে তাকে পুণ্যক বাস্তু বলা হয়। সমস্ত রকমের শুভ ফল এই জমিতে পাওয়া যায়।

চিত্র :

১৩। অপথ বাস্তু : যদি ভূমি পশ্চিম দিকে ও বায়ব্য দিকের মাঝখানে সর্বধিক উঁচু এবং পূর্ব দিক ও আগ্নেয় দিকে ঢালু হয় তা হলে এই ভূমি হবে অপথ বস্তু। এই ধরণের ভূমি হল শত্রুতা ও কলহের স্থান।

১৪। রোগকৃত বাস্তু : যে ভূমি বায়ব্য দিক ও উত্তর দিকের মধ্যে সব থেকে উঁচুতে থাকে এবং আগ্নেয় দিক ও দক্ষিণ দিকের মধ্যে সব থেকে নীচে থাকে তা হলে রোগকৃত বাস্তু। এই ধরণের ভূমি হল নানারকম রোগব্যাধির আস্তানা।

১৫। অর্গলা বাস্তু : ভূমি যখন উত্তর দিক ও ঈশান দিকের মধ্যে সব থেকে উঁচু থাকে এবং দক্ষিণ ও নৈর্ঋত দিকে ঢালু থাকে তখন সে জমি হবে অর্গলা বাস্তু। এই জমি ভয়ঙ্কর ধরণের পাপ নষ্ট করে দেয়।

চিত্র :

১৬। শ্মশান বাস্তু : ভূমি যদি ঈশান দিক ও পূর্ব দিকের মধ্যে সব থেকে উঁচুতে থাকে এবং নৈর্ঋত দিক ও পশ্চিম দিক সব থেকে নিচু হয় তা হলে সে জমিকে শ্মশান বাস্তু বলা হয়। এই ভূমিতে কুল বা বংশ হানি ঘটে।

১৭। শ্যেনক বাস্তু : যে ভূমি নৈর্ঋত, বায়ব্য ও ঈশান দিকে সব থেকে উঁচু হবে এবং আগ্নেয় দিকে সব থেকে নিচু সেটি হল শ্যেনক বাস্তু। এর ফল হয় মৃত্যু।

১৮। স্বমুখ বাস্তু :যে ভূমি বায়ব্য, ঈশান ও আগ্নেয় দিকে সব থেকে উঁচু, উত্তর ও নৈর্ঋত দিকে সব থেকে নিচু, সেটি হল স্বমুখ বাস্তু। এই ভূমি দারিদ্র প্রদান করে। চিত্র :
১৯। ব্রাহ্মণ বাস্তু : যখন ভূমি ঈশাণ, আগ্নেয় ও নৈর্ঋত দিকে উঁচু এবং বায়ব্য দিকে সব থেকে নিচু তখন সেই জমি হবে ব্রাহ্মণ। এ জমি অশুভ ফলদায়ী।

২০। শাণ্ডুল বাস্তু : যে ভূমি ঈশান দিকে উঁচু এবং আগ্নেয়, নৈর্ঋত ও বায়ব্য দিকে নিচু, সেই ধরণের ভূমি হল শাণ্ডুল বাস্তু। এই বাস্তু অশুভ ফল প্রদানকারী।

২১। স্থাবর বাস্তু : যে ভূমি শুধু আগ্নেয় দিকে উঁচু এবং নৈর্ঋত, বায়ব্য ও ঈশান দিকে নিচু, তাকে স্থাবর বাস্তু বলা হয়। এ হল শুভ ফল দায়ক।

চিত্র:

২২। স্থণ্ডিল বাস্তু : যে ভূমি শুধু নৈর্ঋত দিকে উঁচু এবং বায়ব্য, ঈশান ও আগ্নেয় এই তিন দিকে নিচু, তাকে বলা হয় স’ণ্ডিল বাস্তু। এও শুভ ফলদায়ী।

২৩। সুসন্তান বাস্তু : যে ভূমি আগ্নেয়, দক্ষিণ ও নৈর্ঋত দিকে উঁচু এবং উত্তর দিকে নিচু তা হল সু্সন্তান বাস্তু। এ রকম ভূমি ব্রাহ্মণ, বিদ্বান ও অধ্যাপকদের পক্ষে শুভ।

২৪। সুতল বাস্তু : ভূমি যদি নৈর্ঋত, পশ্চিম ও বায়ব্য দিকে উঁচু থাকে এবং পূর্ব দিকে নিচু থাকে তা হলে সেটি সুতল বাস্তু। এই ভূমি দেশ বা রাজ্যের পক্ষে সমৃদ্ধশালী হয়। এ ধরণের ভূমি ক্ষত্রিয়, শাসক ও প্রশাসকদের পক্ষে অনুকূল।

চিত্র:

২৫। চর বাস্তু : যে ভূমি বায়ব্য, উত্তর ও ঈশাণ দিকে উঁচুতে থাকলেও দক্ষিণ দিকে সব থেকে নিচু থাকে তাকে চর বাস্তু বলা হয়। এ ধরণের ভূমি বৈশ্য ও ব্যবসায়ী শ্রেনীর পক্ষে অনুকূল।

২৬। শ্বমুখ বাস্তু : ভূমি যখন ঈশান, পূর্ব ও আগ্নেয় দিকে উঁচু থাকে, পশ্চিম দিকে নিচু তখন তাকে শ্বমুখ বাস্তু বলা হয়। এ ধরণের জমি সমাজের নিম্ন ও দুর্বল শ্রেণীর পক্ষে অনুকুল।

চিত্র :

জমির ঢালের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি : বাস্তুশাস্ত্রে জমির ঢাল সম্পর্কে বলা হয়েছে যে জমির ঢাল যেন একই দিকে থাকে। এবং তা উত্তর-পূর্ব দিকে হওয়াই বিধেয়। বাস্তুশাস্ত্র যে বিজ্ঞানভিত্তিক তার উত্তর পাওয়া যায় জমির ঢাল উত্তর-পূর্ব দিকে রাখার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায়। জমির ঢাল উত্তর-পূর্ব দিকে রাখা অত্যন্ত উপকারী। কেননা উত্তর-পূর্ব দিকে ঢাল করলে সমস্ত জমির পানি উত্তর-পূর্ব দিকে সঞ্চিত হবে। এই সঞ্চিত পানি ধীরে ধীরে মাটির গভীরে প্রবেশ করবে। আর উত্তর-পূর্ব দিকে বাস্তু শাস্ত্র মতে পাতকুয়া, টিউবওয়েল, পুকুর ইত্যাদির অবস্থান নির্দেশ করেছে। মাটির গভীরে সঞ্চিত পানি প্রবেশের কারণে পানির উৎসগুলির পানিস্তর কখনওই কমবে না। আবার উত্তর-পূর্ব দিক থেকে আসা সূর্যরশ্মির মধ্যে যে লাল উজানি রশ্মি আছে সেই রশ্মি উত্তর-পূর্ব দিকে থাকা পানি শোষণ করে। পানি সেই শোষিত লাল উজানি রশ্মি দুপুরের পর থেকে বিকিরিত করে।

আবার জমির দক্ষিণ-পশ্চিম দিকটি উঁচু হওয়া উচিত। কেননা ওই দিক উঁচু থাকলে পানি উত্তর-পূর্ব দিকে গড়িয়ে যায়। আবার পৃথিবী সর্বক্ষণ ২৩০১/২ ডিগ্রী উত্তর-পূর্ব দিকে কাত হয়ে ঘোরে। সেই কারণেও জমির দক্ষিণ-পশ্চিম দিক্‌ উঁচু হবে এবং উত্তর-পূর্বদিক্‌ নিচু থাকবে।

আয়ূর্বেদশাস্ত্রেও বলা হয়েছে যে এমন জমিতে বাস করা স্বাস্থ্যকর যার ঢাল উত্তর ও পূর্বদিকে আছে। এবং অবশ্যই পূর্ব ও উত্তর উম্মুক্ত থাকবে।

আটটি দিকের গুরুত্ব :

বাস্তু বিজ্ঞান অনুসারে মানবজীবনে আটটি দিকের প্রভাব অবশ্যম্ভাবী।
কোনও ভবন নির্মাণ করানোর সময় অতি অবশ্যই র্পূব দিক্‌টি খোলা ও ফাঁকা রাখতে হবে। পূর্ব দিক্‌টি হল পৈতৃক সন্তান। পূর্ব দিক্‌ খোলা না রাখলে পিতৃপক্ষের হানি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আগ্নেয় দিক্‌ মানবজীবনের স্বাস্থ্য প্রদান করে।
দক্ষিণ ধনধান্য, সমৃদ্ধি, প্রসন্নতা ও শান্তি দেয়।
নৈঋত নিজের আচারবিচারের জন্য দায়ী হয়। নৈঋতে কোনও রকমের গুরুতর দোষ রাখা অকালমৃত্যুকে আমন্ত্রণ জানানোর সমান।
পশ্চিম দিক্‌ সাফল্য, যশ ও ভদ্র ব্যবহার প্রদান করে।
বায়ব্য দিক্‌ অন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রিত করে। বন্ধুত্ব ও শত্রুতা উভয়ই এর মধ্যে আছে।
উত্তর দিক্‌ হল মাতৃসন্তান। বাড়িতে উত্তর দিকে ফাঁকা সন্তান না ছাড়লে মাতৃপক্ষের হানির আশঙ্কা থাকে।
ঈশানে কোনও প্রকারের দোষ, কাটছাঁট হওয়া উচিত নয়। ঈশান বংশবৃদ্ধিকে স্থায়িত্ব প্রদান করে।

(Commenting: OFF)

বাসস্থানের বস্তু-প্রভাবের সঙ্গে মানুষের জীবনও অনেকাংশে প্রভাবিত হয়ে থাকে।আমাদের প্রাচীন গ্রন্থগুলিতে এরকম বহু প্রভাবের কথাই বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।অর্থাৎ বাস্তুভূমির (বসবাসের, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অথবা যে কোন নির্মাণ স্থান) পূর্ব দিকটা নিচু হলে বংশ বৃদ্ধি হয়, উত্তর দিক নিচু হলে ধনবৃদ্ধি হয়, দক্ষিণে নিচু হলে হয় মৃত্যু এবং পশ্চিমে নিচু হলে ধনহানি ঘটে।

প্রাচীন গ্রন্থে বাড়িঘর তৈরির মাসের কথা বলা হয়েছে।যেমন কোন মাসে বাড়িঘর তৈরি করলে মঙ্গলজনক, সমৃদ্ধিশালী হয়, আবার কোন মাসে বাড়িঘর নির্মাণ মানুষের পক্ষে ক্ষতিকর।তাই বৈশাখ মাসে বাড়ি তৈরি করলে ধনরত্নাদি লাভ হয়।জ্যৈষ্ঠ মাসে বাড়ি করলে হয় মৃত্যু।আষাঢ়ে বাড়িঘর নির্মাণ শুভ, ধনরত্ন লাভ হয়।কিন’ এই বাড়িতে গবাদি পশু পালন করা যাবে না।শ্রাবন মাসে বাসস্থান তৈরি করা শুভ, কাঞ্চন ও পুত্র লাভ হয়।ভাদ্রতে বাড়ি তৈরি ভাল নয়, ক্ষতি হয়।আশ্বিন মাসে বাড়ি নির্মাণ করলে স্ত্রী মারা যাবে।কার্ত্তিকে নির্মিত বাড়ির মালিক ধনধান্যের মালিক হবে।অগ্রহায়ণের বাড়ি ভাল হবে। পৌষ মাসে বাড়ি করলে চোরের ভয় থাকবে।মাঘ মাসে বাড়ি নির্মান করলে অগ্নিভয় অবশ্যম্ভাবী।ফাগুন মাসে বাড়ি করলে কাঞ্চন ও পুত্র লাভ হয়।চৈত্র মাসে নির্মিত বাড়িতে রোগভোগ লেগেই থাকে।

জ্যোতিষতত্ত্বে বলা হয়েছে যে বৈশাখ, আষাঢ়, শ্রাবণ, অগ্রহায়ণ, ফাগুণ ও কার্তিক মাসে বাড়িঘর তৈরি করলে স্ত্রী ও ধনসম্পদের সুখভোগ হয়।

প্রাচীন গ্রন্থে বলা হয়েছে রবিবার ছেড়ে অন্য সব বারে গৃহ, প্রাসাদ, কুয়ো ও পুকুর তৈরি করলে শুভ ফল হয়।শুক্লপক্ষে বাড়ি তৈরি করলে সুখ লাভ হয়।কৃষ্ণপক্ষে বাড়ি করলে চোরের ভয় থাকে।নাগের মাথায় বাড়ি তৈরি করলে গৃহস্বামীর মৃত্যু হয়।নাগের পিঠে বাড়ি তৈরি করলে পুত্র ও স্ত্রীর মৃত্যু হয়।নাগের পুচ্ছদেশে বাড়ি তৈরি করলে অর্থহানি হয়।আর নাগের ক্রোড়দেশে বাড়ি করলে গৃহস্বামী হন সমৃদ্ধিশালী।

রাজা ভোজ বলেছেন, সৌর শ্রাবণ, ফাগুন, ভাদ্রপদ ও মাঘ মাসে পূর্ব-পশ্চিমমুখী বাড়ি তৈরী করা উচিত।কার্তিক, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, অগ্রহায়ণ মাসে দক্ষিণ ও উত্তরমুখী বাড়ি তৈরী করা দরকার।এ সব নিয়ম না মেনে বাড়ি তৈরি করলে রোগ, শোক ও অর্থহানি হয়।সৌর চৈত্র, পৌষ, আষাঢ় এবং আশ্বিন মাসে কখনই বাড়ি তৈরি করা উচিত হয়।

ধ্বজাদির ফল হিসেবে বলা হয়েছে, ধ্বজার স্থানে বাড়ি তৈরি করলে ঐশ্বর্য প্রাপ্তি হয়।একই রকমভাবে ধূম্রস্থানে বাড়ি তৈরি করলে হয় মৃত্যু।সিংহে তৈরি করলে যশ লাভ হয়।শ্বানে তৈরি করলে হয় অনর্থ।বৃষে তেরি করলে ভোগী হয়।খরে তৈরি করলে দেহে পীড়া হয়।গজে তৈরি করলে হয় গজেকী।আর কাকপদে বাড়ি তৈরি করলে বাড়ির মালিকের হয় মৃত্যু।

(Commenting: OFF)

জমির মধ্য বিভাজন স্থানকে ব্রহ্মস্থান বলা হয়।৮১টি পরিভাষা (স্প্যান), ৯টি বর্গ যেখানে বাস্তু পুরুষের নাভিস্থলের ঠিক চারদিকে অবস্থান করছে, সেটি হল ব্রহ্মস্থান।

চিত্র:

‘ময়মতম’ অনুসারে যে সকল গুরুত্বপূর্ন স্থান আছে সেগুলিকে ‘মর্ম’ বলা হয়েছে।এগুলি একরকম রেখা যা উত্তর থেকে দক্ষিণ জুড়ে রয়েছে এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম জুড়ে রয়েছে।উত্তর-দক্ষিণ রেখাকে ‘নাড়ি’ বলা হয়েছে এবং পূর্ব-পশ্চিম রেখাকে ‘বংশ’ বলা হয়।ব্রহ্মস্থানের কোনাকুনি সরলরেখা টানলে সেটি হবে ‘কোণসূত্র’।এইটি প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ স্থান।বাড়ি তৈরির সময় এর সুরক্ষা প্রয়োজন।

চিত্র:

বৃহদসংহিতা অনুসারে লম্বা কোনাকুনি সরলরেখা সেখানে গিয়ে মিলিত হচ্ছে এবং বর্গগুলির মধ্যস্থল হল এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান।এই স্থানটিকে যেন কোনও ভাবেই আঘাত না করা হয়।সুতরাং ব্রহ্মসস্থান ও শক্তিস্থলকে রক্ষা করতে হবে।

বাসস্থান ব্রহ্মস্থান বা কেন্দস্থান রাখার পদ্ধতি :

যতটা সম্ভব ব্রহ্মস্থান বা কেন্দস্থানকে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং সম্ভব হলে ব্রহ্মস্থান থাকবে মুক্ত আকাশের তলায়।
ব্রহ্মস্থানে থাম, পিলার, কুয়ো বা জঞ্জাল ফেলার জায়গা কিছুতেই করা যাবে না।
ব্রহ্মস্থানকে ফাঁকা রেখে যে জায়গা থাকবে, তাতে সামাজিক উৎসব অনুষ্ঠান করা যেতে পারে।
ছোটখাটো বাড়িতে যেখানে ব্রহ্মস্থান ফাঁকা রাখার প্রশ্নও ওঠে না, সেটি লিভিং রুম করা যেতে পারে এবং ঘরটির মাঝখানে কোনও রকমের আসবাব রাখা উচিত নয়।
রেসিডেন্সিয়াল কমপ্লেক্স্ বা অ্যাপার্টমেন্টের নকশা এমনভাবে করতে হবে যাতে ব্রহ্মস্থান ফাঁকা রাখা যায় এবং কেউ সেখানে যেন চলাফেরা না করে।

কলকারখানা অফিস ব্রহ্মস্থান বা কেন্দস্থান :
কলকাখানায় ব্রহ্মস্থানটিকে ‘লন’ বা উঠোন হিসেবে রাখা যেতে পারে।সম্ভব হলে মধ্যস্থলে ছোট ফুল গাছ বা তুলসী গাছের বাগান করা যেতে পারে।
ব্রহ্মস্থানে কুয়ো বা পাম্প যেন তৈরি করা না হয়।এখানে অস্থায়িভাবেও কখনও ভারী জিনিস রাখা উচিত নয়।
অফিসে ব্রহ্মস্থানটিতে বাগান করা যেতে পারে।ব্রহ্মস্থানটিকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখা উচিত।ছোট ছোট সুন্দর গাছপালা দিয়ে সাজালে ভাল হয়। প্রয়োজনে ব্রহ্মস্থানে কনফারেন্স রুম করা যেতে পারে।মাঝে-মধ্যে মিটিং হবে কিন্তু কোনও রকমের ভারী টেবিল ও অন্যান্য আসবাব ব্রহ্মস্থান রাখা যাবে না।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ব্রহ্মস্থানটি যেভাবে ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে তা মেনে চললে শান্তি ও সমৃদ্ধি অবশ্যই লাভ করা সম্ভব।

পরিশেষে জানাই, বাড়ির ব্রহ্মস্থান ও মর্মস্থান মানব শরীরের মর্মস্থানের মতোই অত্যন্ত সংবেদনশীল।এ জন্য ব্রহ্মস্থানে কোনও অপবিত্র বস্তু যেমন উচ্ছিষ্ট বা পাদুকা রাখা অনুচিত তেমনি পেরেক পোঁতা বা গর্ত করে কিছু ব্রহ্মস্থানে নির্মাণ করাও অশুভ।শাস্ত্রমতে বাস্তু পুরুষের ব্রহ্মস্থানের ও মর্মস্থানের যে অংশের হানি হবে গৃহস্বামী ও গৃহে বসবাসকারীর দেহের অনুরূপ স্থানে পীড়া হবে।

(Commenting: OFF)