fbpx

যে কোন বস্তুর প্রতি যথার্থ যত্ন নিলে তা যেমন দীর্ঘস্থায়ী উজ্জ্বল ও সুন্দর থাকে, রত্ন-পাথরের বেলায়ও তাই।আর তা’নাহলে অযত্ন, অবহেলায় রত্ন-পাথর নেহায়েত সাদামটা, মেটমেটে, মলিন একরাশ সাধারণ খনিজ পদার্থের সামিল মনে হবে।শুধু তাই নয় এই সব রত্নের প্রাকৃতিক গুণাগুণ অর্থাৎ এর অন্তস্থ শক্তিরও হানি হতে পারে।

মুল্যবান অলংকার সংরক্ষণের জন্য যেমন বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, ঠিক তেমনি রত্ন-পাথর সংরক্ষণ ও ব্যবহারের বেলায়ও কতিপয় নিয়ম বা পদ্ধতি অনুসরণ করত হয়।পাঠক নিশ্চয়ই জানেন মূল্যবান রত্নের আকৃতি সাধারণতঃ শিলা পাথরের মতো হয় না।সাধারণতঃ অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র আকৃতির মূল্যবান রত্ন-পাথরের সাথেই আমরা বেশী পরিচিত।সংগত কারণেই সংরক্ষণ করে এই গুলোর নিরাপত্তা, সহজে বহন করার সুবিধা বিবেচনা করে প্রায়শঃ ছোট ছোট বাক্সে রত্ন-পাথরকে রাখা হয়।সেই পরিপ্রেক্ষিতে নিজের অজান্তেই অভিজ্ঞ পাথর বিশেষজ্ঞের নিকট কতিপয় সংরক্ষণ ও ব্যবহার পদ্ধতি ক্রটি পরিলক্ষিত হয়েছে।ফলে সেই সব বিশেষজ্ঞের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা এবং রত্ন-পাথর সংরক্ষণের প্রাচীন এবং আধুনিক বেশকিছু পদ্ধাতির সাথে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দিব।

সনাতন পদ্ধতিতে দেখা যায় ছোট ছোট বাক্সে একই সাথে বিভিন্ন প্রকার রত্ন-পাথর গাদাগাদি করে রাখা হয়।আজো অনেকেই সেই সনাতন পদ্ধতিকেই অনুসরণ করে থাকে।কিন্তু ইহা সঠিক পদ্ধতি নয়।কারণ প্রত্যেক প্রকার রত্ন-পাথরের কাঠিন্যতা, ঔজ্জল্য, রাসায়নিক গুণাগুণ এবং বর্ণ ভিন্নপ্রকৃতির।পাশাপাশি সন্নিহিত একই বাক্সে থাকার কারণে এদের মধ্যে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া (Chemical Reaction) সংঘটিত হওয়া অস্বাভাবিক নয়।সে কারণেই বিভিন্ন প্রকার রত্ন-পাথরকে তাদের প্রকরণ অনুযায়ী পৃথক করে আলাদা আলাদা বাক্সে রাখতে হয়।প্রতিটি রত্ন-পাথরের বাহ্যিক অবয়বের যেন পরিবর্তন না হয় সেজন্য দুটি রত্নের মাঝে সামান্য পরিমাণ তুলা অথবা টিস্যু পেপার ব্যবহার করতে হয়।এর চেয়ে আরো সহজ এবং নিরাপদ পদ্ধতি হল প্রতিটি রত্নকে পরিমাণমত তুলা অথবা অত্যন্ত নরম টিস্যু পেপারে মুড়িয়ে প্যাকেট বাক্সে রাখা যেতে পারে।রত্নের প্যাকেট বা বাক্সে এমন অতিরিক্ত রত্ন-পাথর রাখবেন না যাতে একটা আরেকটার উপর চাপাচাপির পর্যায়ে পৌঁছে, এতে যে কোন রত্ন-পাথর ভেঙ্গে যাওয়া বা ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এর পাশাপাশি সংরক্ষককে আরো একটি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।তা হলো ইমিটেশন, সিনথেটিক বা কৃত্রিম রত্ন-পাথর অবশ্যই প্রাকৃতিক রত্ন-পাথর গুলোর সাথে রাখা একেবারেই অনুচিত।কেননা প্রাকৃতিক রত্ন-পাথরগুলো সর্বদাই তাদের স্বকীয় রাসায়নিক গুণাগুণ অনুযায়ী মহাজাগতিক রশ্মি (Cosmis Ray’s) আলোকে প্রভাবাম্বিত হয়।সে অনুপাতে কৃত্রিম বা ইমিটেশন অথবা সিনথেটিক রত্ন পাথরগুলো সে অনুপাতে প্রভাবাম্বিত হয় না।অপরদিকে এই দুটি রত্ন-পাথরের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে বর্ণগত মিল থাকলেও উভয়ের কাঠিন্যতা, আপেক্ষিক গুরুত্ব, রাসায়নিক গুণাগুণ, প্রতিসরণাংক প্রায় ক্ষেত্রেই অনেক পার্থক্য থাকে।সে কারণেই কৃত্রিম এবং প্রাকৃতিক রত্নের একত্রে সমাবেশ বা একত্রে রাখা সমীচিন নয়।মহা বিশ্বে যে কোন বস্তুর স্থায়ী ক্ষয়কার্য সম্পন্ন করার জন্য প্রধানতঃ বাতাসের আর্দ্রতাকে দায়ী করা হয়।বাতাসের আর্দ্রতা রত্নের ঔজ্জ্বল্য নষ্ট করতে পারে।তেমন পারে প্রখর রশ্মিও।আগুন, সাবান, গরম তেল, পানি ইত্যাদি কোনটাই মূল্যবান রত্ন-পাথরের অনুকূল নয়।এদের সংস্পর্শে রত্নের নিজস্ব রং ও জৌলুষ উজ্জ্বলতা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়।

রত্ন-পাথর পারত পক্ষে ভিজানো উচিত নয়।যতবেশী সাবান, তেল পানিতে আপনার রত্ন-পাথর ডুবাবেন ততই তার ঔজ্জ্বল্য কমার সম্ভাবনা থাকবে।একথা মনে রাখতে হবে যে, যে কোন রত্ন-পাথর যেমন- বিশেষ করে মুক্তা যতবার ভিজবে ততবার তার সৌন্দর্য, উজ্জ্বলতা কমবে এবং কিছুদিন পর দেখা যাবে আপনার মুক্তা রত্নটি সাধারণ সাদা একটি ঢেলায় পরিণত হয়েছে।এমনকি হীরার মতো রত্নও বেশী ভেজালে তার দ্যুতি কমে যায়।

রত্ন-পাথর শুধু সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি, সুরুচি ও সৌখিনতার পরচর্যাই নয়।শাস্ত্রমতে অশুভ গ্রহ প্রতিকার, সৌভাগ্য আনয়ন, রোগ ব্যাধি উপশমেও সহায়ক।

রত্ন-পাথর এর বিভিন্ন কাটিং ও নমুনা

রত্ন-পাথর খনি থেকে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এর ঔজ্জ্বল্য ও জ্যোর্তিময়তা প্রকাশ পায় না।বিভিন্ন জ্যামিতিক আকারে ছোট বড় বিভিন্ন কাটিং ও পালিশ করার পরই রত্ন-পাথরের উজ্জ্বল ও সৌন্দর্য জৌলুস ফুটে ওঠে।এক এক রকম রত্ন-পাথরের গুণাবলী প্রকাশের জন্য এক এক রকম আকৃতি উপযুক্ত।

উপুড় করা বাটির মতো আকৃতিকে বলে ‘ক্যাবোকন’ (Cabochon) এবং সমস্ত পাথর জুড়ে বিভিন্ন জ্যামিতিক আকারে ছোট ছোট সমতল ক্ষেত্রে কাটা হয় সেগুলোকে বলে ‘ফেসেট’ (Faceted)।পাথরের বিভিন্ন দিক ‘ফেসেট’ কেটে সামগ্রিকভাবে যে আকৃতি দেয়া হয়, সেই আকৃতির নাম-টেবল-কাট, স্টেপ-কাট, রোজ-কাট, ব্রিলিয়ান্ট-কাট ইত্যাদি।রোজ-কাট আকৃতিতে থাকে ২৪টা ত্রিভোজাকৃতি ‘ফেসেট’।আর ব্রিলিয়ান্টথ-কাট আকৃতিতে থাকে অন্তত ৫৮টা ‘ফেসেট’, যার মধ্যে ত্রিভূজও আছে আবার চতুর্ভূজ, পঞ্চভূজ, ষড়ভূজও আছে।এগুলো জ্যামিতিক আকৃতি, খেয়াল খুশিমত কাটা নয়।প্রত্যেকটা ফেসেট-এ নিখুঁত কোণ করে কাটা।যাতে সামগ্রিকভাবে রত্ন-পাথরটা সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।তা নাহলে তার সঠিক জৌলুস, ঔজ্জ্বল্য , সৌন্দর্য প্রকাশই পাবে না।শুধু তাই নয় এই সূক্ষ্ম কাজ যথেষ্ট সময় পরিশ্রম ও দক্ষতার সাথে করতে হয়।কখনও কখনও একটা ‘ফেসেট’ নিখুঁত করতেই কেটে যায় দিনের পর দিন।

হীরা দিয়ে রত্ন-পাথর কাটা হয়।কারণ বিশ্বে হীরার চেয়ে শক্ত কোন কঠিন পদার্থের অস্তিত্বই নাই।তাছাড়া অন্তত ৯০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট তাপমাত্রা না উঠলে হীরা বিন্দুমাত্র বিকৃত হয় না।সুতরাং অন্য রত্ন-পাথর তো বটেই, এমনকি হীরা কাটতেও হীরাই ব্যবহার করতে হয়।রত্ন-পাথর কাটার মূল সরঞ্জামকে ‘ডোপ’ বলে।

(Commenting: OFF)

যে কোনও বাড়ি, ফ্ল্যাট, অট্টালিকা অথবা কারখানা সম্পুর্ণরূপে বাস্তুনীতি অনুসরণ করে তৈরি করা অত্যন্ত শক্ত।নির্মাণ কার্যের একেবারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যদি অত্যন্ত সতর্ক হয়ে বাস্তুনীতি মেনে চলা যায় তা হলেই তা সম্পুর্ণরূপে বাস্তুসম্মত বাড়ি হয়ে উঠতে পারে।বাস্তু মেনে বাড়ি বা ফ্ল্যাট তৈরি না করা হলে তাতে বাস্তুদোষ রয়ে যায়।

বাস্তুশাস্ত্রীরা সেই সব দোষ কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রতিকারের ব্যবস্থাও বলেছেন।বাস্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, বাস্তু দোষ কাটানোরও ব্যবস্থা আছে।বাস্তু বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সংশোধনের নানা উপায় আছে ঠিকই, কিন্তু এ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট বহুনীতি আছে, সম্পূর্ণ নীতিই দাঁড়িয়ে আছে অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে, আবার যাদের জ্যোতিষ, বাস্তু, তন্ত্রশাস্ত্রের পারিবারিক ঐতিয্য পূর্ব থেকেই আছে তাঁদের অভিজ্ঞতা অনেক বেশী এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।একে বলা হয় ফলিত বাস্তু বিধান।সুতরাং বাস্তুদোষ দূর করার ব্যাপারে বিশদভাবে না জানলে বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা হওয়া সম্ভব নয়।বাস্তুদোষ হলেও অযথা ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই।কারণ বাস্তুদোষ কাটানো যায়।এই বাস্তুদোষকে মোটামুটি দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।

ক) প্রাথমিক দোষ খ) গৌণ দোষ

প্রাথমিক দোষ:

অনেক সময়ই কোনও বাড়ি তৈরির সময় কিছু দোষ নিয়ে তৈরি হয়।দোষগুলি হল: দিক্‌মূল জমি, শল্যদোষ, জমিস্তর দোষ, উত্তর-পূর্বে ছাঁটা জমি।

১।দিক্‌মূল জমি : যে জমির দুই প্রান্ত চৌম্বক অক্ষের (উত্তর-দক্ষিণ অক্ষ) সমান্তরাল নয় তাকে দিক্‌মূল জমি বলে।এইরূপ জমি পরিহার করা উচিত।তা যদি সম্ভব না হয় তবে অভিজ্ঞ বাস্তুকারকে দিয়ে নকশা প্রস্তুত করিয়ে তবেই বাড়ি করে বাস করা উচিত।

চিত্রঃ

২।শল্যদোষ : কোনও জমির মাটির ত্রুটিকে বলে শল্যদোষ।এই শল্যদোষ হল কোনও জমির প্রাথমিক দোষ।কাজেই শল্যদোষ সংশোধন অবশ্যই করা উচিত।কারণ, বাড়ি তৈরিই হয় মাটির উপর।আর মাটির দোষ কাটিয়ে ওঠার জন্য যেখানে বাড়ি তৈরি হবে সেই জায়গার সম্পূর্ণ জমির মাটি তিন গজ পর্যন্ত খুঁড়ে সেই মাটি সরিয়ে ফেলতে হবে।তারপর ভাল মাটি দিয়ে ভাল করে গোটা গর্তটি ভরাট করাতে হবে।যদিও ব্যবস্থাটি অত্যনন্ত ব্যয়সাপেক্ষ কিন্তু এই পদ্ধতিতে মাটির দোষ সম্পুর্ণভাবে দূরীভূত করা সম্ভব।

৩।জমিস্তর দোষ : বাস্তুশাস্ত্রে জমির স্তর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।জমির স্তর অর্থে জমির ঢাল এবং জমি সম্পর্কিত আনুষঙ্গিক বিষয়সমূহ।এ বিষয়ে ‘বিভিন্ন ধরণের জমি’।বাস্তুশাস্ত্র মতে জমির দক্ষিণ এবং পশ্চিম দিকটা তুঙ্গস্থ বা উঁচু থাকা বিশেষ দরকার।জমির ঢালু দিকটি থাকবে উত্তর ও পূর্ব দিকে।জমির অবস্থা এরকম না থাকলে বাড়ি তৈরির আগে জমিকে অবশ্যই সংশোধন করে নেওয়া উচিত।এই সংশোধনের ব্যয় শল্যদোষ সংশোধনের তুলনায় অনেক কম।

৪। উত্তর-পূর্ব দিকে কাটা জমি: জমি উত্তর-পূর্ব দিকে ছাঁটা বা কাটা হলে তা অত্যন্ত খারাপ ও অশুভ।এ ধরণের জমি নীচের ছবির মতো সংশোধন করে নেওয়া যেতে পারে।

ছবিঃ

এই চিত্রে ‘বিন্দু’ দেওয়া জমির অংশটি বাদ দিয়ে সেই জমির অংশ পাশের জমির মালিককে বিক্রি করে দেওয়া যেতে পারে।কারণ এই জমির উত্তর-পূর্বের কাটা অংশ ক্ষতিকর, কিন্তু পাশের জমির পক্ষে তা ক্ষতিকর নয়।এরকম ব্যবস্থা যদি না করা সম্ভব হয় তা হলে উত্তর-পূর্ব দিকে সম্ভব হলে কিছু জমি কিনে এই জমির কাটা অংশকে সমান করে নেওয়া যেতে পারে।যদি এরকম দুটি জমি পাওয়া যায়, যার একটায় ত্রুটি আছে, তা হলে দুটি জমিকে একসঙ্গে যুক্ত করে দিলে তার দোষ কেটে যায়।
গৌণ দোষ:

এই দোষ অনুবর্তী দোষ, যা অন্য দোষের ফলস্বরূপ।এ ধরণের ত্রুটি স্থান বদল করে ও তার প্রয়োগ পরিবর্তন করে সংশোধন করা যেতে পারে।বাস্তুশাস্ত্রে বিভিন্ন নীতি ও সমসাময়িক বাস্তু বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই সব সংশোধনের উপায় বলা হয়েছে।কিন্তু অভিজ্ঞ বাস্তুবিদ সার্বিক পরিস্থিতি দেখে তৎপর সিদ্ধান্তু নিয়ে থাকেন।

১।ত্রিকোণ জমি: ত্রিকোণ জমি শুভ নয়।এই জমিতে বাড়ি করার আগে তাকে সংশোধন করে নিতে হবে।এই ধরণের ত্রিকোণ জমির মধ্যে থেকে নিম্নের চিত্রের মতো আয়তকার বা চৌকো জমি বের করে নিয়ে তাতে বাড়ি তৈরি করতে হবে।এ ধরণের জমিতে দিকের কোনও গুরুত্ব নেই।

চিত্রঃ

২।বিষমাকৃতি জমি: এমন জমি বিভিন্ন দিকে বিষমাকৃতি হয়।এইরূপ জমিকে জমির অবস্থান ভেদে সংশোধন করে তবেই সেই সংশোধিত জমিতে বাড়ি তৈরি করা উচিত।এ ধরণের জমিতে চিত্রে যেভাবে বাড়ানো অংশ বাদ দিয়ে আয়তাকার জমির খণ্ড বের করা হয়েছে, তাতেই বাড়ি করা উচিত।

চিত্রঃ

জমির দক্ষিণ-পূর্ব এলাকা যদি বাড়ানো থাকে তা হলে তাকে আয়তাকারে কেটে নিয়ে তাতে বাড়ি করা উচিত।পাশের চিত্রে দেখুন।

চিত্রঃ

এ ধরণের জমি যাতে উত্তর-পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পশ্চিম দিক বাড়ানো আছে, সেখানে আয়তাকার বা চৌকো জমি কেটে নিয়ে বাড়ি করতে হবে।তবে এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ যেন ৯০ ডিগ্রি হয়।পাশের চিত্রে দেখুন।

চিত্রঃ

যে জমির উত্তর-পূর্ব দিক বাড়ানো আছে সেখানে বাড়ি করা যেতে পারে।এ রকম জমির সংশোধনের প্রয়োজন নেই।কারণ উত্তর-পূর্ব দিকে বাড়ানো জমি শুভ ফলদায়ী।পাশের চিত্রে দেখুন।

চিত্রঃ

উত্তর-পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বেড়ে থাকা জমির উভয় দিকই সংশোধন করে নিয়ে আয়তাকার বা চৌকো করে নিয়ে তাতে বাড়ি করতে হবে।যে কোনও দিকে যদি “বিষম আয়তাকার” জমি হয় তবে তার উপর ও নীচের কোণাচে অংশ দুটি জমির মাপ অনুযায়ী অল্প কিছু ছেড়ে অন্তত ৩ ফুট উচ্চতার পাঁচিল দিয়ে জমিকে চৌকো অথবা আয়তাকার করে নিতে হবে।

দর্পণের মাধ্যমে সংশোধন : যাহা আমরা / আমি করি না।বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবকাঠামোতে এতে বাস্তু সংশোধন হয় না।আমার পূর্ব পূরুষরা এইভাবে সংশোধন করতে বারণ করেছেন।তবে ইদানিং বাংলাদেশের বিভিন্ন বাস্তুতে গিয়ে দেখেছি অনেকেই দর্পণের সাহায্যে বাস্তু সংশোধন করে হতাশায় ভুগছেন।পাঠক পাঠিকাদের ভূল ভাঙাতে তবুও আমি ওয়েব সাইটে উল্লেখ করলাম দর্পনের প্রতিবিম্বে বিভিন্ন প্রকার প্রতিচ্ছবি দৃশ্য হয়।আবার গৃহ বাসীদের শূচী/ অশূচীর ব্যাপারটাও দেখতে হবে।দর্পনের মাধ্যমে বেশ কিছু অনাকাঙ্খিত জ্যামিতিক চিত্রের প্রতিবিম্ব ঘটে যাহা বাস্তুর জন্য চরম অশুভ।বাস্তুতে দর্পণ বা আয়নার যথেষ্ট গুরুত্ব আছে।বাড়ি বা ফ্ল্যাটের বাস্তুশক্তি বৃদ্ধির জন্য দর্পণের প্রয়োজন আছে।কোনও রকমের নিম্নস্থ জায়গায় শক্তিশালী সাধারণ মানের যে কোনও আয়না রাখা দরকার।তবে এ ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্কতার প্রয়োজন আছে।আয়না কোনও অবস্থাতেই যেন এরকম জায়গায় বসানো না হয় যাতে দক্ষিণ-পূর্ব অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক প্রতিফলিত হয়।শোওয়ার ঘর এবং শয্যার অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ।কারণ শোওয়ার ঘর এবং বিছানাতেই মানুষের জীবনের এক-তৃতীয়াংশ কেটে যায়।
যদি কোনও শোওয়ার ঘর ইংরেজী এল আকারের হয় এবং শোওয়ার খাট দেওয়ালের দিকে থাকে তবে সেটা ভুল।যদিও এল আকার হওয়ার দরুণ দিকগুলি ঠিকই আছে।

চিত্রঃ

খাটের বিপরীত দিকে আয়না টাঙিয়ে এইভাবে খাট রাখার জায়গা সংশোধন করা যেতে পারে।একটি ছোট আয়না এমনভাবে টাঙাতে হবে যাতে শুধু বিছানায় তার প্রতিবিম্ব দেখা যায়।গোটা দক্ষিণ দিকটা যেন প্রতিবিম্বিত না হয়।চিত্রে এরূপ দেখানো হয়েছে।

চিত্রঃ

রান্নাঘরে রান্নার সময় গৃহিণী বা রাঁধুনি এমনভাবে রান্নার জায়গায় দাঁড়াবেন বা বসবেন যাতে দরজার দিকে তাঁর পিঠ না থাকে।রান্নাঘরের সমস্ত দিক যথার্থ থাকলেও এই নিয়ম মানতেই হবে।এই অবস্থায় রান্নাঘরের এমন জায়গায় একটি দর্পন টাঙাতে হবে যাতে বাইরে থেকে কেউ রান্নাঘরে ঢুকলে তার প্রতিবিম্ব দেখা যাবে।এই ব্যবস্থা বিশেষ করে রেস্তরাঁ ও হোটেলের রান্নাঘরের পক্ষে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

চিত্রঃ

বাড়ির প্রধান দরজার সামনে যদি বড় স্তম্ভ বা বড় গাছ থাকে তা হলে পিরামিড-এর মাধ্যমে তা সংশোধন করা যেতে পারে।

চিত্রঃ

‘নাইফ টাইপ’ বা ছুরির মতো সার্বজনিক সোজা রাস্তার সামনে যদি বাড়ি থাকে সেটিও সংশোধন করা যেতে পারে ঝিনুকের মাধ্যমে।

চিত্রঃ

অফিস চেম্বারে ডেস্ক- টেবিল রাখার ব্যবস্থা ও সংশোধন:

অফিস চেম্বারের প্রবেশদ্বারের কোণাকুণি কোণটিই ডেস্ক বা টেবিল রাখার স্বাভাবিক স্থান।ওই কোণে বসে ঘরের মধ্যে যে আসছে তার মুখ অনায়াসে দেখতে পাওয়া যায়।প্রবেশ দ্বারের দিকে যে কোনও সোজা লাইনে বসা বা প্রবেশদ্বারকে পিছনে রেখে বসা এর কোনওটিই ঠিক নয়।বরং বসতে হবে উত্তর বা পূর্ব দিকে মুখ করে।এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত ডেস্ক বা টেবিল রাখতে হবে নীচের চিত্রানুযায়ী।

চিত্রঃ

ডেস্ক বা টেবিল রাখার বেঠিক ব্যবস্থাঃ

মনে রাখতে হবে উত্তর দিকে যদি মুখোমুখি বসা হয় তা হলে শুধু উত্তর দিকটাই পর্যাপ্ত নয়, বাস্তব সুফল পেতে হলে ডেস্ক বা টেবিল এবং বসার পরিবেশকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

চিত্রঃ

বিভিন্ন ধরণের জমি-বাড়ির বাস্তু অনুযায়ী সংশোধন:

জমির পাশে রাস্তা ও তার পরিবেশের কথা চিন্তা করে বাড়ির নকশা পরিকল্পনা করা উচিত।জমি যদি ঢাল হয় তা হলে সব দেওয়াল যেন সমান্তরায় না হয়।ছবিতে তার উদাহরণ দেওয়া হল।ছবিতে রাস্তার দ্বারের বাড়ি এক সমান্তরালে দাঁড়িয়ে আছে।এটা বাস্তুমতে ঠিক নয়।

চিত্রঃ

উপরের ছবিতে রাস্তার পাশ বরাবর সমন্তরাল বাড়ি তৈরি করা হয়নি।স্বাভাবিক নিয়মেই রাস্তা অনুসরণ না করে বাড়ি তৈরি করা হয়েছে।একাধিক বাড়ি বা হাউজিং কমপ্লেক্স পরিকল্পনা করার সময় উচ্চতা ও গঠন বিন্যাসের সামঞ্জস্য রক্ষার ওপর জোর দেওয়া দরকার।একই সারিতে একাধিক ভবন ও হাউজিং কমপ্লেক্স বিভিন্ন রকমের উচ্চতা, আকার ও বিন্যাসের হওয়া উচিত নয়।বাস্তু নিয়মে এটা সঠিক নয়।
নিম্নোক্ত ধরণের বাড়ি বা হাউজিং কমপ্লেক্স যথার্থ কারণ এর উচ্চতা একই রকমের।

চিত্রঃ

যে কোনও বাড়িতে তিনটি দরজা যদি একই লাইনে থাকে তা হলে সেটা খুবই খারাপ।এরকম তিন দরজাকে সংশোধন করতেই হবে।১নং দরজার মাথায় বাতাসে নড়ে এবং নূপুরের ঝনঝন শব্দকারী একটা ছোট সঙ্খ, ঝিনুক টাঙানো যেতে পারে অথবা তিনটি দরজার মধ্যে মাত্র একটি দরজার স্থান বদলে দরজার সংশোধন করে তা বাস’সম্মত করা যায়।যদি এই তিনটি দরজার মধ্যে একটি দরজাও সরানো সম্ভব না হয় তা হলে এর মধ্যে একটি দরজা তালাচাবি দিয়ে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে রাখতে হবে, সেটা ব্যবহার করা চলবে না।

চিত্রঃ

যদি একটি দরজার বিপরীতে একটি বড় জানালা থাকে এবং তাদের অনুপাত হয় ৩ ও ১ অথবা বেশি, তা হলে এর সংশোধন প্রয়োজন।অর্থাৎ জানালা দরজার চেয়ে তিনগুণ লম্বা-চওড়ায় বেশি।

চিত্রঃ

জানালার পাল্লা ভিতরের দিকে অথবা বাইরের দিকে কোনও বাধা ছাড়াই অনায়াসে যাতে খোলে তেমনভাবে তৈরি করতে হবে।যদি জানালা খোলার সময় অসমতল থাকে, তা হলে তা সংশোধন করে নিতে হবে।এ ক্ষেত্রে জানালায় টাসেল লাগানো পর্দা ঝুলিয়ে অথবা একটি তোরণ দিয়ে বা ঝোঁকানো ফ্রেম দিয়ে সংশোধন করতে হবে।

চিত্রঃ

ড্রইং রুম, লিভিং ও অফিসে কখনও নিচু ও ভারী বিমের তলায় বসা উচিত নয়।শুধু এই সব ঘরেই নয়, এরকম ভারী ও নিচুও বিমের তলায় শোওয়াও অনুচিত।

চিত্রঃ

এ ক্ষেত্রে সংশোধনের দুটি উপায় আছে।

(ক) ফল্‌স সিলিং তৈরি করে এবং (খ) বসার জায়গা পরিবর্তন করে।

* অফিস বা বাড়িতে যদি দুটি কোণ একটি জায়গায় এসে যথার্থভাবে না মেলে তা হলে ধারালো কোণে ৩/৯ টি ঝিনুক টাঙাতে হবে অথবা ওই কোণ বরাবর একটি লতাগাছ লাগিয়ে দিতে হবে।এটাই হল এ ধরণের কোণের বাস্তুমতে সংশোধন।

চিত্রঃ

যদি কোনও জমি অথবা বাড়ির আকার ইংরেজি বর্ণমালার “T” অক্ষরের মতো হয় তবে সেই জমি বা বাড়ির সামনে দু’পাশে দুটো বৃক্ষ রোপণ করে এই ত্রুটি সংশোধন করা যেতে পারে।নীচের চিত্রে দেখানো হলো।

চিত্রঃ

যদি লম্বাকার কোনও জমির শেষের দিকে কোনও বাড়ি, ঘর অথবা কারখানা থাকে তা হলে সামনের ফাঁকা জায়গাকে আলোর মাধ্যমে সামঞ্জস্যে আনা সম্ভব হয়।নীচের চিত্রে বোঝানো হয়েছে।

চিত্রঃ

নীচের বেখাপ্পা আকৃতির জমিটি বাড়ি তৈরির পক্ষে সম্পুর্ণ অনুপযুক্ত।কিসন্তু এই রকম আকৃতির জমিতে পার্ক, প্রমোদকানন বা রেস্তরাঁ, হোটেল করা যেতে পারে।এই সব কাজে জমিটিকে ব্যবহার করতে গেলে বাস্তুমতে ভূমিখণ্ডটিকে ঘিরে বিশেষ ধরণের আলোক-প্রাচীর করে একটি বাস-ব আয়তাকার বা চৌকো আকার দিতে হবে।মাঝখানে বিকল্প সংশোধন ব্যবস্থা হিসাবে একটি ফোয়ারার ব্যবস্থাও করা যেতে পারে।নীচের চিত্রে ১ ও ২ নং পরের পৃষ্ঠায় ৩ ও ৪ চিত্র দেখুন।
বিভিন্ন বাস্তুশাস্ত্র মতে যদি বাড়িঘর বাস্তশাস্ত্র অনুসারে তৈরি না করা হয় তা হলে ‘বাস্তুকৃত্য নামক কবচ যন্ত্রমকে বাড়ির উত্তর দিকে মাটিতে পুঁতে রাখতে হবে।তা হলে বাস্তুদোষ দূর হয়ে যাবে।শাস্ত্র বিধি অনুসারে ফ্ল্যাটবাড়িতে ‘বাস্তকৃত্য’ যন্ত্রম সোন, রুপো ও তামা দিয়ে তৈরি করে বাড়ির বা ফ্ল্যাটের উত্তর-পূর্ব কোণে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।এই বাস্তুকৃত্য যন্ত্রটি তৈরি করতে প্রায় তিন মাসের মতো সময় লাগে কারণ এটি শুধু বিশুদ্ধ বাস্তুমুহূর্তে তৈরি করা সম্ভব আর বাস্তুমুহূর্ত এক দিনে মাত্র সাতাইশ মিনিটের মতো পাওয়া যায়।এটি খুবই সময় সাপেক্ষ।এর ফলে মানুষ অবশ্যই সুখ, শান্তিসমৃদ্ধিশালী হয়ে বাসস্থানে বসবাস করতে পারবে।এক্ষেত্রে বাস্তুবিদকে সময় দিতে হবে তৎসঙ্গে নিজেকেও ধৈর্য্য অবলম্বন করতে হবে।

এই পদ্ধতি সম্ভব না হলে ঝিনুক বড় আকারের এবং ‘মঙ্গল যন্ত্রম, কোরআন শরীফের ‌পবিত্র আয়াত অন্যান্য ধর্মালম্বীদের তাঁদের ধর্মনুসারে পবিত্র চিহ্ন সোনা, রুপো অথবা তামা দিয়ে অন্ততপক্ষে ৬// ক্ম ৬// আকারে বানিয়ে শুভ মুহূর্তে স্থাপন বা পতিষ্ঠা করা যেতে পারে।এতে বাস’দোষ কাটে এবং সুখসমৃদ্ধি ফিরে আসে।

মঙ্গল যন্ত্র :

চিত্রঃ

স্কন্দ পুরাণে বলা হয়েছে যে মঙ্গলযন্ত্র, ধনদায়ক, ঋণনাশক, সর্ব রকম কাজের বাধা দূর করে, এবং ভূমির অশুভ থেকে রক্ষা করে।বাস্তুর শেষ কথা না হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা হয়েছে বিশিষ্ট গ্রন্থ ‘মানসার’-এ।দোষের চেয়ে গুণ যদি বেশি থাকে তা হলে ক্ষতি নেই, কিন্তু গুণের চেয়ে যদি দোষ বেশি হয়ে যায় তা হলে তাকে ত্রুটিপূর্ণ বাস্তু বলে গণ্য করতে হবে।আগেই বলা হয়েছে, ‘বাস্তুবিদ্যা’ কয়েক কোটি প্রাচীন।এ হল সুষ্ঠুভাবে উপলদ্ধি করার বিষয় এবং বর্তমান যুগে ভবন নির্মাণ, বসবাসের ব্যাপারে তাকে ঠিকভাবে গ্রহণ করা দরকার।এই সঙ্গে এ কথাও মনে রাখতে হবে যে ভবন ও ফ্ল্যাট নির্মাণের আধুনিক চাহিদার কথা ভাবতে গিয়ে আমরা বাস’র মৌল সিদ্ধান্ত গুলিকে যেন লঙ্ঘন না করি।

শ্রী যন্ত্র অমুসলিমদের জন্য, মুসলমানগণ কোন ক্রমেই এই যন্ত্রম ঘরে অর্থাৎ বাস্তুতে রাখবেন না।

চিত্রঃ

বেদের সূত্র অনুসারে অনন্ত বিশ্বের সৃষ্টির উৎস হল শক্তি।আর সমন্ত সাধনার মূল হল শক্তি উপাসনা।শক্তি উপাসনার চরমে পৌঁছতে গেলে লাগে শ্রীবিদ্যা।শ্রীযন্ত্র হল যন্ত্ররাজ। শ্রীযন্ত্রের পুজো করলে সর্বদোষ ক্ষয় হয় এবং পূণ্য লাভ হয়।

(Commenting: OFF)

বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে কলকারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি বাছাই করা উচিত।এ ছাড়া শুভ মুহূর্ত দেখে কলকারখানা ভবনের নির্মাণের কাজ শুরু করা বাঞ্ছনীয়।যদি কেউ নতুন কারখানা সস্থাপনে উদ্যোগী হন এবং এই সমস্ত নিয়ম যদি তিনি পালন করেন, তবে অল্প দিনের মধ্যেই কারখানার উন্নতি হবে।যে সব কারখানা সমস্যার মধ্যে দিয়ে চলছে সেখানেও যদি বাস্তুশাস্ত্রের নিয়ম অনুসারে বদল করা যায় তবে সেই সব কারখানাও সুষ্ঠুভাবে চলতে শুরু করবে।নীচে এই সম্পর্কে কিছু তথ্য সন্নিবেশিত হল।

যে জমি আর্দ্র, যার তলায় পানির স্তর বেশি নীচে নয়, এরকম উর্বরা জমি কলকারখানার পক্ষে অনুকুল।কলকারখানার জমি যেন পূর্ব বা উত্তর দিকে ঢালু হয়।জমির উত্তর-পূর্ব অংশ যেন কোনওভাবেই কাটা না হয়।নীচের চিত্রে উত্তর বা পূর্ব দিকের ঢাল বুঝানো হলো।

চিত্রঃ

উত্তর বা পূর্ব দিক্‌ যদি উঁচু থাকে তা হলে নির্মাণকার্য শুরুর আগে জমিকে সমান করে নেওয়া উচিত।কোনও মতেই যেন দক্ষিণ বা পশ্চিমে নিচু না থাকে।

কলকারখানায় প্রবেশ করার রাস্তা যদি উত্তর বা পূর্বদিকে থাকে তা হলে খুব ভাল।পশ্চিম দিকে রাস্তা মাঝারি ধরণের অনুকুল এবং দক্ষিণ দিকে রাস্তা আদৌ ভাল নয়।

উত্তর কিংবা পূর্ব দিকে কলকারখানার প্রধান ফটক হওয়া বাঞ্ছনীয়।এটা শুভ।এ ধরণের গেটযুক্ত কলকারখানায় মালিক ও শ্রমিক উভয়েই লাভবান হবেন।দক্ষিণ দিকে কলকারখানার প্রধান দরজা করা উচিত নয়, কারণ এই দিকগুলি হল দুর্বল, নিম্নস’।কলকারখানার প্রধান দরজার রং সবুজ অথবা নীল হওয়া বাঞ্ছনীয়।

কলকারখানার মধ্যে নলকুপ বা জলধার উত্তর-পূর্ব দিকে হওয়া উচিত।নলকুপ বা মাটির তলার জলাধার কখনওই দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব, দক্ষিণ-পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিকে হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।ওভারহেড ট্যাঙ্ক উত্তর-পূর্ব দিকে হবে না।বরং দক্ষিণ, পশ্চিম বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে হওয়া বাঞ্ছনীয়।

ফার্নেস, বয়লার, চিমনি, হিটার, জেনারেটর, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন ইত্যাদি দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রাখতে হবে।কারণ কলকারখানার এই দিকটা ‘আগ্নেয়’ এলাকা।কারখানার চিমনি দক্ষিণ-পূর্বের পূর্ব দিকে রাখা যেতে পারে।

জমির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে কারখানা করা উচিত।কলকারখানার ছাদ ও শেড ঢালু হবে পূর্ব দিকে অথবা উত্তর দিকে।মনে রাখতে হবে ছাদের চূড়া কলকারখানার বাড়ির পশ্চিম বা দক্ষিণ অংশে থাকবে।

কলকারখানা, শিল্প-প্রতিষ্ঠানের অফিস হবে সীমানা প্রাচীর থেকে কিছুটা দূরে উত্তর অথবা মধ্য-পূর্ব দিকে।ছবিতে মূল কারখানা ও প্রশাসনিক ভবনের অবস্থান দেখানো হল।

চিত্রঃ

কলকারখানা সংলগ্নলন বা সবুজ অংশ উত্তর অথবা পূর্ব দিকে তৈরি করতে হবে।লম্বা উঁচু গাছ কারখানার দক্ষিণ-পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিকে লাগাতে হবে।

প্রশাসনিক ভবনের উচ্চতা মূল কারখানা থেকে নিচু রাখতে হবে।ছবির মাধ্যমে তা বোঝানো হল।

ছবিঃ

কারখানার গুদাম বা ষ্টোর রুম থাকবে দক্ষিণ-পশ্চিম, দক্ষিণ অথবা পশ্চিম দিকে।কাঁচামাল, আধা তৈরি মাল এবং তৈরি মাল যথাক্রমে দক্ষিণ-পশ্চিম, মধ্য-পশ্চিম এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে মজুত রাখতে হবে।কাঁচামাল অথবা তৈরি মাল উত্তর-পূর্ব দিকে মজুত করা বাঞ্ছনীয় নয়।কারণ এই এলাকাটি অত্যন্ত হালকা ধরণের।মোটরগাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন উত্তর-পশ্চিমের উত্তর দিকে অথবা দক্ষিণ-পূর্বের পূর্ব দিকে রাখতে হবে।

হালকা ওজন যন্ত্র মধ্য-পশ্চিম অথবা মধ্য-উত্তর দিকে কারখানার ফটকের কাছে রাখা বাঞ্ছনীয়।বড় বিশেষ ভারী ওজন যন্ত্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের পশ্চিম দিকে রাখা উচিত।নীচের চিত্রে ওজন যন্ত্র স্থাপনের বিকল্প দেখানো হলো।

কারখানায় ইবাদতখানা, অভ্যর্থনা, অতিথি-আবাস ও পানীয় জলের ব্যবস্থা রাখতে হবে উত্তর-পূর্ব দিকে।কর্মী ও শ্রমিকদের শৌচাগার ও গোসলখানা থাকবে কারখানা বাড়ির দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে।কর্মচারী ও শ্রমিকদের ক্যান্টিন থাকবে কারখানার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে।বিভিন্ন দফতরের স্থান নীচে ছবির মাধ্যমে দেখানো হল।

চিত্রঃ

নিরাপত্তা রক্ষীদের অফিস প্রবেশ দ্বারের উপর নির্ভর করে।যদি কারখানার উত্তর-পূর্বের পূর্ব দিকে প্রধান দরজা তৈরি করা হয় তা হলে তার দক্ষিণ দিকে নিরাপত্তা বাহিনীর ঘর হবে।যদি প্রবেশদ্বার উত্তর-পূর্বের উত্তর দিকে হয় তা হলে নিরাপত্তা বাহিণীর ঘর উত্তর-পূর্বের পশ্চিম দিকে করা উচিত।নীচের ছবির মাধ্যমে বিকল্পসহ দেখানো হল।

চিত্রঃ

কারখানার মেশিনপত্র বসাবার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে সবচেয়ে ভারী মেশিনপত্র দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে বসে।কাঁচামাল রাখার জায়গা কারখানার ভিতরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে হওয়া উচিত।উৎপাদনে নিয়োজিত কাঁচামাল এবং প্রায় সম্পূর্ণ মাল রাখার জায়গা কারখানার ভিতরের পশ্চিমাঞ্চলে হওয়া উচিত।তৈরি মাল এবং সরবরাহ করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত মাল কারখানার উত্তর-পশ্চিম দিকে রাখা উচিত।

চিত্রঃ

একটি আদর্শ কারখানার নমুনা

চিত্রঃ

১। প্রধান দরজা, ছোট অথবা সহায়ক যন্ত্রপাতি, কর্মচারীদের থাকার বাসস্থান, ওজন যন্ত্র, পণ্য বিক্রির অফিস, ক্যাশ বা হিসাব পরীক্ষকের অফিস।
২। দরজা, প্রশাসনিক অফিস, টিউবওয়েল, ভূগর্ভস্থ জলাধার, মসজিদ, অতিথিশালা, অভ্যর্থনা গৃহ, উম্মুক্ত বাগান, চিকিৎসালয়।
৩। প্রধান দরজা, ছোট সহায়ক যন্ত্রপাতি, কারখানার অফিস, সময় নিয়ন্ত্রণ অফিস।
৪। ফার্নেস, বয়লার, চিমনি, জেনারেটর, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন, গাড়ি রাখার জায়গা, ক্যান্টিন, বড় গুদাম, অগ্নি সঞ্চালিত ওয়ার্কশপ, অ্যাসিড ট্যাঙ্ক।
৫। ভারী যন্ত্রপাতি, ওজন যন্ত্র, শৌচাগার বা স্নানাগার, কর্তার অফিস।
৬। ষ্টোর ও গুদাম, ভারী যন্ত্রপাতি ও সাজসরঞ্জাম, পরিত্যক্ত লোহা-লক্কড় রাখার স্থান।
৭। কারখানার কাঁচামাল ও ভারী ওজন যন্ত্র।
৮। কারখানার অফিস, মালপত্র রাখার গুদাম, হালকা যন্ত্রপাতি, সেলস্‌ অফিস।
৯। খালি জায়গা বা বাগান। কোনও ভারী যন্ত্রপাতি যেন এখানে বসানো না হয়।
(Commenting: OFF)