fbpx

মানব সভ্যতার বিকাশ মানুষের জন্ম, পরিবেশ ও বাসস্থানের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। জ্যোতিষ মানুষের জন্ম ও তার জীবনযাত্রার পরিকল্পনার বিস্তারিত জ্ঞানের সঙ্গে পরিচয় ঘটায়।অনুরূপভাবে বাস্তুশাস্ত্র মানুষের বাসস্থান সম্পর্কিত পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করে জীবনকে সমৃদ্ধিশালী করে।

জ্যোতিষশাস্ত্রের রয়েছে তিনটি মূল ধরা।গণিত, ফলিত এবং সংহিতা।গণিত অর্থাৎ অঙ্ক, ফলিত অর্থাৎ যা ফলে আছে বা ঘটছে এবং তৃতীয় ভাগটি হল সংহিতা অর্থাৎ সংকলন।বাস্তুশাস্ত্র এই সংহিতারই একটি অংশ।এ দিকে পুরাণ শাস্ত্রমতে বাস্তু আদতে জ্যোতিষেরই অঙ্গ।বলা হয়ে থাকে বাস্তু জ্যোতিষের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।জ্যোতিষের কর্ম কাল বা সময়কে কেন্দ্র করে।যে কারণে জ্যোতিষশাস্ত্রের পুরুষসূক্তে যে মানুষের কল্পনা করা হয়েছে তার অভিধান হল কালপুরুষ।জ্যোতিষমতে ১২টি রাশি হল কালপুরুষের ১২টি অঙ্গ।জ্যোতিষ যেমন সময় বা কাল নিয়ে কাজ করে তেমনই বাস্তুশাস্ত্র কাজ করে স্থান, আকার স্থাপত্য নিয়ে।মাননজীবনে দুটির প্রভাবই খুব গুরুত্বপূর্ণ।এ সম্বন্ধে “বরাহমিহির” তাঁর রচিত গ্রন’ “যোগযাত্রা”-য় দুটি খুব সুন্দর ও সহজ উদাহরণ দিয়েছেন কাল স্থান নিয়ে।যেমন- কাক রাতের বেলায় পেঁচার দ্বারা আক্রান্ত ও নিহত হয়।কিন্তু এর ঠিক উলটো দৃশ্য দেখা যায় দিনেরবেলায়।দিনের বেলায় পেঁচা স্বয়ংই কাকের দ্বারা আক্রান্ত ও নিহত হয়ে থাকে।সময় যে কত বলবান তা আমরা এই উদারহরণটির সাহায্যে বুঝতে পারি।

অনুরূপ স্থান সম্বন্ধেও একটি সহজ উদাহরণ তিনি তাঁর বইতে দিয়েছেন।যেমন- শুকনো জায়গায় বা ডাঙায় কুমির সিংহের দ্বারা নিহত হয়।কিন’ এর ঠিক বিপরীত কান্ড হয় কুমির যখন সিংহকে পানিতে পায়।তখন কুমির সিংহকে আক্রমণ করে এবং হত্যা করে।স্থান বা জায়গায় গুরুত্ব যে কতটা মানবজীবনকে প্রভাবিত করে তা ওপরের উদাহরণ থেকে আন্দাজ করা যায়।

পাঞ্চভৌতিক তত্ত্বেই বাস্তুশাস্ত্রের ভিত্তি নির্ভর করে আছে।এই পঞ্চভুতই জ্যোতিষের ভিন্ন অঙ্গ।আকাশে অবস্থিত বিভিন্ন তারামণ্ডল বারোটি রাশিতে বিভক্ত।আর এই রাশিগুলিই পঞ্চভূতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে।মেষ, সিংহ, ধনু রাশির তত্ত্ব হল অগ্নি।বৃষ, কন্যা ও মকর রাশির তত্ত্ব পৃথিবী।মিথুন, তুলা ও কুম্ভ হল বায়ুতত্ত্ব।কর্কট, বৃশ্চিক ও মীন পানি তত্ত্বের রাশি।এই সকল রাশিই আকাশের বিভিন্ন তারামণ্ডলের সঙ্গে যুক্ত জ্যোতিষ ও বাস’শাস্ত্র উভয়ের মধ্যে দিকের বিশেষ গুরুত্ব আছে।

জ্যোতিষ শাস্ত্রের মহান গ্রন্থ “জাতক পারিজাত”-এ আটটি দিকের উল্লেখ আছে।অমর কোষে বিভিন্ন দিক্‌ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে,

গ্রহ দিক্‌ গ্রহ দিক্‌
রবি পূর্ব শনি পশ্চিম
শুক্র আগ্নেয় চন্দ্র বায়ব্য
মঙ্গল দক্ষিণ বুধ উত্তর
রাহু নৈর্ঋত বৃহস্পতি ঈশান
ধর্মশাস্ত্রে দশটি দিকের এবং দশ দিক্‌পালের উল্লেখ আছে।বাস্তুশাস্ত্রেও অনুরূপ উল্লেখ আছে।জ্যোতিষশাস্ত্রে যে আটটি দিকে নয়টি গ্রহের কথা বলা হয়েছে, বাস’শাস্ত্র তাকে মেনে নিয়েছে।নীচের ছবির মাধ্যমে সেই দশ দিক্‌, দশ দিক্‌পাল এবং জ্যোতিষের নটি গ্রহের পরস্পরের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কযুক্ত তা দেখানো হয়েছে।

চিত্রঃ

কোষ্ঠী বা জন্মছকে বিভিন্ন দিক্‌ সম্বন্ধে গণনার সময় নীচের চিত্রের সাহায্যে ধারণা করা হয়।

চিত্রঃ

কোষ্ঠী তৈরি করতে সর্বাধিক গুরুত্বপুর্ণ বিষয হয় ‘স্পষ্ট লগ্ন’।জন্মের সময় জন্মস্থানের আকাশ পরিমণ্ডলের অবস্থানই হল কোষ্ঠী বা জন্মকুণ্ডলী।স্পষ্ট লগ্নের ভিত্তি পূর্ব দিককেই গণ্য করা হয়।জন্মের সময়ই ওই স্থানে যে রাশি পূর্ব দিকের ক্ষিতিজে অবস্থিত, ওই রাশির অংশ কলা-বিকলা গণনা করে যে রাশিমান নির্ধারণ করা হয় সেটিই ‘স্পষ্ট লগ্ন’।একবার পূর্ব দিক্‌ জেনে নেওয়ার পর সকল দিককে কোষ্ঠীতে স্থাপন করা হয় এবং কোষ্ঠী তৈরি করা হয়।জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে বিভিন্ন রাশি ও বিভিন্ন দিকের অবস্থানকারী।

দিক্‌ রাশি
পূর্ব দিকে অবস্থানকারী মেষ, সিংহ ও ধনু
পশ্চিম দিকে অবস্থানকারী মিথুন, তুলা ও কুম্ভ
উত্তর দিকে অবস্থানকারী কর্কট, বৃশ্চিক ও মীন
দক্ষিণ দিকে অবস্থানকারী বৃষ, কন্যা ও মকর

বিভিন্ন জ্যোতিষ গ্রন্থ অনুসারে এই সব রাশি যদি উপরোক্ত দিকে থাকে তা হলে এরা ‘দিগবল’ লাভ করে।অনুরূপভাবে বিভিন্ন গ্রহও পৃথক প্রথক দিকের গ্রহও নিযুক্ত হয়েছেন।নবগ্রহের শান্তি স্বস্তয়নাদি পদ্ধতিতে বিভিন্ন দিকের অধিপতি গ্রহ হল :

দিক অধিপতি দিক অধিপতি
পূর্ব সূর্য পশ্চিম শনি
দক্ষিণ-পূর্ব শুক্র উত্তর-পশ্চিম চন্দ্র
দক্ষিণ মঙ্গল উত্তর বুধ
দক্ষিণ-পশ্চিম রাহু ও কেতু উত্তর-পূর্ব বৃহস্পতি

চিত্রঃ

এইভাবেই জ্যোতিষশাস্ত্রে বিভিন্ন গ্রহ বিভিন্ন দিকে অবস্থিত হওয়ার দরুন গ্রহকে ‘দিগবলী’ বলা হয়।জ্যোতিষশাস্ত্রে কোষ্ঠীতে কেন্দ্রের অত্যন্ত গুরুত্ব থাকে।চারটি কেন্দ্রস্থান আছে।প্রথম, চতুর্থ, সপ্তম ও দশম ভাব।বাস্তুশাস্ত্রেও কেন্দ্রস্থান অর্থাৎ নীচের চিত্রে স্পষ্ট করে দেখানো হল :

চিত্রঃ

চতুর্থের কারক গ্রহ চন্দ্র ও বুধ।তৃতীয় ভাব বোঝায় জাতকের পরাক্রম, উদ্যম, পারিবারিক ও ভ্রাতৃসুখ, প্রবাসে সুখ, সজ্জা ও পবিত্রস্থান।এর কারক গ্রহ হচ্ছে মঙ্গল।মঙ্গল ভূমিকারক গ্রহ।আর চতুর্থ স্থান হচ্ছে ভূমি, ভবন, বাহন এবং সুখের সম্পর্কিত।এই সুখের জন্য চতুর্থেশ কেন্দ্রে বা ত্রিকোণে হওয়া অনিবার্য।এ ছাড়া চতুর্থভাবে শুভদৃষ্টি ও শুভ গ্রহের যূথী হওয়া বিশেষভাবে বাঞ্ছনীয়।দশাবিচার মতে জ্যোতিষশাস্ত্রে জাতকের জন্মপত্রের বা ছকের চতুর্থ স্থান থেকে জাতকের সুখ, সম্পত্তি, বাড়ি ও বাহন সম্বন্ধে ধারণা করা যায়।চতুর্থ স্থানে গ্রহের অবস্থান অনুযায়ী জাতক ওই জিনিসগুলি কতটা অনায়াসে অর্জন করবে সে ব্যাপারে বলা যায়।

অভিজ্ঞ জ্যোতিষীকে বাস্তু সম্পর্কে কোনও প্রশ্নাদি করা হলে তিনি জাতকের জন্ম ছকের চতুর্থের ভাব, চতুর্থপতি লগ্ন থেকে কোথায় অবস্থান করছেন তা দেখে এবং ষোড়শবর্গের চতুর্থাংশের স্থান বিচার করে বলতে পারেন যে জাতকের স্বগৃহ লাভ কবে, কীভাবে এবং কীকরে সম্ভব।

ভূমি এবং বাড়ি প্রাপ্তিযোগ :

  • লগ্নপতি এবং সপ্তমপতি যদি চতুর্থভাবে থাকে তা হলে অনায়াসে গৃহলাভ হয়।
  • চতুর্থাধিপতি যদি সগৃহী এবং তুঙ্গ বা উচ্চ হয় তবে উত্তম বাড়ি প্রাপ্তি হয়।
  • চতুর্থপতি দশমে থাকলে ও শনির দ্বারা দৃষ্ট হলে পুরনো বাড়ি প্রাপ্তি হয়।
  • যদি ধনপতি, লগ্নপতি ও আয়পতি চতুর্থভাবে একসঙ্গে যূথী অর্থাৎ যোগ হয় তবে জাতক একাধিক বাড়ির মালিক হয়।
  • চতুর্থপতি যদি অষ্টমভাবে থাকে তা হলে শ্রেষ্ঠ বাড়ি প্রাপ্তি হয়।
  • যদি চতুর্থপতি এবং দশপতি পরস্পর স্থান বিনিময় করে তবে অতুল ভূমির ও বাড়ির মালিক হয়।
  • চতুর্থপতি পঞ্চমভাবে হলেও জাতক জমির মালিক হয়।
  • চতুর্থপতি সপ্তমভাবে থাকলে জাতক স্ত্রীর মাধ্যমে জমি বা বাড়ি প্রাপ্ত হয়।

চতুর্থপতি যদি ষষ্ঠভাবে থাকে হা হলে বাদ-বিবাদ বা মামলা-মকর্দমার পর অথবা মাতুল পক্ষ থেকে জাতকের বাড়ির অধিকার প্রাপ্তি হয়।
বৃষ লগ্নে যদি চতুর্থভাবে সূর্য থাকে তবে অস্থায়িভাবে বাড়ি পাওয়া যায়।
কর্কট লগ্নে যদি চতুর্থের বৃহস্পতি থাকে তবে জাতকের বাড়ি, জমি বাগান ইত্যাদি লাভ হয়।
চতুর্থাধিপতি কেন্দ্র বা ত্রিকোণে শুভগ্রহ যুক্ত থাকলে উত্তম গ্রহের প্রাপ্তি হয়।
লগ্নাধিপতি আর সপ্তমপতি যদি লগ্নে বা চতুর্থভাবে থাকে এবং শুভ গ্রহের দৃষ্টিযুক্ত থাকে তবে জাতকের নিশ্চিতভাবে গৃহপ্রাপ্তি যোগ হয়।
নবমাধিপতি যদি কেন্দ্রে থাকে এবং চতুর্থপতি যদি স্বক্ষেত্রে অথবা মূলত্রিকোণে থাকে তা হলেও জাতকের সহজে বাড়ি বা জমি লাভ হয়।
চতুর্থপতি যদি মেষ, কর্কট, তুলা ও মকর অর্থাৎ চর রাশিতে থাকে এবং শুভগ্রহ যুক্ত ও দৃষ্ট হয় তবে জাতকের একাধিক ভবনে বাস হয় অর্থাৎ ভবনপরিবর্তন হয়। এর বিপরীত চতুর্থপতি যদি স্থির রাশিতে থাকে যথা বৃষ, সিংহ, বৃশ্চিক ও কুম্ভ তা হলে জাতকের দীর্ঘস্থায়ী ভবনে বাস হয়।
যদি জন্মকুণ্ডলীতে তৃতীয় স্থানের অধিপতি চতুর্থভাবের অধিপতির সঙ্গে থাকে তা হলে ভ্রাতা দ্বারা ভূমিপ্রাপ্তি হয়। কিস্তু এই যোগ যদি বিপরীতভাবে ক্ষেত্র বিনিময় করে তবে জাতক নিজের ভাইকে বাড়ির অধিকার দেয়।

জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে বাস্তু দোষ জানার উপায়

বাস্তুশাস্ত্র সম্বন্ধে জানতে গেলে গৃহকর্তা, গৃহকর্ত্রী এবং যিনি গৃহের প্রধান রোজগার কর্তা এই তিনজনের জন্মছক থেকে বাস’দোষ সম্বন্ধে ধারণা করা যায়।সাধারণভাবে লগ্নের চতুর্থ স্থানের রাহু, মঙ্গল এবং রাহু শনি এই দু’গ্রহের যূথী বাস্তুদোষের দিকে ইঙ্গিত করে।কুণ্ডলীতে ‘কালসর্প’ দোষও বাস’দোষকে ইঙ্গিত করে।

নবগ্রহ ও বাড়ির কোষ্ঠী:

নটি গ্রহের সঙ্গে বাড়ির স্থায়িত্বের সম্পর্কও বাস্তু মতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।গ্রহ কোন লগ্নে এবং কোন স্থানে অবস্থান করলে বাড়ি কত বছর স্থায়ী হয়, বাস্তু-জ্যোতিষশাস্ত্রীরা এ নিয়েও গণনা করেছেন।বাড়ি তৈরির সময় লগ্ন দশম, একাদশ স্থানে যথাক্রমে শুক্র, বুধ ও রবি এবং বৃহস্পতি কেন্দ্রস্থলে থাকলে বাড়ি টিকে থাকবে শত বছর।চতুর্থ ঘরে বৃহস্পতি, দশমে চন্দ্র ও একাদশে শনি বা মঙ্গল হলে বাড়ি আশি বছর থাকবে।

বাড়ি তৈরির সময় বৃহস্পতি, রবি, বুধ, শুক্র ও শনি এগুলি যথাক্রমে লগ্নের ষষ্ঠ, সপ্তম, চতুর্থ ও তৃতীয় স্থানে থাকলে সে বাড়ি টিকবে একশো বছর।লগ্নে শুক্র, তৃতীয়তে রবি, ষষ্ঠ ঘরে মঙ্গল ও পঞ্চমে বৃহস্পতি থাকলে সে বাড়ি দুশো বছর টিকবে।গ্রামই হোক অথবা শহর, লগ্নে চন্দ্র, সপ্তম ঘরে বৃহস্পতি, দশম ঘরে বুধ অথবা শুক্র থাকলে, বুধ যদি একই লগ্নে থাকে, তা হলে বাড়ি করলে ছয় শত বছর স্থায়ী হয়।যদি লগ্নে শুক্র, বৃহস্পতি নির্দিষ্ট রাশিতে অর্থাৎ সপ্তম ঘরে থাকে তা হলে বাড়ির মালিক দীর্ঘজীবী হবেন এবং বাড়ি টিকে থাকবে আটশো বছর।লগ্নে রবি, সপ্তম ঘরে বৃহস্পতি, দশম ঘরে চন্দ্র- এরকম অবস্থায় বাড়ি করলে তা টিকে থাকবে সহস্র বছর অর্থাৎ এক হাজার বছর।উচ্চ কর্কটরাশির বৃহস্পতি চতুর্থ ভাগে অথবা শনির একাদশ স্থানে তুলা থাকা অবস্থায় বাড়ি করলে সেই বাড়িতে আজীবন ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ থাকে অর্থাৎ ধনসম্পদে ভরে থাকে।

বাস্তুশাস্ত্রীকেও প্রয়োজনে জ্যোতিষের সাহায্য নিতে হয়।বাস্তুশাস্ত্রী কোনও জমিতে বাড়ি তৈরির পূর্বে সেই ভূমি জীবিত না মৃত তা প্রথমে নির্ণয় করেন।তারপর তিনি ভূমির শয়ন ও জাগরণ নির্ধারণ করেন।এই সমস্ত কিছুই জ্যোতিষবিদ্যার সাহায্য ব্যতিরেকে অসম্ভব।যিনি বাড়ি তৈরি করবেন তাঁর কোষ্ঠী অনুসারে বাড়ির মূখ্য দ্বারের দিক, ভবন ক্রয় বা জমিতে ভবন নির্মাণ শুরুর দিন, গৃহপ্রবেশের শুভদিন, তিথি-মুহূর্ত ইত্যাদি নির্দিষ্ট করা দরকার।বাস্তুশাস্ত্র মতে গ্রাম চয়ন, দিক চয়ন, কূপ খনন, হলকষর্ণ, বীজ বপন, বীজ রোপণ, গৃহনির্মাণ, দ্বার চয়ন, গৃহপ্রবেশের মুহূর্ত প্রভৃতি জ্যোতিষের ভিত্তিতেই করা হয়।সুতরাং জ্যোতিষশাস্ত্র ও বাস’শাস্ত্র অঙ্গাঅঙ্গিভাবে একে অপরের সম্পর্কযুক্ত ও পরিপূরক।

বাস্তুমুহূর্ত ও গৃহপ্রবেশ

চিত্রঃ

গৃহপ্রবেশ (১) – অপূর্ব : নিজ তৈরি বাড়ি বা ফ্ল্যাটে প্রথম প্রদার্পণ।
গৃহপ্রবেশ (২) – সপূর্ব : বহুদিন পর তীর্থযাত্রা অথবা প্রবাসে থাকার পর পুনঃপ্রবেশ।
গৃহপ্রবেশ (৩) – দ্বন্দ্বহ : কোনও কারণে বাড়ি নষ্ট হওয়ার পর পুনর্নির্মাণ করে পুনর্গৃহপ্রবেশ।
বাস্তুমুহূর্ত (৪) – বাড়ি নির্মাণ শুরু করা।
বাস্তুমুহূর্ত (৫) – কুয়ো খনন, টিউবওয়েল খনন।
বাস্তুমুহূর্ত (৬) – শিলান্যাস।
পাঠকের সুবিধার্থে মাস, তিথি, নক্ষত্র, যোগ, মুখ্য প্রবেশদ্বার ও বার অনুসারে বাস্তুমুহূর্ত ও সর্বপ্রকার গৃহপ্রবেশের তালিকা পরের পাতায় সন্নিবেশিত হলো।
তালিকাগুলি উপ
রে বর্ণিত ১, ২, ৩, ৪, ৫, এবং ৬ ক্রম অনুসারে সজ্জিত।

 

(Commenting: OFF)

ভারতীয় বা বিশেষ করে ভারতের বাস্তুবিদরা বিভিন্ন বইতে লিখেছেন যে, অপরের গৃহে কালাতিপাত ও বসবাস সম্মানের পরিপন্থী।সে কারণে নিজ গৃহ নির্মাণ অবশ্যই জরুরী।ইসলামিক দিক দিয়ে চিন্তা করলে ঐ উক্তিটি আমরা কেউই গ্রহণ করব না।ভারতেও অপরের গৃহে মানুষ অর্থ প্রদান করে বসবাস করে থাকেন তদ্রুপ পৃথিবীর প্রতিটি দেশে।এমন কোন দেশ নেই যেখানে ভাড়াটিয়া নেই।যেহেতু বসবাসকারী নির্দিষ্ট ভাড়া প্রদান করে বসবাস করবেন সেহেতু সম্মানের পরিপন্থী কিভাবে হলো।তৎকালীন ভারতীয় মুনি-ঋষিগণ মানুষকে দাসত্বের আবদ্ধে রাখার জন্য এমন উক্তি করেছেন, যেটা আজ গোটা ভারতে বিদ্যমান।ব্রাহ্মণ, চক্রবর্তী, ক্ষত্রিয় সহ বহুপ্রকার গোত্রে তারা বিভক্ত আমরা মুসলমানরা বিভক্ত নই।আমাদের একটি মাত্র গোত্র সেটা হচ্ছে “মুহাম্মদী” গোত্র।আমরা এক আল্লাহ্‌র শুকরিয়া আদায় করি, আমাদের তীর্থস্থানও একটি, পবিত্র মক্কা, মদীনা।

পাঠকবৃন্দ এ ধরনের বাস্তুশাস্ত্রের বই পড়ে নিজে গোনাহ্‌গার হওয়ার চেষ্টা করবেন না।আমি শুরুতেই বলেছি পূর্বের সংখ্যাগুলিতে।আপনারা পড়েছেনও বটে যে বাস্তু, জ্যোতিষ, তন্ত্রশাস্ত্র, মুসলমান সমপ্রদায়ের বিজ্ঞানীরাই সর্ব প্রথম আবিস্কার করেন।তন্‌ + মন্ত্র = তন্ত্র অর্থাৎ সক্রিয় দেহে কোন আয়াত বা সূরা পড়লেই তন্ত্র হয়ে গেল।মন্ত্র বলতে কোন খারাপ আয়াত নয়, শব্দটি সংস্কৃতি ভাষা থেকে এসেছে পার্থক্য এখানেই।কথা লিখার উদ্দ্যেশ্য হলো ২০০০ সালের পর থেকে কিছু মানুষ আমার কাছে এসে দুঃখ প্রকাশ করলেন যে, অন্যের বাড়ীতে ভাড়া থাকি, আমার সম্মান আর রইলো না, সঙ্গে বইও দেখালেন যা ভারত থেকে প্রকাশিত (এমনিতে আমাদের মধ্যে বিদেশী কোন কিছু গ্রহণ করার ভাব প্রবণতা বেশী)।বিষয়টি তাদের বুঝিয়ে বলার পর তারা বুঝতে পারলেন।বাংলাদেশে অনেক সম্মানিত হিন্দু পরিবার মানুষের বাড়ীতে অর্থের বিনিময়ে ভাড়া থাকেন।তাই বলে তাঁদের কি কোন সম্মান নেই, ঠিক তদ্রুপ সকল ধর্মের মানুষের ক্ষেত্রে।ভারতীয় বাস্তুবিদদের মতামত গ্রহণ করলে প্রায় ৮৮% মানুষকে উম্মুক্ত আকাশের নীচে বসবাস করতে হবে।সুতরাং আপনাকে ভাবতে হবে আপনি সম্মানের সহিত ভাড়া থাকেন, যতদিন পর্যন্ত আপনি ভাড়া থাকবেন ততদিন পর্যন্ত ঐ নির্দিষ্ট ভাড়াকৃত অংশের আপনি মালিক পার্থক্য এইটুকুই যে আপনার স্থায়ী কোন দলিল পত্র নেই, কিন্তু অস্থায়ী তো আছে।

আপনারা যাতে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ না করেন এই জন্যই এটুকু আমার লিখা।

আদিকালের কোন উদাহরণ আমি দিব না।এর প্রয়োজনও নেই।জনসংখ্যার চাপে মানুষের আবাসস্থানের সমস্যা শুধু বাংলাদেশেই নয় পৃথিবীর সর্বত্র দেখা দিয়েছে।সামাজিক প্রাণী হিসাবে মানুষ তৈরী করে ফেলছে বহুতল আবাসিক ভবন যেটাকে আমরা এ্যাপার্টমেন্ট বলে থাকি।আমার জন্মস্থান ঢাকার মতিঝিলে, পৈত্রিক বাড়ী কমলাপুর জসিমউদ্দিন রোডে, আমরা সে সময় যে মাঠে ক্রিকেট, ফুটবল ইত্যাদি খেলা খেলতাম সেখানে এখন রেলওয়ে ভবন, সি.এস.ডি গোডাউন খোদ আমাদের বাড়ী ও মহল্লার বাড়ী বহুতল বিশিষ্ট যা ছোটবেলায় দেখিনি।জমিতেও টান পড়েছে, ঢাকা সহ বিভিন্ন মহানগরীর মানুষ বসবাসের জন্য ধানের ক্ষেত এমনিক ডোবা জমিও বেছে নিয়েছে।পত্রিকার বিজ্ঞাপনে অন্তত তাই প্রমাণ করে।এ্যাপার্টমেন্টের দিকেও মানুষের ঝোঁক প্রবল, মানুষ তার সাধ্যের মধ্যে বসবাসযোগ্য এ্যাপার্টমেন্টও পাচ্ছে।দূষণের বিষয়ও ভাবতে হবে, যত উপরে উঠা যাবে ততই দূষণ কম, এটাও বহুতল বাড়ীর আরেক আকর্ষণ।ফ্ল্যাটবাড়ী বা এ্যাপার্টমেন্টের নকসা যিনি তৈরী করবেন, সেই আর্কিটেক্টারকে তাঁর বিশেষ কর্মযোগ্য তার পরিচয় দিতে হবে।আর্কিটেক্ট প্রকৌশলীরও বিশেষ জ্ঞান ও বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে বাস্তুশাস্ত্রের উপর।কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় যে আমাদের দেশের নক্সা প্রণয়কারীর এই বিষয়ে অভিজ্ঞতার কোন প্রমাণ আমি এখনও পেলাম না যদি পেতাম তবে আমাকে নির্মিত বাস্তু সংশোধন করতে হতো না।বাংলাদেশ সরকারের এই বিষয়ে তেমন কোন নীতিমালা এখনও নির্ধারণ হয়নি বিশেষ করে রাজউক, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসিটির কেউই এই বিষয়ে কোন প্রকার পদক্ষেপ আজও গ্রহণ করেনি।

বহুতল ভবনই হোক বা ছোট ভবনই হোক নক্সা প্রণয়নকারীর অন্তরের শৃংক্ষলার বাহিরের শৃঙ্ক্ষলার অভিব্যক্ত হতে হবে।তার ফলে তাঁদের সংস্পর্শে যাঁরা আসেন বা যে বস্তু আসে তারা সেই বস্তু উক্ত শৃঙ্ক্ষলা দ্বারা প্রবাহিত হয়।বস’ও সেই অনুসারে রূপ নেয়।একটি ভবন যা পারিপার্শ্বিক অবস্থাও অন্তরের শৃঙ্ক্ষলার সংবেদনশীল বোধের ভিতর দিয়ে গভীর চিন্তার মাধ্যমে নির্মাণ করা উচিত বাস্তুশাস্ত্রানুযায়ী।বসবাসকারী গৃহস্থ্য সেখানে আজীবন বসবাস করে উপকৃত হতে পারবেন।প্রাকৃতিক নিয়মের বিশুদ্ধতার সঙ্গে এক সুরে বেঁধে নেয়া অত্যন্ত প্রয়োজন, কারণ এর দ্বারা সৃষ্টির পথ তৈরী হয় এবং মানুষের চরম আনন্দ ও সুখময় জীবন প্রদান করে।এটা হলো শাস্ত্রসম্মতভাবে সর্বপ্রকার শিল্পের ভিত্তি।পরিশ্রম সাপেক্ষে বহুতল ভবন বা রাস্তাই হোক বাস্তু পরিকল্পনাকারীর পক্ষে গভীর মনোযোগ সম্মাত হওয়া এবং প্রাকৃতিক নিয়মের আন্তরিক উপনদী দ্বারা নক্সা প্রস্তুত করা বিশেষ প্রয়োজন যাঁরা বহুতল ভবন নির্মাণ করবেন তারা আর্কিটেক্ট প্রকৌশলীর যে বিষয় গুলি দেখবেন তা নিম্নরূপঃ-

যাঁরা বহুতল ভবন নির্মাণ করবেন তারা আর্কিটেক্ট প্রকৌশলীর যে বিষয় গুলি দেখবেন তা নিম্নরূপঃ-
১।
অন্তরের রূপঃ দৃঢ়তা, শৃঙ্ক্ষলা, সৃজনশক্তি সবই ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার অংশ।
২।
বাহিরে অভিব্যক্তিঃ বস্তু তাত্ত্বিক ধারণা বা স্পর্শযোগ্য হতে পারে, যা রূপকারের সৃষ্টির উদ্যোগের অভিব্যক্তি।সৃষ্টবস্তু ও ব্যবহারকারীর মধ্যে সামঞ্জস্য বাস্তুশাস্ত্র মতে নির্ধারণ করা চাই।বস্তুটির মনোরম রূপের ব্যবহারকারীর মধ্যে প্রীতিকর অনুভূতির উদ্রেক করা চাই।মূল অঙ্গীকার হলো আমাদের প্রত্যেককে পছন্দমত (বাস্তু শাস্ত্রানুযায়ী) আত্মপ্রকাশের ভঙ্গিময় অন্তরের গভীর প্রশান্তি ও শৃঙ্খলা আনয়ন করতে হবে।কারণ যাঁরা নির্মিত স্থান দর্শন করেন, তাঁরা অনুপ্রেরণা পেয়ে থাকেন এবং সুন্দর জিনিস উপহার দেয়ার অর্থ হলো আত্মোন্নতি ও আত্মজ্ঞান লাভ।
৩।
কার্যপ্রণালীঃ সৌন্দর্য্য বিজ্ঞান, এবং বাস্তুস্থানের আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি তথা বাস্তুস্থানের প্রতি প্রতিক্রিয়ার উপলদ্ধি।
৪।
নক্সা প্রস্তুতকারকঃ বসবাসকারী, মুক্ত স্থান এবং গৃহ, তথা গঠণ ও আকারের কেন্দ্রস্থান হৃদয়ঙ্গম করা।
৫।
পারিপার্শ্বিক নৈসর্গিক অবস্থা এবং প্রতিরূপ।
৬।
নির্দিষ্ট দিকে আবর্তনের তাৎপর্য।
৭।
নির্মিত ভবনের আকার, বর্ণ ও আয়তনের গুরুত্ব।
৮।
মানুষের জীবনের সৃষ্টিতত্ত্বের (Cosmolory) গুরুত্ব।

বাস্তুশাস্ত্র আইন মেনে দেয়াল আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা, প্রধান প্রবেশ দ্বার বা মেইন গেট, গৃহ প্রবেশের প্রধান দরজা বাথরুম, রান্নাঘর ও অন্যান্য ঘর তৈরী করতে হবে।পৃথক বা স্বাধীন বাড়ীর নক্সার তুলনায়, বহুতল ভবনের নক্সা রাজউক কর্তৃপক্ষের নিয়মকানুন মেনে এবং সর্ব বিষয়ে চিন্তা করে বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ীর নক্সা প্রস্তুত করা কষ্ট সাধ্য ও সময় সাপেক্ষ।যেহেতু নক্সা প্রস্তুতকারী প্রকৌশলী নকসার বৈধতার অনুমতি পাবেন, যুক্তির মাধ্যমে সেহেতু এটা কোন বিশেষ কষ্ট সাধ্য ব্যাপার নয়।একজন স্থাপত্য প্রকৌশলীর ও বহুতল বা একতল ভবন নির্মাতার সঠিক যোগ্যতা পরিমাপ করা যাবে তখনই যখন তিনি প্রতিটি ফ্ল্যাট বাস্তুশাস্ত্রানুযায়ী নির্মাণ করবেন।ভবনের রুম, বাথরুম, রান্নাঘর, ইবাদতের রুম, ফ্রিজ, টিভি, বৈদ্যুতিক যাবতীয় বস্তু আলমারি স্থাপনের স্থান সব কিছু এমন ভাবে বাস্তুশাস্ত্র সম্মতভাবে তৈরী করবেন যাতে করে বসবাসকারী সর্বদিক থেকে উপকৃত হতে পারেন।এটাই স্থাপত্য প্রকৌশলীর গৌরবময় কৃতিত্ব, আর্থিক লাভের সংগে সংগে এই কৃতিত্বও উল্লেখযোগ্য প্রণিধান।
বহুতল ফ্ল্যাটবাড়ী কিভাবে বাস্তুশাস্ত্রানুযায়ী নির্মাণ করতে হবে এবার সে বিষয়ে বেশ কিছু বিধান বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে লিপিবদ্ধ করলাম।লিখিত বিধান অন্য দেশে প্রয়োগ করবেন নাPlease, এতে ক্ষতির সম্ভাবনা বিদ্যমান।
জমিঃ বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য জমির প্রয়োজন তো হবে তবে জমিটি যেন জলাশয় ভরাটকৃত জমি না হয়, (কমপক্ষে ১৮ বৎসর) আঠারো বৎসর পূর্বে জলাশয় ভরাটকৃত জমি হলে তেমন বিশেষ সমস্যা নেই।
জমি আয়তাকার সর্বোত্তম, নয়তো বর্গাকার ।
জমিটি দক্ষিণ ও পশ্চিম দিক উঁচু থাকতে হবে, পূর্ব ও উত্তর দিক হবে নীচু।এ রকম পরিস্থিতির জমি আমাদের নগরে পাওয়া যায় না তাই ভবন নির্মাণে জমিকে এইভাবে উপযোগী করে নিতে হবে। এতে করে বৃষ্টির পানি ঢালুর দিকেই প্রবাহিত হবে যা আমাদের জন্য শুভ।
সেই জমিই সর্বোত্তম যার চার দিকে রাস্তা আছে, ভবন নির্মাণের জমির উত্তর ও পূর্ব দিকে রাস্তা থাকলে উত্তম জমি হিসাবে বিবেচিত এবং এধরণের জমিতে ভবনের প্রধান গেট – বাস্তুশাস্ত্র মতে উত্তর ও পূর্ব দিকে নির্মাণ করতে হবে।
একটা বিষয়ে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে যে, যে জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে সে জমির দিক ও কোণ যেন সঠিক হয় অর্থাৎ উত্তর যেন সঠিক উত্তরই হয়।তবে ০৭০ বাঁ, ডান দিক এদিক ওদিক হলে তা ধর্তব্যের আওতাভূক্ত নয়।ঢাকাতে, সিলেটে- ০৫০, চট্টগ্রামে- ০৩০ খুলনায়- ১০০ , রাজশাহীতে- ০৮০, বরিশালে- ০১ ডিগ্রীও নয়।দিক নির্ণয় যন্ত্র দ্বারা দিক নির্ণয় করে নিবেন।উল্লেখিত ডিগ্রীগত পরিমাপের বেশী পরিমাণ হলে উক্ত জমি, ভবন, ফ্ল্যাট ক্রয় করবেন না।যদিও করে থাকেন তবে সংশোধনে বহুব্যয় করতে হবে।পক্ষান্তরে উক্ত আবাসস্থলে, বাণিজ্যস্থলে বহুবিধ সমস্যা দেখা যায় যার মিমাংসা করতে বহুশ্রম ব্যয় করতে হয়।পূত্র-কন্যাদের বিবাহ বিলম্ব সহ বহুশুভ কর্মে ব্যাঘাত ঘটে।
যে কোন জমির বায়ু কোণ ৯০০ থাকলে ভাল, উত্তর-পূর্ব দিকে সামান্য প্রসারিত থাকলে উত্তম।দক্ষিণ ও পশ্চিমের তুলনায় উত্তর ও পূর্ব দিকে ভবন নির্মাণের সময় জমির অংশ বেশী জায়গা রাখতে হবে।
বাস’শাস্ত্রানুযায়ী উত্তর-পূর্ব অর্থাৎ ঈশান দিক ও কোণ হলো শীতল স্থান ফলশ্রুতিতে আন্ডার গ্রাউন্ড পানির রিজার্ভ ট্যাংক উক্ত দিকেই নির্মাণ করতে হবে।গভীর নলকূপ ও উক্ত দিক ও কোণে থাকবে।
ওভার হেড ট্যাংক তৈরী করতে হবে নৈঋত কোণের পশ্চিমে অথবা কোণ বারাবর।অন্যদিকে কিছুতেই করা যাবে না।
ভবণের নৈঋত কোণ বা দিকে সিঁড়ি ও লিফ্‌ট বসবে।স্থানাভাবে দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে সিঁড়ি ও লিফ্‌ট নির্মাণ করা যাবে। কিন্তুকোন ক্রমেই উত্তর, পূর্ব, ঈশাণ কোণে নয়।
আধুনিক সময়ে বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ীতে বৈদ্যুতিক জেনারেটর স্থাপন করা হয়। উক্ত জেনারেটর অগ্নি কোণে স্থাপন করা সর্বোত্তম।সম্ভব না হলে দক্ষিণ পূর্ব দিকের দক্ষিণ ঘেষে পূর্ব দিকে স্থাপন করতে হবে।
ভবনের সীমানা দেয়াল দক্ষিণ ও পশ্চিম দিক উঁচু হবে।প্লাষ্টারও মোটা হবে।উত্তর, পূর্ব দিকের সীমানা দেয়াল নীচু হবে।
গাড়ী রাখার গ্যারেজ থাকবে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব দিকে (যদি বেসমেন্ট করা)।যদি বেসমেন্ট না করা হয় তবে অগ্নি কোণে থাকবে।বেসমেন্ট করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে নৈঋত, পশ্চিম, দক্ষিণ দিকে বেসমেন্ট করা যাবে না।
বর্তমান সময়ে বহুতল আবাসিক বসবাসের ভবনে দোকান বা অফিস নির্মানের হিড়িক পড়েছে, যা বাস’শাস্ত্রের বিপরীতে।এতে করে হয় দোকানী লাভবান হয়ে যায়, নতুবা গৃহস্থ্য।এরূপ বহুতল ভবন বসবাসের জন্যনিম্নতম উপযোগী।
বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ী, ছোট বাড়ীর মেইন গেট ও গৃহ প্রবেশের মূখ্য দ্বার কোন দিকে কিভাবে রাখবেন তা চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হলো।
বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ী, ছোট বাড়ীর মেইন গেট ও গৃহ প্রবেশের মূখ্য দ্বার কোন দিকে কিভাবে রাখবেন তা চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হলো।
যাঁরা বহুতল ভবন নির্মাণ করবেন তারা আর্কিটেক্ট প্রকৌশলীর যে বিষয় গুলি দেখবেন তা নিম্নরূপঃ-

যাঁরা বহুতল ভবন নির্মাণ করবেন তারা আর্কিটেক্ট প্রকৌশলীর যে বিষয় গুলি দেখবেন তা নিম্নরূপঃ-
অন্তরের রূপঃ দৃঢ়তা, শৃঙ্ক্ষলা, সৃজনশক্তি সবই ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার অংশ।
বাহিরে অভিব্যক্তিঃ বস্তু তাত্ত্বিক ধারণা বা স্পর্শযোগ্য হতে পারে, যা রূপকারের সৃষ্টির উদ্যোগের অভিব্যক্তি। সৃষ্টবস্তু ও ব্যবহারকারীর মধ্যে সামঞ্জস্য বাস্তুশাস্ত্র মতে নির্ধারণ করা চাই। বস্তুটির মনোরম রূপের ব্যবহারকারীর মধ্যে প্রীতিকর অনুভূতির উদ্রেক করা চাই। মূল অঙ্গীকার হলো আমাদের প্রত্যেককে পছন্দমত (বাস্তু শাস্ত্রানুযায়ী) আত্মপ্রকাশের ভঙ্গিময় অন্তরের গভীর প্রশান্তি ও শৃঙ্খলা আনয়ন করতে হবে। কারণ যাঁরা নির্মিত স্থান দর্শন করেন, তাঁরা অনুপ্রেরণা পেয়ে থাকেন এবং সুন্দর জিনিস উপহার দেয়ার অর্থ হলো আত্মোন্নতি ও আত্মজ্ঞান লাভ।
কার্যপ্রণালীঃ সৌন্দর্য্য বিজ্ঞান, এবং বাস্তুস্থানের আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি তথা বাস্তুস্থানের প্রতি প্রতিক্রিয়ার উপলদ্ধি।
নক্সা প্রস্তুতকারকঃ বসবাসকারী, মুক্ত স্থান এবং গৃহ, তথা গঠণ ও আকারের কেন্দ্রস্থান হৃদয়ঙ্গম করা।
পারিপার্শ্বিক নৈসর্গিক অবস্থা এবং প্রতিরূপ।
নির্দিষ্ট দিকে আবর্তনের তাৎপর্য।
নির্মিত ভবনের আকার, বর্ণ ও আয়তনের গুরুত্ব।
মানুষের জীবনের সৃষ্টিতত্ত্বের (Cosmolory) গুরুত্ব।
বাস্তুশাস্ত্র আইন মেনে দেয়াল আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা, প্রধান প্রবেশ দ্বার বা মেইন গেট, গৃহ প্রবেশের প্রধান দরজা বাথরুম, রান্নাঘর ও অন্যান্য ঘর তৈরী করতে হবে। পৃথক বা স্বাধীন বাড়ীর নক্সার তুলনায়, বহুতল ভবনের নক্সা রাজউক কর্তৃপক্ষের নিয়মকানুন মেনে এবং সর্ব বিষয়ে চিন্তা করে বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ীর নক্সা প্রস্তুত করা কষ্ট সাধ্য ও সময় সাপেক্ষ। যেহেতু নক্সা প্রস্তুতকারী প্রকৌশলী নকসার বৈধতার অনুমতি পাবেন, যুক্তির মাধ্যমে সেহেতু এটা কোন বিশেষ কষ্ট সাধ্য ব্যাপার নয়। একজন স্থাপত্য প্রকৌশলীর ও বহুতল বা একতল ভবন নির্মাতার সঠিক যোগ্যতা পরিমাপ করা যাবে তখনই যখন তিনি প্রতিটি ফ্ল্যাট বাস্তুশাস্ত্রানুযায়ী নির্মাণ করবেন। ভবনের রুম, বাথরুম, রান্নাঘর, ইবাদতের রুম, ফ্রিজ, টিভি, বৈদ্যুতিক যাবতীয় বস্তু আলমারি স্থাপনের স্থান সব কিছু এমন ভাবে বাস্তুশাস্ত্র সম্মতভাবে তৈরী করবেন যাতে করে বসবাসকারী সর্বদিক থেকে উপকৃত হতে পারেন। এটাই স্থাপত্য প্রকৌশলীর গৌরবময় কৃতিত্ব, আর্থিক লাভের সংগে সংগে এই কৃতিত্বও উল্লেখযোগ্য প্রণিধান।
বহুতল ফ্ল্যাটবাড়ী কিভাবে বাস্তুশাস্ত্রানুযায়ী নির্মাণ করতে হবে এবার সে বিষয়ে বেশ কিছু বিধান বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে লিপিবদ্ধ করলাম। লিখিত বিধান অন্য দেশে প্রয়োগ করবেন না Please, এতে ক্ষতির সম্ভাবনা বিদ্যমান।
জমিঃ বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য জমির প্রয়োজন তো হবে তবে জমিটি যেন জলাশয় ভরাটকৃত জমি না হয়, (কমপক্ষে ১৮ বৎসর) আঠারো বৎসর পূর্বে জলাশয় ভরাটকৃত জমি হলে তেমন বিশেষ সমস্যা নেই।
জমি আয়তাকার সর্বোত্তম, নয়তো বর্গাকার ।
জমিটি দক্ষিণ ও পশ্চিম দিক উঁচু থাকতে হবে, পূর্ব ও উত্তর দিক হবে নীচু। এ রকম পরিস্থিতির জমি আমাদের নগরে পাওয়া যায় না তাই ভবন নির্মাণে জমিকে এইভাবে উপযোগী করে নিতে হবে। এতে করে বৃষ্টির পানি ঢালুর দিকেই প্রবাহিত হবে যা আমাদের জন্য শুভ।
সেই জমিই সর্বোত্তম যার চার দিকে রাস্তা আছে, ভবন নির্মাণের জমির উত্তর ও পূর্ব দিকে রাস্তা থাকলে উত্তম জমি হিসাবে বিবেচিত এবং এধরণের জমিতে ভবনের প্রধান গেট – বাস্তুশাস্ত্র মতে উত্তর ও পূর্ব দিকে নির্মাণ করতে হবে।
একটা বিষয়ে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে যে, যে জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে সে জমির দিক ও কোণ যেন সঠিক হয় অর্থাৎ উত্তর যেন সঠিক উত্তরই হয়। তবে ০৭০ বাঁ, ডান দিক এদিক ওদিক হলে তা ধর্তব্যের আওতাভূক্ত নয়। ঢাকাতে, সিলেটে- ০৫০, চট্টগ্রামে- ০৩০ খুলনায়- ১০০ , রাজশাহীতে- ০৮০, বরিশালে- ০১ ডিগ্রীও নয়। দিক নির্ণয় যন্ত্র দ্বারা দিক নির্ণয় করে নিবেন। উল্লেখিত ডিগ্রীগত পরিমাপের বেশী পরিমাণ হলে উক্ত জমি, ভবন, ফ্ল্যাট ক্রয় করবেন না। যদিও করে থাকেন তবে সংশোধনে বহুব্যয় করতে হবে। পক্ষান্তরে উক্ত আবাসস্থলে, বাণিজ্যস্থলে বহুবিধ সমস্যা দেখা যায় যার মিমাংসা করতে বহুশ্রম ব্যয় করতে হয়। পূত্র-কন্যাদের বিবাহ বিলম্ব সহ বহুশুভ কর্মে ব্যাঘাত ঘটে।
যে কোন জমির বায়ু কোণ ৯০০ থাকলে ভাল, উত্তর-পূর্ব দিকে সামান্য প্রসারিত থাকলে উত্তম। দক্ষিণ ও পশ্চিমের তুলনায় উত্তর ও পূর্ব দিকে ভবন নির্মাণের সময় জমির অংশ বেশী জায়গা রাখতে হবে।
বাস’শাস্ত্রানুযায়ী উত্তর-পূর্ব অর্থাৎ ঈশান দিক ও কোণ হলো শীতল স্থান ফলশ্রুতিতে আন্ডার গ্রাউন্ড পানির রিজার্ভ ট্যাংক উক্ত দিকেই নির্মাণ করতে হবে। গভীর নলকূপ ও উক্ত দিক ও কোণে থাকবে।
ওভার হেড ট্যাংক তৈরী করতে হবে নৈঋত কোণের পশ্চিমে অথবা কোণ বারাবর। অন্যদিকে কিছুতেই করা যাবে না।
ভবণের নৈঋত কোণ বা দিকে সিঁড়ি ও লিফ্‌ট বসবে। স্থানাভাবে দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে সিঁড়ি ও লিফ্‌ট নির্মাণ করা যাবে। কিন্তু কোন ক্রমেই উত্তর, পূর্ব, ঈশাণ কোণে নয়।
আধুনিক সময়ে বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ীতে বৈদ্যুতিক জেনারেটর স্থাপন করা হয়। উক্ত জেনারেটর অগ্নি কোণে স্থাপন করা সর্বোত্তম। সম্ভব না হলে দক্ষিণ পূর্ব দিকের দক্ষিণ ঘেষে পূর্ব দিকে স্থাপন করতে হবে।
ভবনের সীমানা দেয়াল দক্ষিণ ও পশ্চিম দিক উঁচু হবে। প্লাষ্টারও মোটা হবে। উত্তর, পূর্ব দিকের সীমানা দেয়াল নীচু হবে।
গাড়ী রাখার গ্যারেজ থাকবে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব দিকে (যদি বেসমেন্ট করা)। যদি বেসমেন্ট না করা হয় তবে অগ্নি কোণে থাকবে। বেসমেন্ট করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে নৈঋত, পশ্চিম, দক্ষিণ দিকে বেসমেন্ট করা যাবে না।
বর্তমান সময়ে বহুতল আবাসিক বসবাসের ভবনে দোকান বা অফিস নির্মানের হিড়িক পড়েছে, যা বাস’শাস্ত্রের বিপরীতে। এতে করে হয় দোকানী লাভবান হয়ে যায়, নতুবা গৃহস্থ্য। এরূপ বহুতল ভবন বসবাসের জন্য নিম্নতম উপযোগী।
বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ী, ছোট বাড়ীর মেইন গেট ও গৃহ প্রবেশের মূখ্য দ্বার কোন দিকে কিভাবে রাখবেন তা চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হলো।

চিত্র:

৯/১
৯/১ ৯/১

সবুজ দাগ সমূহ টিক মার্ক মেইন গেট, স্বর্ণালী দাগগুলি গৃহ প্রবেশের মূখ্যদ্বার করতে হবে।জমির দৈর্ঘ্য প্রস্থ মেপে দ্বার প্রকরণ ঠিক করবেন।আমাদের এ কথা ভুললে চলবে না, যে মেইন গেট এবং মূখ্যদ্বার যদি আমরা সঠিক স্থানে স্থপন করতে না পারি তবে উক্ত ভবন বা বাড়ীতে ঋণাত্বক শক্তি বেশী থাকবে এবং একের পর এক দুঃখ দূর্দশা আমাদেরকে ভোগ করতে হবে।
পক্ষান্তরে আমরা যদি চিত্রানুযায়ী বাস্তুশাস্ত্র সম্মতভাবে প্রধান গেট ও ফ্ল্যাটে প্রবেশের মূখ্যদ্বার স্থাপন করি তবে ধণাত্বক শক্তির সক্রিয় প্রভাব আমাদের বা বসবাসকারীদের উপর বর্ত্তাবে এবং গৃহস্থ্যের ঘর ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ থাকবে যদি আভ্যন্তরীণ সকল নির্মাণ শাস্ত্রসম্মতভাবে হয় তবে।এই লেখা পড়ে কোন প্রকার ব্যঙ্গাত্বক, বা বিরূপ মন্তব্য করার পূর্বে নিজ নিজ অবস্থান অনুযায়ী, নিজেকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ রেখে চিন্তা করুন- মেইন গেট ও মূখ্য প্রবেশ দ্বার এবং আপনার পারিবারিক অবস্থা, দেখবেন আমি যা লিখলাম তা এক বিন্দুও প্রমাদযুক্ত নয়।
গৃহ প্রবেশের মূখ্যদ্বার খুব শক্ত, পুরু ও বাস্তুশাস্ত্রানুযায়ী শুভ বৃক্ষের নির্মাণ করা উচিত, গৃহের ভিতরের সকল দরজা সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া চাই।দরজা চৌকাঠ ও একই জাতীয় কাঠের হতে হবে।গৃহাভান্তরে দরজা জোড় সংখ্যার হতে হবে।প্রধান দরজার দৈর্ঘ্য যেন প্রস্থ্যের দ্বিগুণের বেশী হয়।প্রধান দরজা ভিতর থেকে ডান দিকে খুলবে অর্থাৎ Clockwise দরজা খোলা ও বন্ধের সময় যেন অতিরিক্ত শব্দ না হয়।শব্দহীন দরজা সর্বোত্তম।Please ধুড়-ম ধাড়-ম করে দরজা লাগাবেন না।
যতখানি সম্ভব, ঈশাণ, নৈঋত কোণ রান্নাঘরের জন্য অবশ্যই বর্জন করবেন।রান্নাঘর দক্ষিণ পূর্ব দিকের পূর্ব দক্ষিণ দিকে, অগ্নি কোণে সর্বোত্তম।এরূপ স্থান পাওয়া না গেলে বায়ু কোণ মন্দের ভাল।যিনি রান্না করবেন তাঁর মুখ থাকবে পূর্ব দিকে।রান্না ঘরে এডজাস্ট পাখা বসালে তা বসাতে হবে পূর্বে বা দক্ষিণে।পশ্চিম, দক্ষিণ দিকে আসবাব পত্র রাখার জন্য তাক তৈরী করে নিবেন।ভারী জিনিস নৈঋত কোণে রাখুন।
গোছলখানা বা বাথরুম পূর্ব দিকে নির্মাণ করতে হবে।ঈশাণ ও নৈঋত কোণে নির্মাণ করা যাবে না। গোছল করার সময় মুখ যেনথাকে পূর্ব দিকে, বেসিন বসালে এমন ভাবে বসাতে হবে যাতে করে দর্পন থাকে পূর্ব অথবা দক্ষিণ দিকে।গোছলখানা, শৌচাগার কোনক্রমেই রান্নাঘর, খাওয়ার ঘর সংযুক্ত ও বিপরীত দিকে যেন না থাকে।শৌচাগার বা বাথরুম থেকে খাওয়ার ঘর যেন সরাসরি দেখা না যায়।গোছল খানার পানি ঈশান কোন দিয়েই নির্গত হবে।শৌচাগার যদি গোছলখানার ভিতরেই হয় তবে প্যান বাথরুমের মেঝে থেকে আড়াই ফিট উঁচুতে বসাতে হবে।কমোড তো এমনিতেই উঁচু।শৌচাগারের দরজা প্লাষ্টিক বা এ জাতীয় ধাতব পদার্থ দ্বারা তৈরী করে বসালে চলবে।তবে ধাতব দরজা পরিত্যাজ্য।
খাওয়ার জায়গা যেটাকে আমরা ডাইনিং রুম বা হল বলি, সেটা থাকবে পশ্চিম দিকে, খাওয়ার টেবিল এমন ভাবে বসাতে হবে যাতে করে খাওয়ার সময় মুখ থাকে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে।খাওয়ার স্পেস থেকে শৌচাগার, বাথরুম যেন দেখা না যায়।
প্রধান শোবার ঘর নৈঋত বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে নির্মাণ করতে হবে এবং এই রুমটি হবে কর্তা-কর্ত্রীর জন্য।অন্যান্য শোবার ঘর, বায়ু কোণে, উত্তর ও পূর্ব দিকে হবে। সব সময় শোবার সময় মাথা থাকবে দক্ষিণ দিকে।
বাংলাদেশের দক্ষিণে সাগর বিদ্যমান।তাই বারান্দা, ব্যলকনী দক্ষিণ দিকে নির্মাণ করা যাবে না। উত্তর, পূর্ব এবং ঈশাণ কোনেই নির্মাণ করতে হবে।বায়ু কোন মন্দের ভাল।
বহুতল ভবনের ছাদে যদি কোন কক্ষ নির্মাণ করা প্রয়োজন বোধ করেন তবে তা দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে, অথবা দক্ষিণে পশ্চিমে করবেন।অন্য দিক ও কোণে নির্মাণ করবেন না।
ঈশান কোণ, উত্তর, পূর্বদিকে জমি ফাঁকা রাখতে হবে অপেক্ষাকৃত অন্যান্য দিক ও কোণের তুলনায়।কিন্তু এত বহুতল ফ্ল্যাট বাসী বিশেষ কাজে লাগাতে পারবেন না, যদি আপনি এই ফাঁকা ও খোলা জায়গায় কিছু করতে চান, তবে ঈশাণ কোণে সর্বোত্তম, পানির ফোয়ারা করা, যদি রঙ্গিন পানির ফোয়ারা করেন তবে রঙ্গীন পানি যেন সোনালী বা হলুদ বর্ণের হয়।আবার সুন্দর ঘাসের লনও করতে পারেন।কিন্তু তুলসী গাছ ব্যতীত অন্যান্য গাছ লাগানো যাবে না।আপনি আপনার ফ্ল্যাট-এর অথবা বাড়ীর দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে এবং নৈঋত কোণে উঁচু বড় গাছ পাতা বাহার গাছ, বা এই দিক ও কোণে রকগার্ডেনও করতে পারেন।
নীচের তলা থেকে উপরের তলা উচ্চতায় কম হবে।নীচের তলা বরাবর দরজা যেন উপরের তলার স্থানে না হয় ২/৩ ইঞ্চি এদিক সেদিক করে রাখতে হবে।একইভাবে অন্যান্য তলা।
যত বেশী উপরে বসবাস করা যায় বায়ু চলাচল তত বেশী পরিমাণে সহজ হয়।যত বেশী উপরে থাকবেন দূষণের হার তত কম এবং মহাজাগতিক রশ্মির বা কসমিক এনার্জির তীব্রতা তত বেশী।বহুতল ভবনের ভূমিতল জমির স্তর থেকে চার থেকে ছয় ফুট উঁচু করতে হবে।ভুমিতল কম থাকলে মাটির মধ্যে অবস্থিত ঋণাত্বক বস্তু থেকে বিচ্ছুরিত ঋণাত্বক শক্তি সহজে আসতে সক্ষম হবে।কিন্তু ভুমিতলের উচ্চতা বেশী হলে ঋণাত্বক শক্তির প্রভাব কম হবে।বহুতল ভবনের প্রধান ষ্ট্রাকচার অপরিবর্তিত রেখে ঋণাত্বক বস্তু, যেমন- সিরামিক, কাঠ, সুরকি, পাথর, ক্রিষ্টাল, পিতল ইত্যাদি ব্যবহার বাড়ালে ফ্ল্যাটের গৃহস্থ্যদের জন্য উত্তম।ভবনের রংয়ের ক্ষেত্রে এ্যাক্রিলিক রং, সিন্থেটিক ভিনাইল, ফ্লোরিং, ফ্লোরোসেন্ট রং, পরিত্যাজ্য করতে হবে।কেননা এগুলি ঋণাত্বকবসস্তু এবং সর্ব প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর।ঋণাত্বক শক্তি মানব দেহে সিরোটিনিন ও হিষ্টামাইন উৎপন্ন করে, অসি’রতা বৃদ্ধি করে, হতাশা বাড়ায়, রোগের প্রকোপতা বৃদ্ধি করে।
তাই প্রাকৃতিক বস্তু ব্যবহার সর্বদিক দিয়ে শুভদায়ক।এই জন্য চুনকাম এবং ডিসটেম্পার ব্যবহার করা ভাল।কেননা এগুলি বাতাসকে শোষণ করে প্ররিস্রুত করতে সক্ষম।
ফ্ল্যাটের ছয়তলার উপর থেকে যত উপরে উঠবেন ততই ঋণাত্বক শক্তির প্রকোপতা কম।
দক্ষিণ-পশ্চিম শেষে উত্তর-পশ্চিম দিকে ঢালু বাড়াতে হবে, তবে অপেক্ষাকৃত বেশী ঢালু থাকবে ফ্ল্যাটের উত্তর, পূর্ব ও ঈশাণ কোণে।
পূর্বেই লিখেছি মূখ্য প্রবেশদ্বারের উচ্চতা মেইন গেটের তুলনায় অবশ্যই বেশী হতে হবে।
ফ্ল্যাটের দক্ষিণ-পশ্চিম দিক আবদ্ধ করে রাখবেন এবং উত্তর ও পূর্ব দিক খোলা মেলা রাখবেন।
বহুতল বাড়ী তৈরীর সময় স্লাব, বিম, কলাম ইত্যাদির অংশের প্লাষ্টার পুরু করতে হবে যাতে চৌম্বকীয় শক্তি হ্রাস পায়।
বহুতল ফ্ল্যাটের সর্বশেষ তলের ছাদ অবতল রাখা সব দিক থেকেই ভাল, এতে করে ছাদে পানি জমতে পারে না।সূর্য রশ্মি সরাসরি বা খাড়া না পড়ে কাত হয়ে পড়ায় ছাদও গরম কম হয়।
শুভনক্ষত্রাশ্রিত শুভ সময়, শুভদিনে, সম্পূর্ণ শুচিতা অবলম্বণ পূর্বক, নব বস্ত্র পরিধান করে মুসলমান সমপ্রদায়ভূক্তরা কোরান তেলওয়াত করিয়ে ও নিজে করে নব গৃহে প্রবেশ করবেন।হিন্দু সমপ্রদায়রা বাস্তু পূজো করিয়ে নিবেন, সঙ্গে বা পূর্বে, পরে পাঞ্চাঙ্গ স্বস্ত্যয়ন অষ্টাঙ্গ স্বতস্থ্যয়ন ক্রীয়াকর্ম করে নেয়া সর্বোত্তম বোধ করি।
এ কাজটা জ্যোতিষ ব্রাহ্মণ করতে সিদ্ধহস্ত, পূজোর ব্রাহ্মণ অনেক প্রকার পূজো করেন বিধায়, বাস্তু পুজো অনেক সময় তালগোল মিলিয়ে ফেলেন, তথাপি আপনার মনোনিতকে দিয়ে করানো সর্বোত্তম।
মুসলমান সমপ্রদায়রা প্রবেশ দ্বারের বাহিরে উপরে “বিস্‌মিল্লাহহির রাহমানির রাহিম” লেখা টাঙ্গিয়ে রাখবেন, ভিতরের দিকে “আয়াতুর কুরসী” বা অন্যান্য আয়াত, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা নিজ নিজ ধর্মানুসারে মাঙ্গলিক চিহ্ন স্থপন করবেন।
কিন্তু উত্তরের পূর্বাংশ বা ঈশাণ কোণ নিয়ে যেন না ঘুমায় সে বিষয়ে সচেষ্ট হতে হবে।দরজা বরাবর যেন না ঘুমায় সেটাও লক্ষ্য রাখবেন।

বাস্তুমতে খামারবাড়ি

আধুনিক যুগে বড় বড় শহরে ব্যবসা- বাণিজ্য, অন্যান্য পেশায় ব্যস্ত জীবন থেকে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে এবং শহরের দূষণ থেকে কিছু সময়ের জন্য রেহাই পেতে গ্রাম্য পরিবেশে ফাঁকা নিরালায় সবুজায়ন করার ঝোঁক দেখা দিয়েছে।চারদিকে তরি-তরকারির খেত, নানারকম ফলের বাগান, কোথাও আবার গরু-মোষের গোয়াল, হাঁস-মুরগির পোল্ট্রি, মাঝখানে বাংলো ধরণের বসবাসের বাড়ি।কোনও কোনও খামারবাড়ি বা ফার্ম হাউসে পুকুর বা ছোট হৃদও থাকে।যাতে থাকে সুইমিং পুলের ব্যবস্থা।অনেক ফার্ম হাউসই বর্তমানে হলিডে রিসর্টে রূপান্তরিত হয়েছে।

এই সব ফার্ম হাউসের জন্যও বাস্তুবিদ্যার কিছু নিয়মের কথা বলা হয়েছে।ফার্ম হাউসের উত্তর ও পূর্ব দিকে যতটা সম্ভব বেশি ফাঁকা জায়গা রাখা উচিত।পূর্ব ও উত্তর দিকে দরজা হলে ভাল হয়।সুইমিং পুল থাকলে সেটিও হবেউত্তর-পূর্ব দিকে।কোনও অবস্থাতেই মাঝখানে সুইমিং পুল করা ঠিক নয়।

রান্নাঘর হবে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে।খাওয়ার জায়গা হবে রান্নাঘরের পশ্চিম দিকে।শোওয়ার ঘর হবে দক্ষিণ-পশ্চিম অথবা দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে।খাট, বিছানা এরকমভাবে পাততে হবে যাতে শোওয়ার সময় মাথা থাকবে দক্ষিণ, পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে।

শৌচাগার উত্তর-পশ্চিম বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে হবে।তবে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে শৌচাগার করতে হলে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের দিকটা ফাঁকা রেখে তবেই তা করতে হবে।উত্তর-পূর্ব দিকে শৌচাগার না করাই ভাল।

পূর্ব ও উত্তর দিকে বেশি খোলা বা জানালা করতে হবে।উত্তর ও দক্ষিণ দিকে থাকলে খুবই ভাল হবে।ছোট পাহাড় বা ঠিলা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে থাকলে তো কথাই নেই।খুবই শুভ, খুবই ভাল।

সংক্ষেপে একটা বাড়ির জন্য বাস্তুবিদ্যায় যে সব নিয়ম মেনে চলার কথা বলা আছে তার সবটাই খামারবাড়ির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
হলিডে হোম ও হলিডে রিসোর্ট

হলিডে হোম হল বাড়ির বাইরের এমন এক বাস্তুস্থান যেখানে গিয়ে মনের শান্তি ও দেহের বিশ্রাম হয়।ঘরোয়া পরিবেশে প্রাত্যহিক একঘেয়ে জীবনযাত্রার মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন ও একটু বৈচিত্রের স্বাদ পেতেই মানুষ হলিডে হোম অথবা রিসর্ট -এ ছুটে যান।এই হলিডে হোম ও রিসর্টের জন্যও বাস্তুবিদ্যায় কিছু নিয়ম আছে।অন্যান্য বাড়িঘরের মতোই হলিডে হোম বা হলিডে রিসর্টের জন্য জমি বাছাই করতে হবে যাতে সেখানকার আকর্ষণে মানুষ ছুটে যাবেন।

এ ধরণের জমিতে সুফল পেতে হলে উত্তর, উত্তর-পূর্ব অথবা পূর্ব নিচু থাকবে।নদী, হ্রদ, পুকুর, ছোট্ট নদী, জলাশয়, ঝরনা, জলপ্রপাত বা ফোয়ারা যদি থাকে তা হলে তার পানি বা স্রোত পশ্চিম দিক থেকে পূর্বমুখী অথবা দক্ষিণ থেকে উত্তরমুখী হলে খুব ভাল হয়।যদি প্রাকৃতিক পানির কোনও ব্যবস্থা না থাকে তা হলে ওই ‘দিক’ সংক্রান্ত নিয়ম মেনে কৃত্রিম ঝরনা বা জলপ্রপাত তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে।পাহাড়, পর্বত, টিলা ইত্যাদি দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে থাকলে ভাল ফল পাওয়া যায়।হলিডে রিসর্ট অথবা হলিডে হোমে ধ্যান বা যোগাভ্যাসের জন্য হলঘর বা ঘর উত্তর-পূর্ব অথবা উত্তর দিকে তৈরি করতে হবে।এতে মনের প্রকৃত শান্তি পাওয়া যাবেই।

পূর্ব ও উত্তর দিকে পার্ক অথবা ফুলের বাগান করা হলে ভাল হয়।দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে সুন্দর সুন্দর বড় গাছ লাগানো যেতে পারে।

হেল্‌থ ক্লাব, পার্লার সাওনা বাথ, মালিশ প্রভৃতির ব্যবস্থা রাখতে হবে পূর্ব দিকে।গলফ, টেনিস, ব্যাডমিন্টন, স্কোয়াশ কোর্ট ইত্যাদি উত্তর-পশ্চিম দিকে তৈরি করতে হবে।নানা রকমের খাবারের রেস্তরাঁ থাকবে দক্ষিণ-পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে।

রিসর্টের কটেজ অথবা সুন্দর কুঁড়েঘর তৈরি করতে হবে দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে।এইগুলিতে ঢোকার দরজা পূর্ব, উত্তর-পূর্ব অথবা উত্তর দিকে খোলা থাকবে।এই কটেজগুলিতে শোওয়ার ব্যবস্থা এরকমভাবে করতে হবে যাতে ঘুমোনোর সময় মাথা থাকে পূর্ব, পশ্চিম অথবা দক্ষিণ দিকে।ঘুমোবার সময় উত্তর দিকে মাথা কিছুতেই নয়।বিদ্যুৎচালিত সাজ-সরঞ্জাম যেমন হিটার, এয়ার কন্ডিশনার ইত্যাদি কটেজের দক্ষিণ-পূর্ব দিকেই থাকবে।

মিউজিক রুম বা প্রমোদভবন তৈরি করতে হবে উত্তর-পশ্চিম দিকে।এই দিক্‌টির ফাঁকা জমিতে মিউজিক বা এন্টারটেনমেন্ট রুম থাকলে ভাল হয়।

(Commenting: OFF)

বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থানুসারে ষোলটি কক্ষ ও মাঝখানে উঠোনযুক্ত বাড়িকে উত্তম মনে করা হয়।নামাজের বা ইবাদতের কক্ষ হবে।পূর্বদিকে গোসলখানা ও পানিধার হবে।অগ্নিকোণে রান্নাঘর, বৈদুতিক সাজসরঞ্জাম রাখার ঘর করতে হবে।উত্তরে দামি বা বহুমূল্য জিনিসপত্র রাখার ভাণ্ডার ও ধনসম্পদ রাখা যেতে পারে।অগ্নিকোণে ও পূর্বদিকের মাঝখানে ঘি, তেল, দধিমন্হন ঘর হওয়া উচিত।এই ধরণের বাড়িকে উত্তম বলা হয়েছে।

পশ্চিম দিকে খাওয়ার ঘর হবে।পশ্চিম ও নৈর্ঋত দিকের মাঝখানে পড়ার ঘর অথবা অতিথি কক্ষ করা উচিত।বায়ব্য দিকে পশুশালা, রথ বা বাহন রাখার জায়গা করতে হবে।পশ্চিম ও উত্তরের মধ্যে রোদনগৃহ বা শোককক্ষ তৈরি করা যেতে পারে।নৈর্ঋত দিকে পাদুকা রাখতে হবে।নৈর্ঋত ও পশ্চিম দিকের মাঝখানে শৌচাগার নির্মাণ করা যেতে পারে।পশ্চিম দিকে ছোট ছেলেমেয়েদের থাকার ঘর করা উচিত।বায়ব্য দিকে কুমারী মেয়েদের থাকার ব্যবস্থ থাকবে।কারণ এই রকম ঘরে কুমারী মেয়ে থাকলে তার বিবাহে বিলম্ব দোষ কেটে যাবে।

বাস্তু দিক্‌দর্শন

চিত্র:

আধুনিক যুগে জমির অভাব, বড় বাড়ি তৈরি করাও প্রায় অসম্ভব।তবে ষোল ঘরের বাড়ি আজকের দিনে কল্পনা করাও বৃথা।ষোলকক্ষযুক্ত বাড়ি সম্ভব না হলে এগারো কামরা, নয় কামরা, সাত কামরা, পাঁচ কামরাযুক্ত বাড়ি করা যেতে পারে।তাও যদি সম্ভব না হয় তা হলে অন্ততপক্ষে তিন কামরার বাড়িও ভাল।এই প্রেক্ষিতে আধুনিক প্রয়োজনের কথা মনে রেখে আদর্শ বাড়ির জন্য বিভিন্ন অনুকুল দিক্‌ ও অন্যান্য পরামর্শের কথা বলা হয়েছে।পরিস্থিতি ও প্রয়োজন অনুসারে এই সব দিক্‌ ও পরামর্শ অনুসরণ করে অবশ্যই লাভবান হওয়া যায়।

বাড়ি তৈরি : জমির উত্তর-পূর্ব কোণে ভূমির দোষ উদ্ধার করা উচিত।শাস্ত্রমতে দোষ বা ক্রুটি সম্পন্ন করার পরই প্রথম খনন শুরু করা কর্তব্য।চারদিকের জমিকে প্রথমে সমান ভাবে চৌরস করে নিতে হবে।এরপর জমির ঢাল রাখতে হবে উত্তর-পূর্বে।ভিত্তিপ্রস্তর চান্দ্রমাস অনুসারে উপযুক্ত দিকে বিশেষ অনুষ্ঠান পূর্বক স্থাপন করতে হবে।সে সম্বন্ধে অভিজ্ঞ জ্যোতিষ ও বাস্তুশাস্ত্রবিদের মতানুসরণ করা উচিত।নির্মাণ কাজ প্রথমে দক্ষিণ-পূর্ব দিক্‌ থেকে শুরু করতে হবে।পূর্ব এবং উত্তরে বেশি জায়গা ছাড় দিতে হবে।দক্ষিণ এবং পশ্চিম সীমানার পাঁচিল উত্তর ও পূর্ব দিকের চেয়ে উঁচু আর মোটা করতে হবে।মূল বাড়িটি রাস্তার তল থেকে কমপক্ষে দু ফুট উঁচু করে করা উচিত।

মনে রাখা দরকার যে প্রথম খনন করার সময় শুভ মুহূর্ত অনুসরণ করা অবশ্য কর্তব্য।পর্যায়ক্রমে সর্বপ্রথম উত্তর-পূর্ব, তারপর উত্তর-পশ্চিম, দক্ষিণ-পূর্ব এবং পরিশেষে দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ এইভাবে খনন করা উচিত।

ভিত্তিপ্রস্তর : বাস্তু বিশেষজ্ঞ ও জ্যোতিষীর পরামর্শ অনুযায়ী শুভ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা উচিত।প্রথম খননের ঠিক বিপরীত নিয়মে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে হবে।যথা: পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ-পশ্চিম, দক্ষিণ-পূর্ব, উত্তর-পশ্চিম ও পরিশেষে উত্তর-পূর্ব।

সীমানা প্রাচীর : বাড়ির চারদিকে সীমানা প্রাচীর হওয়া বাঞ্ছনীয়।সীমানা প্রাচীর এবং মূখ্য বাড়ির মাঝখানে যেন ছাড় থাকে।সীমানা প্রাচীরের পশ্চিম দিকের দেওয়াল পূর্ব দিকের দেওয়ালের চেয়ে যেন বেশি উঁচু থাকে।যদি দক্ষিণ এবং পশ্চিমের দেওয়াল উঁচু করা সম্ভব না হয় তবে যেন দেওয়ালটিকে তুলনামূলকভাবে একটু মোটা করে তৈরি করা হয়।

সীমানা প্রাচীরের দ্বার : সীমানা প্রাচীরের দরজা নির্ভর করছে জমিটি কোন মূখী তার ওপরে।সীমানা প্রাচীরের দরজা কীভাবে তৈরি করতে হবে সে সম্বন্ধেও প্রামাণিক সূত্রগুলি প্রাচীন বাস’শাস্ত্রে বলা আছে।নীচে একটি তালিকার সাহায্যে এ বিষয়ে জানানো হল।
পূর্বমুখী জমি- উত্তর-পূর্বদিকের পূর্বে করতে হবে।
পশ্চিম মুখী জমি – উত্তর-পশ্চিমের পশ্চিম দিকে করতে হবে।
উত্তরমূখী জমি- উত্তর-পূর্বের উত্তর দিকে।
দক্ষিণমূখী জমি- দক্ষিণ-পূর্বের দক্ষিণ দিকে।
সীমানা প্রাচীরের দরজা যে দিকগুলিতে করা কোনও মতেই উচিত নয় তারও একটি তালিকা দেওয়া হল।
দক্ষিণ-পূর্ব দিকের পূর্ব দিকে।
দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের পশ্চিম দিকে।
উত্তর-পশ্চিম দিকের উত্তর দিকে।
দক্ষিণ দিকের মাঝখানে।
গ্যারেজ : গ্যারেজ হওয়া উচিত দক্ষিণ-পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে।

ব্রহ্মস্থান : জমির মাঝখানে অর্থাৎ একেবারে মধ্যস্থলে কোনও রকমের ভারী নির্মাণ কর্ম বাঞ্ছনীয় নয়।যেমন বিম কলাম, পিলার, দেওয়াল ইত্যাদি যেন জমির মাঝখানে না থাকে।একই রকমভাবে কোনও ঘরের মাঝখানে কোন রকমের ভারী কিছু বসানো বাঞ্ছনীয় নয়।কারণ মধ্যস’লটি হল ব্রহ্মস্থান।

বারান্দা : উত্তর ও পূর্ব দিকে করতে হবে বারান্দা।বারান্দার ছাদের স্তর বাড়ির ছাদের স্তরের এক সমান যেন না হয়।বারান্দার উত্তর-পশ্চিম দিকে জুতো রাখবার জায়গা করা যেতে পারে।

টেরাস : বাড়ির উত্তর বা পূর্ব অংশে টেরাস নির্মাণ করতে হবে।

নলকূপ ও সেপটিক ট্যাঙ্ক : নলকুপ, কুয়ো ইত্যাদি উত্তর-পূর্ব দিকে তৈরি করতে হবে।উত্তর-পূর্ব দিকের কোণসূত্রের উপর যেন নলকুপ বসানো না হয়।সেপটিক ট্যাঙ্ক দক্ষিণ-পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিমে করা যেতে পারে।এটিও যেন কোণসূত্রের উপর না বসে।

ওভারহেড ট্যাঙ্ক : ওভারহেড ট্যাঙ্ক যেন দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের পশ্চিমে হয়।

আউটহাউস : উত্তর বা পশ্চিম দিকে সীমানা প্রাচীরের দেওয়াল স্পর্শ না করে আউটহাউস তৈরি করতে হবে।আউটহাউসের উচ্চতা প্রধান দেওয়ালের উচ্চতার চেয়ে কম হওয়া বাঞ্ছনীয়।

বাইরে যাওয়ার দরজা : প্রধান দরজার চেয়ে ছোট আকারে অন্য দিকে যাওয়ার দরজা তৈরি করা উচিত।এই দরজার উচ্চতা প্রধান দরজার মতো রাখা যাবে, কিন’ চওড়ায় দরজা যেন তুলনায় ছোট হয়।

খাওয়ার ঘর : খাওয়ার ঘরের অবস্থান নির্ভর করছে রান্নাঘরের অবস্থানের উপর।আদর্শ রান্নাঘর হিসাবে যদি দক্ষিণ-পূর্বে রান্নাঘরের অবস্থান হয়, তবে পূর্বদিকে খাওয়ার ঘর করা উচিত।এবং যদি উত্তর-পশ্চিমে রান্নাঘর হয় তবে পশ্চিম দিকে খাওয়ার ঘর করা উচিত।খাওয়ার টেবিল অবশ্যই আয়তাকার হওয়া উচিত।গোল বা ছয় কোণযুক্ত টেবিল না হওয়াই বাঞ্ছণীয়।খাওয়ার ঘরের দক্ষিণ-পূর্বে বা উত্তর-পশ্চিমে রেফ্রিজারেটর রাখা উচিত এবং উত্তর-পূর্বে খাওয়ার পানি, পানির ফিল্টার ও বেসিন রাখতে হবে।

বসবার ঘর : বাড়ির এবং অতিথিদের বসবার ঘর হবে পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিম দিকে।বাড়ির কর্তা পূর্ব বা উত্তর দিকে চেয়ে অতিথিকে আপ্যায়ন করবেন।বসবার জায়গাগুলি এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে অতিথি পশ্চিম বা দক্ষিণ দিকে তাকিয়ে কথা বলেন এবং বাড়ির কর্তা পশ্চিম বা দক্ষিণ দিকে থাকবেন।এতে বাড়ির কর্তা এবং অতিথি উভয়ের পক্ষে শুভ।

পড়ার ঘর : উত্তর বা পশ্চিম দিকের ঘরে পড়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।কিন’ পড়বার সময় অবশ্যই পূর্ব বা উত্তর দিকে তাকিয়ে পড়াশুনা করা উচিত।পড়বার টেবিলের ঢাকা বা টেবিল ক্লথ যদি হালকা সবুজ রঙের হয় তবে পড়াশুনায় মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে।মনোবিজ্ঞানীদের তথ্য থেকে এটা প্রমাণিত।পড়ার ঘরের দরজা উত্তর-পূর্ব দিকে হলে ভাল হয়।

কর্তার শোওয়ার ঘর : কর্তার শোওয়ার ঘর হবে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে।কর্তার শোওয়ার খাট থাকবে দেওয়াল থেকে অন্তত তিন ইঞ্চি দূরে।কর্তার শোওয়ার অবস্থা হবে মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা উত্তর দিকে, কোনও মতেই মাথা উত্তর দিকে থাকবে না।তার বিজ্ঞানসম্মত কারণ হচ্ছে মানুষের মাথা দেহের অন্যান্য অংশের চেয়ে ভারী।উত্তর দিকে মাথা রেখে ঘুমোলে নানা রকম রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।কারণ হচ্ছে উত্তর মেরু এবং দক্ষিণ মেরু শরীরের উপর প্রভাব সৃষ্টি করে।ঘরের সংলগ্ন শৌচাগার উত্তর-পশ্চিম অথবা দক্ষিণ-পূর্বে করতে হবে।ওই ঘরের দরজা উত্তর বা পূর্বে রাখা উচিত।প্রধান আলমারি ঘরের দক্ষিণ-পশ্চিম খাটের পাশে এমনভাবে রাখতে হবে যাতে আলমারির মুখ থাকে উত্তর দিকে।ওই আলমারিতে গৃহকর্তা তাঁর মুল্যবান কাগজ ও দলিলপত্র এবং টাকা-পয়সা রাখবেন।কারণ এই উত্তর দিক্‌ই হচ্ছে বুধ গ্রহের দিক্‌”।দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারী আলমারি রাখা সম্ভব না হলে কর্তার ঘরের উত্তরে ছোট আলমারিতে টাকা-পয়সারাখাযেতেপারে।
নিচের চিত্রের মাধ্যমে এটা পরিস্কার করে দেখানো হলো।

চিত্রঃ

ছেলের শোওয়ার ঘর : ছেলে যদি বিবাহিত হয় তা হলে তার শোওয়ার ঘরে অবস্থান হবে বাড়ির দক্ষিণ-পূর্বে।এটা যেহেতু আগ্নেয়-কোণ, সেহেতু বিবাহিত জীবনযাপনের পক্ষে সুখকর।ছেলে যদি অবিবাহিত হয় বা ছাত্রাবস্থায় থাকে তা হলে তাকে পূর্বে অথবা উত্তরের ঘরে শোওয়ার ব্যবসথা করে দিতে হবে।বিদ্যার্থীর মাথা পূর্ব, দক্ষিণ দিকে রেখে ঘুমানো শাস্ত্রসম্মত।

কন্যার শোওয়ার ঘর : কন্যার শোওয়ার ঘর হবে উত্তর-পশ্চিম দিকে কারণ জ্যোতিষ মতে এটি চন্দ্রের স্থান এবং সঙ্গীত ও কলার পক্ষে শুভ।

কিশোরের শোওয়ার ঘর : কিশোরদের শোওয়ার ঘর হবে পশ্চিম দিকে।শোওয়ার খাটকে ঘরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে রাখতে হবে।কিশোরদের মাথা পূর্ব, দক্ষিণ দিকে রেখে শোওয়া চলে।শোওয়ার খাট যেন দেওয়ালকে স্পর্শ না করে।

নামাজঘর : নামাজ ঘরের অবস্থান বাড়ির উত্তর-পূর্ব দিকে হওয়া অবশ্যই বাঞ্ছনীয়।এটা জ্যোতিষমতে বৃহস্পতির সথান এবং বৈজ্ঞানিক মতে এই দিক্‌ ধনাত্মক শক্তির প্রাচুর্যে ভরা।এই কারণে, ইবাদতের জন্য এই দিক্‌টি উৎকৃষ্ট স্থান।বিদ্যার্থীরাও এই দিক্‌কার ঘর ব্যবহার করতে পারে এবং যোগব্যায়াম বা সাধনা করার পক্ষে এই দিক্‌ উৎকৃষ্ট।যে সমস্ত মালিকানাযুক্ত ফ্ল্যাট বাড়িতে উত্তর-পূর্ব দিকে নামাজ ঘর নির্মাণ করার উপায় না থাকে তবে সেই সব স্থলে “ব্রহ্মস্থানে” ছোট করে নামাজ ঘর নির্মাণ করা যেতে পারে।(আলাদা অধ্যায়ে “ব্রহ্মস্থান” সম্বন্ধে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।)

অতিথিদের ঘর : অতিথিদের থাকার ঘরের অবস্থান হবে বাড়ির উত্তর-পশ্চিম দিকে।
অসুস্থ্যদের ঘর : অসুস্থ্য ব্যক্তির ঘরের অবস্থান উত্তর-পূর্ব দিকে ভাল হয়।এতে সে তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হয়ে উঠবে এবং সুস্বাস্থ্য লাভ করবে।

শোকাতুর ঘটনা ঘটলে : মৃত ব্যক্তির জন্য বাড়ির পশ্চিম দিকের ঘর ব্যবস’া করতে হবে এবং মৃত ব্যক্তির ক্রিয়াকার্যাদি পশ্চিম দিকে করতে হবে, বিশেষত উঠোনে।

আঁতুড়ঘর : আগেকার দিনে বাড়ির মধ্যেই একটি পৃথক ঘরে শিশুর জন্ম হত।শিশু জন্মের আগে থেকেই একটি নির্দিষ্ট ঘরকে আঁতুড়ঘর ঠিক করে তাতে সন্তানসম্ভবা মহিলাকে রাখা হত।এখনও আমাদের দেশে পল্লি অঞ্চলে বাড়ির আঁতুড়ঘরেই শিশুরা ভূমিষ্ঠ হয়ে থাকে।তবে এই ব্যবস্থা দ্রুত পালটে যাচ্ছে।এখন শহরতলিতেও হাসপাতাল বা নার্সিং হোম অথবা মেটারনিটি হোমে শিশুদের জন্ম হয়।এখনকার ফ্ল্যাটবাড়ির সংস্কৃতিতে পৃথক আঁতুড়ঘর করার কথা ভাবাও অসম্ভব।তবে হাসপাতাল ও নাসিং হোম প্রভৃতির আঁতুড়ঘর উত্তর-পূর্বদিকে হলে মা-শিশু উভয়ের পক্ষেই ভাল।শিশুর ভূমিষ্ঠ হওয়ার স্থান উত্তর-পূর্ব দিকে হওয়া উচিত।এতে শিশুর জন্ম হয় নির্ঝঞ্ঝাটে।ফ্ল্যাট বা বাড়িতে গর্ভবতী মহিলাদের উত্তর-পূর্ব দিকের ঘরে থাকার ব্যবস’া করা ভাল।সন্তানসম্ভবা মায়েদের পক্ষে এ ধরণের ঘরে থাকা সব দিক্‌ থেকে ভাল।যদি কোনও ফ্ল্যাট বা বাড়িতে উত্তর-পূর্ব দিকের ঘরে ব্যবস্থা না হয় তা হলে অন্ততপক্ষে উত্তর-পশ্চিম দিকের কোনও ঘর হলেও চলবে।

মেজেনাইন ফ্লোর : যদি মেজেনাইন-এর প্রয়োজন হয় তবে তা দক্ষিণ দিকে করা যেতে পারে।

বেসমেন্ট : যদি করতে হয়ে তবে বেসমেন্ট উত্তর-পূর্ব দিকে করা যেতে পারে।দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে কোনও মতেই হবে না।

বিবিধ : প্রত্যেকটি ঘরের মাঝখানে ভারী কোনও কিছু জিনিস রাখা যাবে না।কেবল খাওয়ার ঘরে খাওয়ার টেবিল রাখা যেতে পারে।আলমারি, দেওয়ালের র‌্যাক, আলনা ইত্যাদি ভারী জিনিসপত্র ঘরের দক্ষিণ, পশ্চিম অথবা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে রাখতে হবে।
দ্বার দু প্রকারের – সব্যদ্বার ও অপসব্যদ্বার।বাইরের দরজা ভিতরে থেকে প্রবেশ করার সময় ডানদিকে ঘুরলে সেই দ্বারকে বলে সব্য দ্বার।শাস্ত্রীয় মতে শুভ সব্যদ্বার।ফলে সুখ, ধন্যধান্য ও সন্তানাদি বৃদ্ধি।আবার যদি বাইরের দরজা থেকে ভিতরে প্রবেশের সময় দরজা বাঁ দিকে পড়ে তবে সেটি হল অপসব্যদ্বার।এটি অশুভ।এর ফলে অর্থহানি, বন্ধু-বান্ধব হানি, রোগের প্রকোপ দেখা দেবে।

চিত্রঃ

যদি বাইরের দরজা এবং ভিতরের দরজা একই দিকে থাকে তবে সেটিকে বলে উৎসঙ্গ দ্বার।আবার বাইরের দরজা যদি ভিতরের দরজার বিপরীতে থাকে এবং প্রবেশ করার সময় পিছন দিক্‌ দিয়ে প্রবেশ করতে হয় তবে সেটি হবে পৃষ্ঠভঙ্গ দ্বার দিয়ে প্রবেশ। এরল অপসব্য দ্বারের মতোই হবে।

দ্বার দু প্রকারের – সব্যদ্বার ও অপসব্যদ্বার।বাইরের দরজা ভিতরে থেকে প্রবেশ করার সময় ডানদিকে ঘুরলে সেই দ্বারকে বলে সব্য দ্বার।শাস্ত্রীয় মতে শুভ সব্যদ্বার।ফলে সুখ, ধন্যধান্য ও সন্তানাদি বৃদ্ধি।আবার যদি বাইরের দরজা থেকে ভিতরে প্রবেশের সময় দরজা বাঁ দিকে পড়ে তবে সেটি হল অপসব্যদ্বার।এটি অশুভ।এর ফলে অর্থহানি, বন্ধু-বান্ধব হানি, রোগের প্রকোপ দেখা দেবে।

চিত্রঃ

যদি বাইরের দরজা এবং ভিতরের দরজা একই দিকে থাকে তবে সেটিকে বলে উৎসঙ্গ দ্বার।আবার বাইরের দরজা যদি ভিতরের দরজার বিপরীতে থাকে এবং প্রবেশ করার সময় পিছন দিক্‌ দিয়ে প্রবেশ করতে হয় তবে সেটি হবে পৃষ্ঠভঙ্গ দ্বার দিয়ে প্রবেশ।এর ফল অপসব্য দ্বারের মতোই হবে।

প্রধান প্রবেশদ্বার সম্বন্ধে কিছু বিশেষ নির্দেশের কথা দেওয়া হল।
ভবনের মাঝামাঝি স্থানে মুখ্যদ্বার না করাই ভাল
মুখ্যদ্বারে যেন দুটি পাল্লা থাকে।ভেতরের দরজা এক পাল্লার করা যেতে পারে।
মুখ্যদ্বার সব সময় ভিতরের দিক থেকে খোলা উচিত।
প্রবেশ দ্বারের মুখোমুখি কোন দেওয়াল থাকা উচিত নয়।
মুখ্যদ্বার স্ল্যান্টিং বা অর্ধচন্দ্রাকার হওয়া উচিত নয়।দরজা হবে চৌকো।ত্রিকোণ, বৃত্তাকার বা অসম আকৃতির দরজা কিছুতেই করা উচিত নয়।
প্রবেশদ্বারের মাঝে গোবরাট অর্থাৎ চৌকাঠ যেন অবশ্যই থাকে।
বাড়ির মুখ্যদ্বারের সামনে বড় গাছ, কোনও মসজিদ অথবা পানির বড় ট্যাঙ্ক বা বিদ্যুৎ সবাস্টেশনের মতো কোনও বাধা যেন না থাকে।আদর্শ বাড়ির একটি প্রবেশদ্বার ও একটি প্রস্থানদ্বার থাকা উচিত।
প্রবেশদ্বার আকৃতিতে মুখ্যদ্বারের চেয়ে যেন ছোট হয়।প্রস্থানের দরজায় একটি পাল্লা হলে ক্ষতি নেই।
মোট দরজার সংখ্যা যেন বেজোড় না হয়।

প্রধান প্রবেশদ্বার জমির অবস্থা ও আশেপাশের রাস্তার ওপর নির্ভর করে।জমির যে দিকে দরজা বসাতে হবে সে দিক্‌ নয়টি সমান অংশে বিভক্ত করে নিতে হবে।নীচের চিত্রে তা দেখানো হচ্ছে।

চিত্র:

সাধারণ ভাবে চিত্র অনুসারে চতুর্থ স্থানে দরজা বসানো শুভ হবে।

যদি কোনও ভূখণ্ড ৯ X ৯-এর সমান ৮১ টি পদে বিভক্ত করা হয় তা হলে চারদিকের সীমারেখার প্রত্যেকটিতে ৮টি পদ অথবা দ্বার থাকবে।এর ফলাফল নিম্নরূপে পাওয়া যায়।‘জ্যোতি নিবন্ধ’ অনুসারে-এতে প্রতিটি দিকেই প্রবেশদ্বার করা যায়।কিন্তু সেই দিককে ৯ দিয়ে ভাগ করতে হবে।৫টি অংশ ডান দিকে এবং ৩টি অংশ বাঁদিকে রেখে ১টি অংশ, যেটি চতুর্থ অংশ, বাঁদিকে প্রবেশদ্বারের জন্য রাখতে হবে।

এই নিয়মে প্রতিটি দিকে একই স্থানে প্রধান প্রবেশদ্বার করা যায়।যদি এটা সম্ভব না হয় তা হলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বাড়ির প্রতিটি দিককে সমান অংশে ভাগ করে নিতে হবে।এটা এরকমভাবে হবে।

১। শিখী – অগ্নিভয় ১৭। পিতৃ – সন্তান নাশ
২। পর্জন্য – কন্যাজন্ম ১৮। দৌবারিক – শত্রুবৃদ্ধি
৩। জয়ন্ত – প্রচুর ধন ১৯। সুগ্রূব – পুত্র ও ধনপ্রাপ্তি
৪। ইন্দ্র – রাজার প্রসন্নতা ২০। পুষ্পদন্ত – সর্বসুখ প্রাপ্তি
৫। সূর্য – ক্রোধের প্রাধান্য ২১। বরুণ – সুখসম্পদ
৬। সত্য – অসত্য বাক্য ২২। অসুর – রাজভয়
৭। ভৃশ – ক্রুরতা ২৩। শেষ – ধনক্ষয়
৮। অনতরিকষ – চুরির ভয় ২৪। পাপযক্ষ্ণা – শত্রুবৃদ্ধি
৯। অনিল – অল্প সন্তানত্ব ২৫। রোগ – মৃত্যু ও বন্ধন
১০। পূষা – দাসত্ব ২৬। অহি – শত্রুবৃদ্ধি
১১। বিতথ – নিম্নবৃত্তি ২৭। মুখ্য – পুত্র ও ধনপ্রাপ্তি
১২। বৃহৎক্ষত – ভোজন ও পুত্রবৃদ্ধি ২৮। ভল্লাট – বিপুল লক্ষ্ণী
১৩। যম – রৌদ্র ২৯। সোম – সকল গুণের সম্পদ
১৪। গন্ধর্ব – কৃতঘ্নতা ৩০। ভুজঙ্গ – পারিবারিক কলহ
১৫। ভৃঙ্গরাজ – নির্ধনতা ৩১। অদিতি – স্ত্রী কলহ
১৬। মৃগ – সন্তানের পরাক্রমের ক্ষয় ৩২। দিতি – দারিদ্র

এই নিয়মে প্রদান প্রবেশদ্বার নীচের তালিকা অনুযায়ী করা শুভ:

পূর্বদিকে – সূর্য, জয়ন্ত ও ইন্দ্র উত্তরদিকে – ভল্লাট ও সোম
পশ্চিমদিকে – কুসুমদন- ও বরুণ দক্ষিণদিকে – বৃহৎক্ষত

সব থেকে ভাল হয় যদি প্রবেশদ্বার ও প্রস্থানদ্বার অর্থাৎ বাড়ি থেকে বের হওয়ার দুটি পৃথক দুয়ার থাকে।প্রধান প্রবেশ পথের দরজা উত্তর দিকে থাকলে দক্ষিণ দিকে বাইরে বের হওয়ার একটা ছোট দরজা রাখা যেতে পারে।আধুনিক মতে সব সময় প্রধান প্রবেশদ্বার তুঙ্গস্থ স্থানে করা ভাল।

চিত্র:

এখানে যেভাবে দেখানো হয়েছে তাতে প্রধান প্রবেশদ্বার এইভাবে বসানো যেতে পারে:

১। উত্তর-পূর্বের উত্তর দিক্‌ ৩। উত্তর – পূর্বের পূর্ব দিক্‌
২। উত্তর – পশ্চিমের পশ্চিম দিক্‌ ৪। দক্ষিণ- পূর্বের দক্ষিণ দিক্‌

এগুলি সবই হল তুঙ্গস্থ স্থান।বাড়ির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই দরজার আকার হবে।দরজা এবং জানালা আয়তনের ক্ষেত্রে দক্ষিণের চেয়ে উত্তর দিকে বেশি হবে।তেমনই পশ্চিমের চেয়ে পূর্ব দিকে জানালার আয়তনের ক্ষেত্র বেশি হবে।এই পরিপ্রেক্ষিতে এটা মনে রাখতে হবে যে সংশ্লিষ্ট স্থানের ভৌগলিক পরিস্থিতি ও দিক্‌ হল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।এই কারণেই বাংলাদেশের দক্ষিণ দিক্‌ খোলা বাড়ি সকলের পছন্দ।কিন্তু আয়তনের ক্ষেত্র উত্তর দিকের আয়তনের সমান রাখতে হবে।

বাসস্তুশাস্ত্রমতে জানালা

প্রধান প্রবেশদ্বার ও অন্যান্য দরজার পর জানালা হল বাড়ীঘরের অন্যতম অপরিহার্য অংশ।ঘরের মধ্যে আলো-বাতাস চলাচলের জন্য জানালার ক্ষেত্রেও কতকগুলি নিয়ম মেনে চলতে হবে।

উপযুক্ত আলো-বাতাস চলাচলের জন্য জানালাগুলি এরকমভাবে বসাতে হবে যাতে ‘ক্রস ডেল্টিলেশন’ বা আড়াআড়ি আলো-বাতাস চলাচলের পথ থাকে।ঘরের দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকের তুলনায় উত্তর ও পূর্ব দিকে বেশি করে জানালা বসানো ভাল।

জানালা বসাতে হবে ঘর, দেওয়াল ও মেঝের সামঞ্জস্য বজায় রেখে।লম্বা-চওড়াতেও দরজার সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে জানালা তৈরি করতে হবে।তা ছাড়া দেওয়ালের চওড়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে জানালার পাল্লা তৈরি হবে।কারণ আলো-বাতাস চলাচলের জন্য এটার অবশ্যই প্রয়োজন।

জানালার ক্ষেত্রে আধুনিক “শার্টার জানালা” সংখ্যা নিয়ে এক সমস্যা সৃষ্টি করে।সুতরাং ঘরের আয়তনকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।এ ক্ষেত্রে জানালার সংখ্যাকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই।জানালার কটা পাল্লা কতখানি দেওয়ালের স্থান জুড়ে রয়েছে সেটাই দেখার।এখানে বাস্তুর মতে জানালার পাল্লার সংখ্যা গণ্য হয় না।

নীচে চিত্রে চার পাল্লার জানালা বাস্তু মতো একটা ধরা উচিত।

চিত্র:

প্রধান প্রবেশদ্বারের মতোই অন্যান্য দরজা-জানালাও উর্ধ্ব অর্থাৎ তুঙ্গস্থ স্থানে বসাতে হবে।সম্ভব হলে জানালা বর্ণিত দিক্‌গুলিতে বসালে ভাল হয়।

১। পূর্ব ৪। উত্তর-পূর্বের উত্তর দিক্‌
২। উত্তর ৫। উত্তর-পশ্চিমের উত্তর দিক্‌
৩। উত্তর-পূর্বের পূর্ব দিক্‌ ৬। উত্তর-পশ্চিমের পশ্চিম দিক্‌
৭। দক্ষিণ

এই সব তুঙ্গস্থ দিকে জানালা বসাতে হবে।ভৌগোলিক কারণ বলতে বাংলাদেশের সার্বিক আবহাওয়ার বিচারে দক্ষিণ নিম্নস্থ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের দক্ষিণ দিকে জানালা বসানো সমুচিত।

কিছু শহরাঞ্চল যেমন চট্রগ্রামের হাওয়া চলাচলের প্রকৃতি সম্বন্ধে আবহাওয়া দফতরের মতামত অনুসারে জানা যায় এখানে দক্ষিণ থেকে উত্তরে হাওয়া চলাচল করে।সেই জন্য এখানে দক্ষিণ খোলা ঘর সকলের কাম্য।

চিত্র:

উপরের ছবিটির সাহায্যে হাওয়া কীভাবে চলাচল করে সেই অনুযায়ী জানালা ঘরের কোন দিকে এবং কীভাবে করা উচিত তা পরিষ্কার বুঝা যাবে।

কোনও অবস্থাতেই মোট জানালা ও দরজার সংখ্যা ‘০’-যুক্ত সংখ্যা না হয়।যেমন ১০, ২০, ৩০ ইত্যাদি।এ ক্ষেত্রে দরজা ও জানালার পৃথক পাল্লার মোট সংখ্যাকে এক সঙ্গে গণ্য করতে হবে।এ ছাড়া ভেন্টিলেটারকেও এই সংখ্যার আওতায় আনতে হবে।

বাস্তুতে সিঁড়ির অবস্থান
বাড়িঘরের সিঁড়িও অন্যান্য অংশের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু দোতলা, তেতলা বা বহুতল বাড়ির ক্ষেত্রেই নয়, একতলার বাড়ির ছাদে ওঠার সিঁড়ির ভূমিকা অপরিসীম। গ্রামের বাড়িঘর, খামারবাড়ি সর্বত্রই সিঁড়ির গুরুত্ব আছে। বহুতল বাড়িতে লিফ্‌ট থাকা সত্ত্বেও সিঁড়িকে বাদ দেওয়া যায় না। সুতরাং, বাড়ির সঙ্গে সিঁড়ির সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই, বাস্তু নিয়ম বাড়িঘরে প্রযোজ্য হলে সিঁড়ির ক্ষেত্রেও তার প্রয়োগ একান্তু প্রয়োজনীয়।
১।
সিঁড়ি কোন দিক্‌ দিয়ে ওপরে উঠবে, সে সম্পর্কে বাস্তুতে বলা হয়েছে, সিঁড়ি পূর্ব দিক্‌ থেকে পশ্চিম দিকে উঁচুতে উঠবে।
২।
যদি পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে সিঁড়ি ওঠানো না যায় তা হলে অনন্তপক্ষে উত্তর দিক্‌ থেকে দক্ষিণ দিকে যেন উঠে যায়।
চিত্র:
৩।
সিঁড়ি ঘুরে ওপরের দিকে যাবে ঘড়ির কাঁটার স্বাভাবিক ঘোরার ধরণে অর্থাৎ সিঁড়ি ডান দিকে ওপরের দিকে ঘুরে যাবে।
৪।
জমির দক্ষিণ অথবা পশ্চিম দিকে সিঁড়ি তৈরি করলে ফল ভাল হয়।
৫।
দক্ষিণ বা পশ্চিম দিক্‌ না পেলে দক্ষিণ-পূর্বের দক্ষিণ দিক্‌ ও উত্তর-পশ্চিম দিকের পশ্চিম দিকে সিঁড়ি করাও ভাল।
৬।
কোনও অবস্থাতেই উত্তর-পূর্ব দিকে সিঁড়ি তৈরি করা উচিত নয়। কারণ জমির এই দিক্‌টি অত্যন্ত হালকা ধরণের।
৭।
সিঁড়ির ধাপ সব সময় বেজোড় সংখ্যাং হওয়া উচিত। যেমন- ৭, ৯, ১১, ১৭, ২৩, ৩৫, ৪১ ইত্যাদি। এই বিজোড় সংখ্যা এরকম হতে হবে যাতে সংখ্যাটিকে ৩ দিয়ে ভাগ করলে অবশিষ্ট ২ হয়। এই হিসাবে ১১ ও ১৭ সংখ্যা অতি শুভ।
৮।
সিঁড়ির ক্ষেত্রে অত্যন- গুরুত্বপূর্ণ কথা হল বাড়ির বাইরের লাইনে কখনও সিঁড়ি তৈরি করা উচিত নয়। কারণ, বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে হলেও তা হবে বাড়িটির বাস’বিরুদ্ধ সমপ্রসারণ।
৯।
সিঁড়ি তৈরির সময় এ কথাও মনে রাখতে হবে যে দরজার সামনে যেন সিঁড়ি না থাকে। দরজা খুলে বেরিয়েই যেন সিঁড়ি মুখোমুখি না হয়।
চিত্র:
বাস্তুতে রান্নাঘরঃ
রান্নার ঘর হল এমন একটি অতি প্রয়োজনীয় স্থান যেখানে বাড়ির মহিলারা বেশিরভাগ সময় থাকেন। সুতরাং রান্নাঘর তৈরি করার সময় কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। প্রথমত বাস’শাস্ত্রের নিয়মের সঙ্গে পানির সুবিধা, আগুন, বৈদ্যুতিক শক, ধোঁয়া, কালি, দূষিত বাতাস, পোকা-মাকড় থেকে নিরাপত্তা, পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা ইত্যাদিও আছে। এই সব ব্যবস্থা হলে তবেই গৃহিণীদের শরীর-স্বাস্থ্য ভাল থাকবে এবং তাঁরা অনায়াসে সুস্বাদু ব্যঞ্জন রান্না করতে পারবেন। বাড়ির দক্ষিণ-পূর্ব কোণ রান্নাঘরের পক্ষে অত্যন্ত আদর্শ স্থান। কারণ এই স্থানটি নিয়ন্ত্রণ করেন তাপ ও অগ্নি। তাই এই অঞ্চলটি অগ্নির স্থান। আগুন ও তাপ ছাড়া কিছুই রান্না করা যায় না। রান্নাঘরের অন্য বিকল্প স্থান হল উত্তর-পশ্চিম কোণ। এই স্থানটি রান্নাঘরের পক্ষে মন্দের ভাল। তবে উত্তর-পূর্ব, উত্তরের মাঝামাঝি, পশ্চিমের মাঝামাঝি, দক্ষিণের মাঝামাঝি অথবা মাঝখানে কখনওই রান্নাঘর করা উচিত নয়। যদি বাড়ির দক্ষিণ-পূর্ব কোণে রান্নাঘর করা সম্ভব না হয় তা হলে অন্য কোনও ঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে দেওয়াল না ছুঁয়ে একটি রান্নার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে নিয়ে তাতে রান্না করা উচিত।
রান্নার প্ল্যাটফর্মঃ
রান্নার প্ল্যাটফর্ম বা উঁচু স্থানটি যেন পূর্ব বা উত্তরের দেওয়াল স্পর্শ না করে। প্ল্যাটফর্মটি পূর্ব দেওয়ালের দিকে হওয়া উচিত। এর ফলে যে রান্না করবে তার মুখ সহজেই পূর্ব দিকে থাকবে। এটিই সব থেকে শুভ। অন্য বিকল্প হল দক্ষিণ দেওয়াল জুড়ে রান্নার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। প্ল্যাটফর্ম না হলে বসেও রান্না করা চলে। শুধু দিক ও কোণ মেনে চলতে হবে। রান্না দাঁড়িয়ে হোক বা বসে হোক, স্টোভ, গ্যাস অথবা উনুনে হোক, তাতে কিছু আসে যায় না। কোনও অবস্থাতেই পশ্চিম বা উত্তর দিকে মুখ করে রান্না করা উচিত নয়। রান্নার ব্যাপারে এই দিক্‌গুলি নিয়ম মেনে চলা উচিত। এই নিয়মগুলি মেনে রান্নাঘর তৈরি করলে অনেক সুবিধা হয়। রান্না করা ব্যঞ্জন হয় সুস্বাদু। বন্ধ হয় অপচয়। বাড়ির লোকেদের স্বাস্থ্য ভাল থাকে।

রান্নাঘরের আরও টুকিটাকি:

১।
রান্নার প্ল্যাটফর্মের নীচে গ্যাস সিলিন্ডার রাখা ভাল। গ্যাস সিলিন্ডার সম্পর্কিত নিরাপত্তার ব্যবস্থাগুলি সতর্কভাবে অনুসরণ করা দরকার।
২।
বাসনপত্রের আলমারি দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে রাখা উচিত।

চিত্রঃ

৩।
রান্নাঘরের কল রান্নাঘরের উত্তর-পূর্ব কোণে হওয়া বাঞ্ছনীয়। পানির জালা বা ফিল্টারও উত্তর-পূর্ব স্থানে থাকবে। বাসনপত্র পরিষ্কার করার সিঙ্ক উত্তর-পূর্ব দিকে থাকবে না। এটা দক্ষিণ দিকে হলেই ভাল। মোজাইক, মার্বেল বা স্টেনলেস স্টিলের যে কোনও রকমের সিঙ্ক বসানো যেতে পা
৪।
রান্নাঘরের উত্তর-পশ্চিম দিকে ষ্টোররুম তৈরি করতে হবে। এরকম ষ্টোররুম সর্বশ্রেষ্ঠ। এরকম দিক্‌ না পাওয়া গেলে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ষ্টোররুম করা যেতে পারে। কিন্তু কখনওই রান্নাঘরের উত্তর-পূর্ব দিকে ষ্টোররুম বা কিচেন স্টোর করা যাবে না। রান্নাঘরের আধুনিক সাজ-সরঞ্জাম যেমন- মিক্সার, গ্রাইন্ডার, টোস্টার, কুকিং রেঞ্জ, চার্নার ইত্যাদি দক্ষিণ-পূর্ব কোণে রাখতে হবে। রান্নাঘরের গরম দূষিত বাতাস ও ধোঁয়া বের করে দেওয়ার এগজস্ট পাখা দক্ষিণ দিকে লাগাতে হবে। রান্নাঘরে দুদিকে ক্রস ভেন্টিলেশনের অনুকুলে জানালা করা উচিত। যাতে টাটকা বাতাস রান্নাঘরে চলাচল করতে পারে। ফ্রিজ থাকবে রান্নাঘরের উত্তর-পশ্চিম দিকে।
৫।
বেশির ভাগ বাড়িতে রান্নাঘরেই খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। এ সব ক্ষেত্রে রান্নাঘরের পশ্চিম দিকে খেতে বসতে হবে অথবা ডাইনিং টেবিল পাততে হবে।

চিত্র:

শৌচাগার ও গোসলখানা

বড় বড় শহরে স্থানের অভাবে ঘরের সঙ্গে সংলগ্ন শৌচাগার ও গোসলখানা করার রেওয়াজ এখন অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছে। অ্যাটাচ্‌ট বাথ এক কথায় অনেকেরই বাঞ্ছিত। তবে তা সত্ত্বেও অনেকেই সংলগ্ন গোসলখানা ও চান কিন্তুএই সঙ্গে অনেকেই শৌচাগারটি পৃথক স্থানে রাখারও পক্ষে। শৌচাগার ভিতরেই হোক অথবা বাইরে, সেপটিক ট্যাঙ্ক অথবা সোক পিটের কাছাকাছি তৈরি করতে হবে। এ জন্য দক্ষিণ অথবা পশ্চিম দিক বেছে নেওয়া যেতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিম বা উত্তর-পূর্ব কোণ অথবা ভবনের মধ্যবর্তী এলাকায় কখনওই শৌচাগার করা উচিত নয়। যদি সম্ভব হয় তা হলে এ বিষয়ে পূর্ব ও উত্তর দিকও এড়িয়ে গেলে ভাল হয়।

চিত্র:

শৌচাগার ও গোসলখানার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

শৌচাগারের আদর্শ স্থান হল পশ্চিম দিক ও উত্তর-পশ্চিম কোণে। বিকল্পে দক্ষিণ-পূর্বেও শৌচাগার করা যেতে পারে।
কোনও মতেই উত্তর-পূর্বে, দক্ষিণ-পশ্চিমে ও ব্রহ্মস’লে বা কেন্দ্রস্থানে যেন শৌচাগার না করা হয়।
পায়খানার প্যান উত্তর-দক্ষিণমুখী বসাতেই হবে।
মেঝের তল থেকে প্যান নিদেনপক্ষে এক থেকে দেড় ফুট উঁচুতে বসাতে হবে।
শৌচাগারের পানির কল যেন উত্তর-পূর্ব ও উত্তর দিকে থাকে। দক্ষিণ-পূর্ব, উত্তর ও পশ্চিমে পানির কল না থাকাই শ্রেয়।
শৌচাগারের মেঝের ঢাল এমনভাবে করতে হবে, যাতে পানির ধারা উত্তর-পূর্ব, উত্তর ও পূর্বের দিকে সহজেই যেতে পারে।
শৌচাগারের দরজা যেন উত্তর ও পূর্বে থাকে।
শৌচাগারে বায়ু চলাচলের জন্য জানালা, ভেন্টিলেটর বা এগ্‌জস্ট ফ্যান প্রয়োজনে যে কোনওদিকে লাগানো যেতে পারে। তবে এগুলি লাগানোর আদর্শস্থান হল পূর্ব, পশ্চিম ও উত্তর দিকে।
আধুনিক ফ্ল্যাট বাড়িতে সংলগ্ন শৌচাগার অবশ্যই যেন উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বে থাকে।
শৌচাগারে আয়না বসালে তা উত্তর ও পূর্বদিকে বসানোই বাঞ্ছনীয়।
শৌচাগারে আলো উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বে সুবিধামত লাগাতে হবে।
গোসলখানা করার উত্তম স্থান হল পূর্বদিক। বিকল্পে উত্তর বা উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিমে গোসলখানায় করা যেতে পারে। তবে কখনও দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিমে করা উচিৎ নয়।
শাওয়ার ও ওয়াশ বেসিন বসাতে হবে গোসলখানার উত্তর-পূর্ব ও পূর্ব দেওয়ালে।
ওয়াটার হিটার, গিজার, সুইচ বোর্ড বসানোর আদর্শ দিক হল গোসলখানার দক্ষিণ-পূর্বদিকের দেওয়াল। বিকল্পে উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিম দিকের দেওয়ালে লাগানো চলবে।
বাথটাব অবশ্যই পূর্ব-পশ্চিম অভিমুখী বসাতে হবে। বাথটাবে গোসল করার সময় মাথা পূর্বে রেখে পা পশ্চিমদিকে রাখতে হবে। (তবে এটা বাংলাদেশ থেকে মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য নয় ) দক্ষিণে পা রেখে গোসল করা উচিৎ নয়।
গোসলখানা সংলগ্ন কাপড়জামা ছাড়ার ঘর করতে হবে দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে।
গোসলখানায় কাপড় কাচা বা বাসন মাজা উত্তর-পশ্চিমে ও পশ্চিম দিকে করা যেতে পারে।
বড় আয়না বসানো চলবে গোসলখানার উত্তর ও পূর্বদিকে। তবে ছোট আয়না (১/ X ১/) সুবিধানুযায়ী যে কোনও দেওয়ালে টাঙানো চলবে।
গোসলখানার পানির ঢাল যেন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে না হয়।
বাড়িঘরের অবস্থানঃ

১।
বারান্দা, ফাঁকা জায়গা, জানালা, প্রধান দরজা, টাকা-পয়সা রাখার জায়গা, খোলা স্থান, বাচ্চাদের ঘর, জলাশয় ও নিচু স্থান।
২।
প্রধান দরজা, নামাজ ঘর, ঔষধ গৃহ, খোলা জায়গা, পোর্টিকো, টিউবওয়েল বা জলাধার।
৩।
প্রধান দরজা, জানালা, বারান্দা, খোলা স্থান খাওয়ার ঘর, গোসলখানা।
৪।
রান্নাঘর, দধিমন’ন গৃহ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম রাখার স্থান, সেপটিক ট্যাঙ্ক, মিটার বক্স, শোওয়ার ঘর।
৫।
ভারী জিনিসপত্র রাখার জায়গা, শোওয়ার ঘর, কম খোলা জায়গা।
৬।
বাড়ির কর্তার শোওয়ার ঘর, সিঁড়ি, অস্ত্রগার, সবচেয়ে ভারী জিনিস রাখার জায়গা, ফাঁকা জায়গা থাকবে না।
৭।
খাওয়ার ঘর, ড্রইং রুম, পড়ার ঘর, ঢাকা জায়গা, সিঁড়ি ওভারহেড ট্যাঙ্ক, শৌচাগার, স্নানাগার।
৮।
অতিথি কক্ষ, ষ্টোররুম, গ্যারেজ, ভৃত্য বা সেবকদের বাসস্থান, শৌচাগার, গবাদি পশুর থাকার জায়গা।
৯।
ছোট নামাজ ঘর, খালি জায়গা, কোনও ভারী জিনিস বা বিম ব্যবহার করা উচিৎ নয়।

শয়ন বিধি

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে সুখ, দুঃখ ,পুষ্টি কৃশতা ,বল ,নির্বলতা ,বীর্যবত্তা, নপুংসকতা, জ্ঞান, অপ্সান, জীবন, মরণ, সমস্ত কিছুই নির্ভর করে নিদ্রার উপর। যদি নিদ্রা যথাযথভাবে হয় তবেই মানুষের জীবন ভরে যায় সুখ,স্বাস্থ্য ও জ্ঞানে। আবার নিদ্রা যদি ঠিকঠিক ভাবে না হয় তবে জীবনে দুঃখ, কৃশতা, নপুংসকতা, অজ্ঞানতা তো বৃদ্ধি হয়ই সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যূ ভেঙ্গে গিয়ে জীবন দীর্ঘায়ু না হয়ে স্বল্পায়ুর কারণ হয় ।

শয়নবিধিতে কোন দিকে মাথা রেখে শোওয়া উচিত তারও নির্দেশ রয়েছে। কখনওই উত্তর এবং পশ্চিম দিকে মাথা রেখে শোওয়া উচিত নয়। এতে শরীরে রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি হয়। শয়নবিধি সম্পর্কে বিভিন্ন শাস্ত্রে উল্লেখ করা আছে উত্তর ও পশ্চিমে মাথা না দিয়ে দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে মাথা রেখে শোওয়ার কথা বলা হয়েছে ।

পূর্ব দিকে মাথা দিয়ে শয়ন করলে বিদ্যাপ্রাপ্তি হয়, দক্ষিণে মাথা দিয়ে শয়নে অর্থলাভ ও আয়ু বৃদ্ধি হয়, পশ্চিমে মাথা দিয়ে শয়নে প্রবল চিন্তার উদ্রেক হয়। আর উত্তরে মাথা দিয়ে শয়নে হানি তো হবেই, মৃত্যু ও মৃত্যুতুল্য ফাঁড়াও ভোগ করতে হতে পারে।

আধুনিক বিজ্ঞানেও উত্তরে মাথা দিয়ে না শুয়ে দক্ষিনে মাথা দিয়ে ঘুমালে শরীর স্বাস্থ্যের পক্ষে শুভকারক সে কথা বলেছে। দক্ষিণে মাথা দিয়ে এবং উত্তরে পা রেখে ঘুমানো যে বিজ্ঞান সম্মত তার কারণ হল মানুষের দেহ একটি চুম্বক। মানুষের মাথা হল উত্তর মেরু এবং পা দক্ষিণ মেরু। পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়। চৌম্বকীয় উত্তর মেরু ভৌগোলিক দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। সেই জন্য চৌম্বকীয় ক্ষেত্র প্রবাহিত হয় দক্ষিণ থেকে উত্তরে। মাথা যদি উত্তর দিকে থাকে তবে রক্ত মাথার দিকে প্রবাহিত হবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে এটা স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটার মতো যা করতে অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন হয়। যা স্রোতের পক্ষে সাঁতার কাটার বিপরীত। এ সম্বন্ধে পূর্ব ও পশ্চিম হচ্ছে পার্শ্বিক এবং এদের প্রভাবের খুব একটা গুরুত্ব নেই। উত্তরে মাথা দিয়ে শয়ন করলে পৃথিরীর উত্তর মেরুর সঙ্গে মাথার উত্তর মেরুর বিকর্ষণজনিত কারণে রক্ত সঞ্চালন দ্রুত হয়। শরীর অশান- হয়। দুঃস্বপ্ন হয়। আর দক্ষিণে মাথা দিয়ে শয়নে পৃথিবীর দক্ষিণ মেরু এবং দেহের উত্তর মেরুর আকর্ষণ জনিত ফলে দেহ শান্ত হয়। রক্ত সঞ্চালন সুষম হয়। বিজ্ঞানী ফ্যারাডের সূত্র অনুসারে মানবদেহ বিদ্যুৎ সুপরিবাহী এবং দেহ নিজে একটি চুম্বক বলে দেহের চতুষ্পার্শ্বে বিদ্যুচ্চুম্বকীয় আবেশ সৃষ্টি হয়। দেহের রক্তে হিমোগ্লোবিনে লৌহকণা থাকায় দেহে চুম্বকীয় আবেশ সহজে সৃষ্টি হতে পারে। তাই উত্তরে মাথা দিয়ে শয়নে দেহের রক্তের হিমোগ্লোবিনে চুম্বক বিকর্ষণ জনিত কারণে চৌম্বকীয় আবেশের ফলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। আর দক্ষিণে মাথা দিয়ে শয়নে দেহে বিষমমেরুজনিত আকর্ষণে রক্ত সঞ্চালন সুষম হওয়ার কারণে দেহে প্রশান্তি আনে। তাই দক্ষিণে মাথা দিয়ে শয়নই হল সর্বোত্তম।
রঙের সৌন্দর্য ও কল্যাণবার্তা

স্বাস্থ্য ও মনের ওপর রঙের প্রভাব প্রচন্ড। আকর্ষক রঙের পরিবেশে মনও থাকে আনন্দে পরিপূর্ণ। একঘেয়ে ভাব কেটে যায়। নিরাশা দুর হয়ে যায়। হিন্দু ধর্মীয় কর্মে সিঁদুরের লাল, হলুদের পীত, পাতার সবুজ, আটারসাদা রং ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এগুলি সবই স্বাস্থ্য, স্ফূর্তি ও কল্যাণের জন্য।

সূর্যের রশ্মিতে সকল রঙের সংমিশ্রণ থাকে। সূর্যের রশ্মি থেকে রামধনুর সাতটি রং আমাদের পরিবেশ ও মনকে প্রভাবিত করে। সূর্যের ছত্রছায়ায় নানা বনস্পতি এবং জীব যেরকমভাবে লালিতপালিত হয়, সেইরকমভাবে সবুজ, লাল ও নীল রং মানুষকে সুস্থ্য, সবল যশস্বী ও গৌরবান্বিত তৈরি করে। লাল রং সৌভাগ্যের চিহ্ন আর সবুজ রং ব্যক্ত করে শুভেচ্ছা।

লাল রং :

হিন্দু ধর্মে ধর্মীয় রঙ হল লাল। এই লাল রঙকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রায় প্রতিটি মাঙ্গলিক কাজে লাল রঙের ব্যবহার হয়ে থাকে। প্রায় সকল দেবদেবীর মূর্তিতে লাল সিঁদুরের তিলক পরানো হয়। লাল তিলক শৌর্য এবং বিজয়ের প্রতীক। লাল তিলক লাগালে ব্যক্তির মধ্যে তেজস্বিতা, পরাক্রম, গৌরব ও যশের অসি-ত্ব আছে বলে মনে করা হয়। গৌরবের রং হল লাল। সুস্বাস্থ্য ও শক্তি মানুষের শরীরের গোলাপি আভা থেকেই প্রকাশিত হয়।
প্রাচীনকাল থেকেই লাল রঙের বিশিষ্ট স্থান রয়েছে ভারতীয় নারীর জীবন ও সংসারে। সধবা মহিলারা মাথায় সিঁদুর বা লাল টিপ পরেন। নারীর গৌরব, সম্মান, সৌভাগ্য এবং স্নেহ লাল রং থেকেই বিকশিত হয়।

লাল রং শক্তি, উৎসাহ, স্ফুর্তি ও পরাক্রমের প্রতীক। আনন্দ প্রকাশের রং ও লাল। বিবাহ, জন্ম ও উৎসবে আনন্দের মনোভাব ব্যক্ত হয় লাল রং দিয়েই।

ধনদাত্রী দেবী লক্ষ্মীও পরেন লাল বস্ত্র। লাল রং ধনসম্পদ, বিপুল সম্পত্তি সমৃদ্ধির শুভ প্রকাশ করে। মা লক্ষ্মীকে লাল পদ্মফুলের ওপর বসানো হয়। এই লাল পদ্ম হল সমৃদ্ধির প্রতীক।

গেরুয়া রং :

গেরুয়া হল আধ্যাত্মিক প্রকাশের রং। এটি জ্ঞান, ত্যাগ, তপস্যা ও বৈরাগ্যের প্রতীকও বটে। হিন্দু যোগী, তপস্বী, সাধু, বৈরাগী সকলেই গেরুয়া বস্ত্র পরেন। মনে হয় তাঁরাও যেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে, মৃত্যু থেকে অমৃতের দিকে এবং অজ্ঞানতা থেকে জ্ঞানের দিকে অগ্রসর হয়ে চলেছেন।

যেমন অগ্নি থেকে জ্যোতির প্রকাশ তেমনই গেরুয়া বস্ত্রধারী যোগীও আধ্যাত্মিক জ্যোতির মাধ্যমে প্রজ্বলিত হয়ে ওঠেন। গেরুয়া বস্ত্রধারী সাধু দেবতাদের গুণগুলিকে নিজের মধ্যে বিকশিত করতে চান। এই রং শুভ সংকল্পের সূচক।

সবুজ রং :

সবুজ রং সমগ্র প্রকৃতির মধ্যে ব্যাপ্ত রয়েছে। আমাদের জীবনে এই সবুজ রংটি অধ্যাত্ম প্রেরণাদায়ী পরিবেশের প্রতীক। এটি গাছপালা, শস্য সুশোভিত মাঠ, কেয়ারি, পার্বত্য অঞ্চল আচ্ছাদনকারী মধুর রং। সবুজ মনকে শান্তি দেয় এবং হৃদয়কে করে শীতল। মানুষকে সুখ, শাস্তি, স্ফুর্তি দেয় এই প্রিয় সবুজ রং। মুনিঋষিরা নিজেদের আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য উঁচু সবুজ পর্বত শীর্ষে, লম্বা ঘাসের সবুজ মাঠের মধ্যে শান্ত, সুখী পরিবেশকে আপন করে নিয়েছিলেন।

হলুদ রং :

জ্ঞান, বিদ্যা ও বিবেকের প্রতীক হল হলুদ রং। এই রং সুখ শান্তি, অধ্যয়ন, জ্ঞান, যোগ্যতা, একাগ্রতা এবং মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তির উন্নতিরও প্রতীক। হলুদ বা বাসন্তী রং মস্তিষ্ককে প্রফুল্ল ও উত্তেজিত করে। জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ আনে। মানুষের মনে নতুন নতুন সুস্ব্যা চিন্তাধারা তৈরি করে এই বাসন্তী রং। বসন্ত ঋতু মনের আনন্দদানকারী জ্ঞানবর্ধক ঋতু। ভগবান শ্রীবিষ্ণুর পোশাকের রং হলুদ, তাঁর পীতবস্ত্র অসীম জ্ঞানের দ্যোতক। ভগবান শ্রীগণেশের ধুতিও হলুদ রঙ্গের। সকল পীতবস্ত্র অসীম জ্ঞানের দ্যোতক। ভগবান শ্রীগণেশের ধুতিও হলুদ রঙের। সকল মঙ্গল কার্যে হলুদ ধুতি পরা গণেশ বিঘ্ননাশকারী বলে গণ্য হন।
নীল রং :

মনোবিজ্ঞান অনুসারে রং শক্তি, পৌরুষ ও বীরত্ব মনোভাবের প্রতীক। আর শক্তি-পৌরুষের বার্তা আছে নীল রঙে। পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীরামচন্দ্র এবং লীলা-পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ উভয়ের জীবনই মানবতার রক্ষা এবং দানবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেই কেটে গিয়েছে। এঁদের উভয়েরই শরীরের বর্ণ ছিল নীল।

যে রকম নীল রং আকাশ এবং পৃথিবীতে সর্বব্যাপ্ত তেমনই নীল বর্ণের বীর শ্রীরাম এবং মহাযোদ্ধা শ্রীকৃষ্ণও সর্বব্যাপক ও সর্বশক্তিমান। নীল রং ক্ষত্রিয় স্বভাব প্রকট করে। উদ্যোগী পুরুষের রং নীল। এই রঙের পোশাকধারী ইন্দ্রিয়কে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমর্থ হয়। নীল রংকে সমুদ্র গভীর বলে মনে করা হয়।

সাদা রং :

শ্বেত রঙের সৃষ্টি সাতটি বিভিন্ন রঙের সংমিশ্রণে। সূর্যের সাদা রশ্মিকে ভেঙে দিলে তা থেকে সকল রকমের রং বেরিয়ে আসে। এতে সকল রকমের রঙের কিছুটা ছায়া থাকে। শ্বেত রং পবিত্রতা, শুদ্ধতা, বিদ্যা ও শান্তির প্রতীক। এর দ্বারা মানসিক, বৌদ্ধিক ও নৈতিক স্বচ্ছতা বিকশিত হয়। জ্ঞান ও বিদ্যার রং সাদা। বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর সাদা রং সব থেকে প্রিয়।

সূর্যের রশ্মির রং মানুষ, পশু, পাখি ইত্যাদি মন ও হৃদয়ে প্রভাব সৃষ্টি করে। সব রং সবার ভাল লাগে না। মানুষের শরীর ও মনে রঙের প্রভাব সম্পর্কে কয়েকটি কথা এখানে বলা দরকার। মানুষ যে সব রং ভালবাসে এবং ব্যবহার করে তার থেকে কিছু প্রভাব সৃষ্টি হয়। যেমন, নীল রং ভাবাবেগ, শান্তি, হালকা মেজাজ এবং অন্যদের ভাবাবেগকে শ্রদ্ধা করে।
সূর্যের রশ্মি ও রামধনুর রঙিন ছটা চিরকালই সৌন্দর্যের এক অসাধারণ প্রতিফলন। এরকম রঙের খেলা যে কতটা দৃষ্টিনন্দন তা আমরা সকলেই জানি। যুগ যুগ ধরে রামধনুর সাতটি রং মানুষের কাছে এক বিরল অভিজ্ঞতা। প্রকৃতপক্ষে গ্রহজগতের সঙ্গে এই জগতের এক আশ্চর্য সেতুবন্ধন ঘটায় রামধনু। এই সেতুবন্ধনের মাধ্যমেই আমাদের জীবনে শাসনের ক্ষমতা প্রবেশ করে। প্রকৃতপক্ষে সূর্যের কিরণ ও প্রকাশের মাধ্যমেই গ্রহশক্তি কাজ করে।

রামধনুর সাত রং :

বেগুনী : সবর্দা হাসিখুশি থাকার মনোভাব। সামাজিক হওয়ার প্রবনতা।
নীল : মাঝারি – কঠোর পরিশ্রমী, নিজের কাজে বেশি উদ্যোগী।
গাঢ় – অপরের চোখে স্বার্থপর কিন্তু নিজেদের জীবনের উদ্দশ্য খুঁজে পায়।
আসমানি : পরিপূর্ণতার জন্য সংগ্রামী মনোভাবের পরিচায়ক।
সবুজ : প্রভাব বিস্তারকারী হওয়ার প্রবণতা এবং অন্যদের কাছে সুপরিচিত হওয়ার গভীর ইচ্ছা।
হলুদ : অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ার প্রবণতা। প্রতিযোগিতায় অন্যদের তুলনায় শ্রেষ্ঠত্ব লাভের ইচ্ছা।
কমলা : সামাজিকভাবে সকলকে নিয়ে চলার প্রচেষ্টা। ত্যাগের প্রতীক। জ্ঞানপিপাসু। গাম্ভীর্যপূর্ণ চালচলন।
লাল : স্বভাবগতভাবেই সাহসী, জীবন উপভোগ করার অনুভুতি। স্পষ্টবাদী।

রামধনুর এই সাতটি রঙের বাইরেও আরও বেশ কিছু রং আছে যেগুলি প্রকৃতপক্ষে এই সাতটি রঙেরই সমাহার। সেই রংগুলির কয়েকটি সম্পর্কে নীচে বলা হল।

কালো : বেআইনি কাজকর্মে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা। কখনও কখনও পরিণতির কথা না ভেবেই ওইসব কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়া।

চকোলেট : বিপরীত লিঙ্গের প্রতি শ্রদ্ধা, সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা এবং অন্য স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে যৌন আকাঙ্খা তীব্র।

বিভিন্ন মানুষের ব্যক্তিত্ব বিভিন্ন রকম। তবে রঙের ব্যবহারের উপর তার অনেকটাই সম্পর্ক রয়েছে। রঙের ব্যবহারের ওপর মানুষের গুণাগুণেরও তারতম্য কীভাবে ঘটে এবার তা দেখা যাক।

লাল : অনুকুল : তেজস্বী, অন্যক্ষেত্রে উৎসাহী, প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি, সাহসী। প্রতিকল : আগ্রাসী, আবেগপ্রবণ, অধৈর্য, অল্পেই রেগে যাওয়া।

কমলা : অনুকূল : সামাজিক সকলের সঙ্গে মিলেমিশে চলতে পারে, সকলকে আপন করে নেওয়ার ইচ্ছ। অন্যেরা পছন্দ করে। ভাবাবেগ তো আছেই। কিন্তু তার চেয়েও বেশি অন্যের সঙ্গলাভ। প্রতিকূল : আনুগত্যের অভাব, আলস্য।

হলুদ : অনুকূল : বুদ্ধিজীবী, চিন্তাবিদ, আধুনিক ও চ্যালেঞ্জ জাতীয় জিনিসের প্রতি ভালবাসা, যুক্তিবাদী, সহজেই শিখে নেওয়ার ক্ষমতা এবং অভিনব বস’র প্রতি ভালবাসা। প্রতিকূল : নার্ভাস, জেদ, সিদ্ধান- নিতে অপারগ, নিজের বুদ্ধিমত্তার প্রতি অতিরিক্ত গর্ববোধ। দুর্বল ইচ্ছাশক্তি।

সবুজ : অনুকূল : সহানুভূতিসম্পন্ন, অমায়িক উদ্ভাবন শক্তিসম্পন্ন, আরোগ্যকর, সামাজিক, প্রকৃতির প্রতি প্রেম। প্রতিকূল : পান-ভোজনরসিক এবং বাচাল পরিসি’তির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যস্ততা।
নীল : অনুকূল : বিবেক, বুদ্ধিমত্তা, আন্তরিক, অনুভূতিসম্পন্ন, সতর্ক, আত্ম-আশ্বস্ত, সংস্কৃতিপরায়ণ, দয়িত্বপূর্ণ, অন্তর্দর্শী, রোগী। প্রতিকূল : বিষাদগ্রস্ত, হিসেবি, স্বার্থপর, আগন্তকের প্রতি সন্দেহবাতিক, অনমনীয়।

বেগুনী : অনুকূল : আরও ভাল কিছুর আশায় থাকা, ভাল কিছু খোঁজ করা। আধ্যাত্মিক অন্বেষণকারী। সহিষ্ণু, সব কিছু মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ও রসিক। প্রতিকূল : আত্মগর্বিত, ব্যঙ্গবিদ্রূপকারী, দাম্ভিক, জমকালো, মেধা গ্রহণকারী।

সাদা : অনুকূল : দয়াময়, ভদ্র, উদার, উপকারী, অধ্যাত্ম উপলব্ধিকারী। প্রতিকূল : জীবনে উন্নতির অভাব, কঠোর ইচ্ছাশক্তির মানুষেরা সহজেই এ সব লোকের কাছ থেকে স্বার্থ আদায় করে নেয়।

বাড়িঘরের রং :বাড়িঘরের রং প্রবেশদ্বারের দিক অনুসারে করা শুভদায়ক। নীচে এ সম্পর্কে একটি তালিকা দেওয়া হল।

চিত্রঃ

রং ও রাশিচক্রঃমানুষের জীবনে বিভিন্ন রঙের একটা গুরুত্ব আছে। রাশিচক্র হিসেবে রং ব্যবহার ও তার প্রভাবে মানুষের জীবন সৌভাগ্যময় ও আনন্দদায়ক হতে পারে। রাশিচক্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কী রং করা দরকার তার তালিকা নীচে দেওয়া হল।

চিত্রঃ

বিভিন্ন দিকের কথা বিবেচনা করে বাড়িঘরের রং সম্পর্কে বিশিষ্ট পন্ডিতব্যক্তিরা নানা পরামর্শ দিয়েছন। বিভিন্ন দিকের গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাবের কথা ভেবেই এই রং সুপারিশ করা হয়েছে।

(Commenting: OFF)