ভারতীয় বা বিশেষ করে ভারতের বাস্তুবিদরা বিভিন্ন বইতে লিখেছেন যে, অপরের গৃহে কালাতিপাত ও বসবাস সম্মানের পরিপন্থী।সে কারণে নিজ গৃহ নির্মাণ অবশ্যই জরুরী।ইসলামিক দিক দিয়ে চিন্তা করলে ঐ উক্তিটি আমরা কেউই গ্রহণ করব না।ভারতেও অপরের গৃহে মানুষ অর্থ প্রদান করে বসবাস করে থাকেন তদ্রুপ পৃথিবীর প্রতিটি দেশে।এমন কোন দেশ নেই যেখানে ভাড়াটিয়া নেই।যেহেতু বসবাসকারী নির্দিষ্ট ভাড়া প্রদান করে বসবাস করবেন সেহেতু সম্মানের পরিপন্থী কিভাবে হলো।তৎকালীন ভারতীয় মুনি-ঋষিগণ মানুষকে দাসত্বের আবদ্ধে রাখার জন্য এমন উক্তি করেছেন, যেটা আজ গোটা ভারতে বিদ্যমান।ব্রাহ্মণ, চক্রবর্তী, ক্ষত্রিয় সহ বহুপ্রকার গোত্রে তারা বিভক্ত আমরা মুসলমানরা বিভক্ত নই।আমাদের একটি মাত্র গোত্র সেটা হচ্ছে “মুহাম্মদী” গোত্র।আমরা এক আল্লাহ্র শুকরিয়া আদায় করি, আমাদের তীর্থস্থানও একটি, পবিত্র মক্কা, মদীনা।
পাঠকবৃন্দ এ ধরনের বাস্তুশাস্ত্রের বই পড়ে নিজে গোনাহ্গার হওয়ার চেষ্টা করবেন না।আমি শুরুতেই বলেছি পূর্বের সংখ্যাগুলিতে।আপনারা পড়েছেনও বটে যে বাস্তু, জ্যোতিষ, তন্ত্রশাস্ত্র, মুসলমান সমপ্রদায়ের বিজ্ঞানীরাই সর্ব প্রথম আবিস্কার করেন।তন্ + মন্ত্র = তন্ত্র অর্থাৎ সক্রিয় দেহে কোন আয়াত বা সূরা পড়লেই তন্ত্র হয়ে গেল।মন্ত্র বলতে কোন খারাপ আয়াত নয়, শব্দটি সংস্কৃতি ভাষা থেকে এসেছে পার্থক্য এখানেই।কথা লিখার উদ্দ্যেশ্য হলো ২০০০ সালের পর থেকে কিছু মানুষ আমার কাছে এসে দুঃখ প্রকাশ করলেন যে, অন্যের বাড়ীতে ভাড়া থাকি, আমার সম্মান আর রইলো না, সঙ্গে বইও দেখালেন যা ভারত থেকে প্রকাশিত (এমনিতে আমাদের মধ্যে বিদেশী কোন কিছু গ্রহণ করার ভাব প্রবণতা বেশী)।বিষয়টি তাদের বুঝিয়ে বলার পর তারা বুঝতে পারলেন।বাংলাদেশে অনেক সম্মানিত হিন্দু পরিবার মানুষের বাড়ীতে অর্থের বিনিময়ে ভাড়া থাকেন।তাই বলে তাঁদের কি কোন সম্মান নেই, ঠিক তদ্রুপ সকল ধর্মের মানুষের ক্ষেত্রে।ভারতীয় বাস্তুবিদদের মতামত গ্রহণ করলে প্রায় ৮৮% মানুষকে উম্মুক্ত আকাশের নীচে বসবাস করতে হবে।সুতরাং আপনাকে ভাবতে হবে আপনি সম্মানের সহিত ভাড়া থাকেন, যতদিন পর্যন্ত আপনি ভাড়া থাকবেন ততদিন পর্যন্ত ঐ নির্দিষ্ট ভাড়াকৃত অংশের আপনি মালিক পার্থক্য এইটুকুই যে আপনার স্থায়ী কোন দলিল পত্র নেই, কিন্তু অস্থায়ী তো আছে।
আপনারা যাতে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ না করেন এই জন্যই এটুকু আমার লিখা।
আদিকালের কোন উদাহরণ আমি দিব না।এর প্রয়োজনও নেই।জনসংখ্যার চাপে মানুষের আবাসস্থানের সমস্যা শুধু বাংলাদেশেই নয় পৃথিবীর সর্বত্র দেখা দিয়েছে।সামাজিক প্রাণী হিসাবে মানুষ তৈরী করে ফেলছে বহুতল আবাসিক ভবন যেটাকে আমরা এ্যাপার্টমেন্ট বলে থাকি।আমার জন্মস্থান ঢাকার মতিঝিলে, পৈত্রিক বাড়ী কমলাপুর জসিমউদ্দিন রোডে, আমরা সে সময় যে মাঠে ক্রিকেট, ফুটবল ইত্যাদি খেলা খেলতাম সেখানে এখন রেলওয়ে ভবন, সি.এস.ডি গোডাউন খোদ আমাদের বাড়ী ও মহল্লার বাড়ী বহুতল বিশিষ্ট যা ছোটবেলায় দেখিনি।জমিতেও টান পড়েছে, ঢাকা সহ বিভিন্ন মহানগরীর মানুষ বসবাসের জন্য ধানের ক্ষেত এমনিক ডোবা জমিও বেছে নিয়েছে।পত্রিকার বিজ্ঞাপনে অন্তত তাই প্রমাণ করে।এ্যাপার্টমেন্টের দিকেও মানুষের ঝোঁক প্রবল, মানুষ তার সাধ্যের মধ্যে বসবাসযোগ্য এ্যাপার্টমেন্টও পাচ্ছে।দূষণের বিষয়ও ভাবতে হবে, যত উপরে উঠা যাবে ততই দূষণ কম, এটাও বহুতল বাড়ীর আরেক আকর্ষণ।ফ্ল্যাটবাড়ী বা এ্যাপার্টমেন্টের নকসা যিনি তৈরী করবেন, সেই আর্কিটেক্টারকে তাঁর বিশেষ কর্মযোগ্য তার পরিচয় দিতে হবে।আর্কিটেক্ট প্রকৌশলীরও বিশেষ জ্ঞান ও বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে বাস্তুশাস্ত্রের উপর।কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় যে আমাদের দেশের নক্সা প্রণয়কারীর এই বিষয়ে অভিজ্ঞতার কোন প্রমাণ আমি এখনও পেলাম না যদি পেতাম তবে আমাকে নির্মিত বাস্তু সংশোধন করতে হতো না।বাংলাদেশ সরকারের এই বিষয়ে তেমন কোন নীতিমালা এখনও নির্ধারণ হয়নি বিশেষ করে রাজউক, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসিটির কেউই এই বিষয়ে কোন প্রকার পদক্ষেপ আজও গ্রহণ করেনি।
বহুতল ভবনই হোক বা ছোট ভবনই হোক নক্সা প্রণয়নকারীর অন্তরের শৃংক্ষলার বাহিরের শৃঙ্ক্ষলার অভিব্যক্ত হতে হবে।তার ফলে তাঁদের সংস্পর্শে যাঁরা আসেন বা যে বস্তু আসে তারা সেই বস্তু উক্ত শৃঙ্ক্ষলা দ্বারা প্রবাহিত হয়।বস’ও সেই অনুসারে রূপ নেয়।একটি ভবন যা পারিপার্শ্বিক অবস্থাও অন্তরের শৃঙ্ক্ষলার সংবেদনশীল বোধের ভিতর দিয়ে গভীর চিন্তার মাধ্যমে নির্মাণ করা উচিত বাস্তুশাস্ত্রানুযায়ী।বসবাসকারী গৃহস্থ্য সেখানে আজীবন বসবাস করে উপকৃত হতে পারবেন।প্রাকৃতিক নিয়মের বিশুদ্ধতার সঙ্গে এক সুরে বেঁধে নেয়া অত্যন্ত প্রয়োজন, কারণ এর দ্বারা সৃষ্টির পথ তৈরী হয় এবং মানুষের চরম আনন্দ ও সুখময় জীবন প্রদান করে।এটা হলো শাস্ত্রসম্মতভাবে সর্বপ্রকার শিল্পের ভিত্তি।পরিশ্রম সাপেক্ষে বহুতল ভবন বা রাস্তাই হোক বাস্তু পরিকল্পনাকারীর পক্ষে গভীর মনোযোগ সম্মাত হওয়া এবং প্রাকৃতিক নিয়মের আন্তরিক উপনদী দ্বারা নক্সা প্রস্তুত করা বিশেষ প্রয়োজন যাঁরা বহুতল ভবন নির্মাণ করবেন তারা আর্কিটেক্ট প্রকৌশলীর যে বিষয় গুলি দেখবেন তা নিম্নরূপঃ-
যাঁরা বহুতল ভবন নির্মাণ করবেন তারা আর্কিটেক্ট প্রকৌশলীর যে বিষয় গুলি দেখবেন তা নিম্নরূপঃ-
১।
অন্তরের রূপঃ দৃঢ়তা, শৃঙ্ক্ষলা, সৃজনশক্তি সবই ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার অংশ।
২।
বাহিরে অভিব্যক্তিঃ বস্তু তাত্ত্বিক ধারণা বা স্পর্শযোগ্য হতে পারে, যা রূপকারের সৃষ্টির উদ্যোগের অভিব্যক্তি।সৃষ্টবস্তু ও ব্যবহারকারীর মধ্যে সামঞ্জস্য বাস্তুশাস্ত্র মতে নির্ধারণ করা চাই।বস্তুটির মনোরম রূপের ব্যবহারকারীর মধ্যে প্রীতিকর অনুভূতির উদ্রেক করা চাই।মূল অঙ্গীকার হলো আমাদের প্রত্যেককে পছন্দমত (বাস্তু শাস্ত্রানুযায়ী) আত্মপ্রকাশের ভঙ্গিময় অন্তরের গভীর প্রশান্তি ও শৃঙ্খলা আনয়ন করতে হবে।কারণ যাঁরা নির্মিত স্থান দর্শন করেন, তাঁরা অনুপ্রেরণা পেয়ে থাকেন এবং সুন্দর জিনিস উপহার দেয়ার অর্থ হলো আত্মোন্নতি ও আত্মজ্ঞান লাভ।
৩।
কার্যপ্রণালীঃ সৌন্দর্য্য বিজ্ঞান, এবং বাস্তুস্থানের আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি তথা বাস্তুস্থানের প্রতি প্রতিক্রিয়ার উপলদ্ধি।
৪।
নক্সা প্রস্তুতকারকঃ বসবাসকারী, মুক্ত স্থান এবং গৃহ, তথা গঠণ ও আকারের কেন্দ্রস্থান হৃদয়ঙ্গম করা।
৫।
পারিপার্শ্বিক নৈসর্গিক অবস্থা এবং প্রতিরূপ।
৬।
নির্দিষ্ট দিকে আবর্তনের তাৎপর্য।
৭।
নির্মিত ভবনের আকার, বর্ণ ও আয়তনের গুরুত্ব।
৮।
মানুষের জীবনের সৃষ্টিতত্ত্বের (Cosmolory) গুরুত্ব।
বাস্তুশাস্ত্র আইন মেনে দেয়াল আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা, প্রধান প্রবেশ দ্বার বা মেইন গেট, গৃহ প্রবেশের প্রধান দরজা বাথরুম, রান্নাঘর ও অন্যান্য ঘর তৈরী করতে হবে।পৃথক বা স্বাধীন বাড়ীর নক্সার তুলনায়, বহুতল ভবনের নক্সা রাজউক কর্তৃপক্ষের নিয়মকানুন মেনে এবং সর্ব বিষয়ে চিন্তা করে বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ীর নক্সা প্রস্তুত করা কষ্ট সাধ্য ও সময় সাপেক্ষ।যেহেতু নক্সা প্রস্তুতকারী প্রকৌশলী নকসার বৈধতার অনুমতি পাবেন, যুক্তির মাধ্যমে সেহেতু এটা কোন বিশেষ কষ্ট সাধ্য ব্যাপার নয়।একজন স্থাপত্য প্রকৌশলীর ও বহুতল বা একতল ভবন নির্মাতার সঠিক যোগ্যতা পরিমাপ করা যাবে তখনই যখন তিনি প্রতিটি ফ্ল্যাট বাস্তুশাস্ত্রানুযায়ী নির্মাণ করবেন।ভবনের রুম, বাথরুম, রান্নাঘর, ইবাদতের রুম, ফ্রিজ, টিভি, বৈদ্যুতিক যাবতীয় বস্তু আলমারি স্থাপনের স্থান সব কিছু এমন ভাবে বাস্তুশাস্ত্র সম্মতভাবে তৈরী করবেন যাতে করে বসবাসকারী সর্বদিক থেকে উপকৃত হতে পারেন।এটাই স্থাপত্য প্রকৌশলীর গৌরবময় কৃতিত্ব, আর্থিক লাভের সংগে সংগে এই কৃতিত্বও উল্লেখযোগ্য প্রণিধান।
বহুতল ফ্ল্যাটবাড়ী কিভাবে বাস্তুশাস্ত্রানুযায়ী নির্মাণ করতে হবে এবার সে বিষয়ে বেশ কিছু বিধান বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে লিপিবদ্ধ করলাম।লিখিত বিধান অন্য দেশে প্রয়োগ করবেন নাPlease, এতে ক্ষতির সম্ভাবনা বিদ্যমান।
জমিঃ বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য জমির প্রয়োজন তো হবে তবে জমিটি যেন জলাশয় ভরাটকৃত জমি না হয়, (কমপক্ষে ১৮ বৎসর) আঠারো বৎসর পূর্বে জলাশয় ভরাটকৃত জমি হলে তেমন বিশেষ সমস্যা নেই।
জমি আয়তাকার সর্বোত্তম, নয়তো বর্গাকার ।
জমিটি দক্ষিণ ও পশ্চিম দিক উঁচু থাকতে হবে, পূর্ব ও উত্তর দিক হবে নীচু।এ রকম পরিস্থিতির জমি আমাদের নগরে পাওয়া যায় না তাই ভবন নির্মাণে জমিকে এইভাবে উপযোগী করে নিতে হবে। এতে করে বৃষ্টির পানি ঢালুর দিকেই প্রবাহিত হবে যা আমাদের জন্য শুভ।
সেই জমিই সর্বোত্তম যার চার দিকে রাস্তা আছে, ভবন নির্মাণের জমির উত্তর ও পূর্ব দিকে রাস্তা থাকলে উত্তম জমি হিসাবে বিবেচিত এবং এধরণের জমিতে ভবনের প্রধান গেট – বাস্তুশাস্ত্র মতে উত্তর ও পূর্ব দিকে নির্মাণ করতে হবে।
একটা বিষয়ে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে যে, যে জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে সে জমির দিক ও কোণ যেন সঠিক হয় অর্থাৎ উত্তর যেন সঠিক উত্তরই হয়।তবে ০৭০ বাঁ, ডান দিক এদিক ওদিক হলে তা ধর্তব্যের আওতাভূক্ত নয়।ঢাকাতে, সিলেটে- ০৫০, চট্টগ্রামে- ০৩০ খুলনায়- ১০০ , রাজশাহীতে- ০৮০, বরিশালে- ০১ ডিগ্রীও নয়।দিক নির্ণয় যন্ত্র দ্বারা দিক নির্ণয় করে নিবেন।উল্লেখিত ডিগ্রীগত পরিমাপের বেশী পরিমাণ হলে উক্ত জমি, ভবন, ফ্ল্যাট ক্রয় করবেন না।যদিও করে থাকেন তবে সংশোধনে বহুব্যয় করতে হবে।পক্ষান্তরে উক্ত আবাসস্থলে, বাণিজ্যস্থলে বহুবিধ সমস্যা দেখা যায় যার মিমাংসা করতে বহুশ্রম ব্যয় করতে হয়।পূত্র-কন্যাদের বিবাহ বিলম্ব সহ বহুশুভ কর্মে ব্যাঘাত ঘটে।
যে কোন জমির বায়ু কোণ ৯০০ থাকলে ভাল, উত্তর-পূর্ব দিকে সামান্য প্রসারিত থাকলে উত্তম।দক্ষিণ ও পশ্চিমের তুলনায় উত্তর ও পূর্ব দিকে ভবন নির্মাণের সময় জমির অংশ বেশী জায়গা রাখতে হবে।
বাস’শাস্ত্রানুযায়ী উত্তর-পূর্ব অর্থাৎ ঈশান দিক ও কোণ হলো শীতল স্থান ফলশ্রুতিতে আন্ডার গ্রাউন্ড পানির রিজার্ভ ট্যাংক উক্ত দিকেই নির্মাণ করতে হবে।গভীর নলকূপ ও উক্ত দিক ও কোণে থাকবে।
ওভার হেড ট্যাংক তৈরী করতে হবে নৈঋত কোণের পশ্চিমে অথবা কোণ বারাবর।অন্যদিকে কিছুতেই করা যাবে না।
ভবণের নৈঋত কোণ বা দিকে সিঁড়ি ও লিফ্ট বসবে।স্থানাভাবে দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে সিঁড়ি ও লিফ্ট নির্মাণ করা যাবে। কিন্তুকোন ক্রমেই উত্তর, পূর্ব, ঈশাণ কোণে নয়।
আধুনিক সময়ে বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ীতে বৈদ্যুতিক জেনারেটর স্থাপন করা হয়। উক্ত জেনারেটর অগ্নি কোণে স্থাপন করা সর্বোত্তম।সম্ভব না হলে দক্ষিণ পূর্ব দিকের দক্ষিণ ঘেষে পূর্ব দিকে স্থাপন করতে হবে।
ভবনের সীমানা দেয়াল দক্ষিণ ও পশ্চিম দিক উঁচু হবে।প্লাষ্টারও মোটা হবে।উত্তর, পূর্ব দিকের সীমানা দেয়াল নীচু হবে।
গাড়ী রাখার গ্যারেজ থাকবে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব দিকে (যদি বেসমেন্ট করা)।যদি বেসমেন্ট না করা হয় তবে অগ্নি কোণে থাকবে।বেসমেন্ট করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে নৈঋত, পশ্চিম, দক্ষিণ দিকে বেসমেন্ট করা যাবে না।
বর্তমান সময়ে বহুতল আবাসিক বসবাসের ভবনে দোকান বা অফিস নির্মানের হিড়িক পড়েছে, যা বাস’শাস্ত্রের বিপরীতে।এতে করে হয় দোকানী লাভবান হয়ে যায়, নতুবা গৃহস্থ্য।এরূপ বহুতল ভবন বসবাসের জন্যনিম্নতম উপযোগী।
বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ী, ছোট বাড়ীর মেইন গেট ও গৃহ প্রবেশের মূখ্য দ্বার কোন দিকে কিভাবে রাখবেন তা চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হলো।
বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ী, ছোট বাড়ীর মেইন গেট ও গৃহ প্রবেশের মূখ্য দ্বার কোন দিকে কিভাবে রাখবেন তা চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হলো।
যাঁরা বহুতল ভবন নির্মাণ করবেন তারা আর্কিটেক্ট প্রকৌশলীর যে বিষয় গুলি দেখবেন তা নিম্নরূপঃ-
যাঁরা বহুতল ভবন নির্মাণ করবেন তারা আর্কিটেক্ট প্রকৌশলীর যে বিষয় গুলি দেখবেন তা নিম্নরূপঃ-
অন্তরের রূপঃ দৃঢ়তা, শৃঙ্ক্ষলা, সৃজনশক্তি সবই ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার অংশ।
বাহিরে অভিব্যক্তিঃ বস্তু তাত্ত্বিক ধারণা বা স্পর্শযোগ্য হতে পারে, যা রূপকারের সৃষ্টির উদ্যোগের অভিব্যক্তি। সৃষ্টবস্তু ও ব্যবহারকারীর মধ্যে সামঞ্জস্য বাস্তুশাস্ত্র মতে নির্ধারণ করা চাই। বস্তুটির মনোরম রূপের ব্যবহারকারীর মধ্যে প্রীতিকর অনুভূতির উদ্রেক করা চাই। মূল অঙ্গীকার হলো আমাদের প্রত্যেককে পছন্দমত (বাস্তু শাস্ত্রানুযায়ী) আত্মপ্রকাশের ভঙ্গিময় অন্তরের গভীর প্রশান্তি ও শৃঙ্খলা আনয়ন করতে হবে। কারণ যাঁরা নির্মিত স্থান দর্শন করেন, তাঁরা অনুপ্রেরণা পেয়ে থাকেন এবং সুন্দর জিনিস উপহার দেয়ার অর্থ হলো আত্মোন্নতি ও আত্মজ্ঞান লাভ।
কার্যপ্রণালীঃ সৌন্দর্য্য বিজ্ঞান, এবং বাস্তুস্থানের আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি তথা বাস্তুস্থানের প্রতি প্রতিক্রিয়ার উপলদ্ধি।
নক্সা প্রস্তুতকারকঃ বসবাসকারী, মুক্ত স্থান এবং গৃহ, তথা গঠণ ও আকারের কেন্দ্রস্থান হৃদয়ঙ্গম করা।
পারিপার্শ্বিক নৈসর্গিক অবস্থা এবং প্রতিরূপ।
নির্দিষ্ট দিকে আবর্তনের তাৎপর্য।
নির্মিত ভবনের আকার, বর্ণ ও আয়তনের গুরুত্ব।
মানুষের জীবনের সৃষ্টিতত্ত্বের (Cosmolory) গুরুত্ব।
বাস্তুশাস্ত্র আইন মেনে দেয়াল আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা, প্রধান প্রবেশ দ্বার বা মেইন গেট, গৃহ প্রবেশের প্রধান দরজা বাথরুম, রান্নাঘর ও অন্যান্য ঘর তৈরী করতে হবে। পৃথক বা স্বাধীন বাড়ীর নক্সার তুলনায়, বহুতল ভবনের নক্সা রাজউক কর্তৃপক্ষের নিয়মকানুন মেনে এবং সর্ব বিষয়ে চিন্তা করে বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ীর নক্সা প্রস্তুত করা কষ্ট সাধ্য ও সময় সাপেক্ষ। যেহেতু নক্সা প্রস্তুতকারী প্রকৌশলী নকসার বৈধতার অনুমতি পাবেন, যুক্তির মাধ্যমে সেহেতু এটা কোন বিশেষ কষ্ট সাধ্য ব্যাপার নয়। একজন স্থাপত্য প্রকৌশলীর ও বহুতল বা একতল ভবন নির্মাতার সঠিক যোগ্যতা পরিমাপ করা যাবে তখনই যখন তিনি প্রতিটি ফ্ল্যাট বাস্তুশাস্ত্রানুযায়ী নির্মাণ করবেন। ভবনের রুম, বাথরুম, রান্নাঘর, ইবাদতের রুম, ফ্রিজ, টিভি, বৈদ্যুতিক যাবতীয় বস্তু আলমারি স্থাপনের স্থান সব কিছু এমন ভাবে বাস্তুশাস্ত্র সম্মতভাবে তৈরী করবেন যাতে করে বসবাসকারী সর্বদিক থেকে উপকৃত হতে পারেন। এটাই স্থাপত্য প্রকৌশলীর গৌরবময় কৃতিত্ব, আর্থিক লাভের সংগে সংগে এই কৃতিত্বও উল্লেখযোগ্য প্রণিধান।
বহুতল ফ্ল্যাটবাড়ী কিভাবে বাস্তুশাস্ত্রানুযায়ী নির্মাণ করতে হবে এবার সে বিষয়ে বেশ কিছু বিধান বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে লিপিবদ্ধ করলাম। লিখিত বিধান অন্য দেশে প্রয়োগ করবেন না Please, এতে ক্ষতির সম্ভাবনা বিদ্যমান।
জমিঃ বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য জমির প্রয়োজন তো হবে তবে জমিটি যেন জলাশয় ভরাটকৃত জমি না হয়, (কমপক্ষে ১৮ বৎসর) আঠারো বৎসর পূর্বে জলাশয় ভরাটকৃত জমি হলে তেমন বিশেষ সমস্যা নেই।
জমি আয়তাকার সর্বোত্তম, নয়তো বর্গাকার ।
জমিটি দক্ষিণ ও পশ্চিম দিক উঁচু থাকতে হবে, পূর্ব ও উত্তর দিক হবে নীচু। এ রকম পরিস্থিতির জমি আমাদের নগরে পাওয়া যায় না তাই ভবন নির্মাণে জমিকে এইভাবে উপযোগী করে নিতে হবে। এতে করে বৃষ্টির পানি ঢালুর দিকেই প্রবাহিত হবে যা আমাদের জন্য শুভ।
সেই জমিই সর্বোত্তম যার চার দিকে রাস্তা আছে, ভবন নির্মাণের জমির উত্তর ও পূর্ব দিকে রাস্তা থাকলে উত্তম জমি হিসাবে বিবেচিত এবং এধরণের জমিতে ভবনের প্রধান গেট – বাস্তুশাস্ত্র মতে উত্তর ও পূর্ব দিকে নির্মাণ করতে হবে।
একটা বিষয়ে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে যে, যে জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে সে জমির দিক ও কোণ যেন সঠিক হয় অর্থাৎ উত্তর যেন সঠিক উত্তরই হয়। তবে ০৭০ বাঁ, ডান দিক এদিক ওদিক হলে তা ধর্তব্যের আওতাভূক্ত নয়। ঢাকাতে, সিলেটে- ০৫০, চট্টগ্রামে- ০৩০ খুলনায়- ১০০ , রাজশাহীতে- ০৮০, বরিশালে- ০১ ডিগ্রীও নয়। দিক নির্ণয় যন্ত্র দ্বারা দিক নির্ণয় করে নিবেন। উল্লেখিত ডিগ্রীগত পরিমাপের বেশী পরিমাণ হলে উক্ত জমি, ভবন, ফ্ল্যাট ক্রয় করবেন না। যদিও করে থাকেন তবে সংশোধনে বহুব্যয় করতে হবে। পক্ষান্তরে উক্ত আবাসস্থলে, বাণিজ্যস্থলে বহুবিধ সমস্যা দেখা যায় যার মিমাংসা করতে বহুশ্রম ব্যয় করতে হয়। পূত্র-কন্যাদের বিবাহ বিলম্ব সহ বহুশুভ কর্মে ব্যাঘাত ঘটে।
যে কোন জমির বায়ু কোণ ৯০০ থাকলে ভাল, উত্তর-পূর্ব দিকে সামান্য প্রসারিত থাকলে উত্তম। দক্ষিণ ও পশ্চিমের তুলনায় উত্তর ও পূর্ব দিকে ভবন নির্মাণের সময় জমির অংশ বেশী জায়গা রাখতে হবে।
বাস’শাস্ত্রানুযায়ী উত্তর-পূর্ব অর্থাৎ ঈশান দিক ও কোণ হলো শীতল স্থান ফলশ্রুতিতে আন্ডার গ্রাউন্ড পানির রিজার্ভ ট্যাংক উক্ত দিকেই নির্মাণ করতে হবে। গভীর নলকূপ ও উক্ত দিক ও কোণে থাকবে।
ওভার হেড ট্যাংক তৈরী করতে হবে নৈঋত কোণের পশ্চিমে অথবা কোণ বারাবর। অন্যদিকে কিছুতেই করা যাবে না।
ভবণের নৈঋত কোণ বা দিকে সিঁড়ি ও লিফ্ট বসবে। স্থানাভাবে দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে সিঁড়ি ও লিফ্ট নির্মাণ করা যাবে। কিন্তু কোন ক্রমেই উত্তর, পূর্ব, ঈশাণ কোণে নয়।
আধুনিক সময়ে বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ীতে বৈদ্যুতিক জেনারেটর স্থাপন করা হয়। উক্ত জেনারেটর অগ্নি কোণে স্থাপন করা সর্বোত্তম। সম্ভব না হলে দক্ষিণ পূর্ব দিকের দক্ষিণ ঘেষে পূর্ব দিকে স্থাপন করতে হবে।
ভবনের সীমানা দেয়াল দক্ষিণ ও পশ্চিম দিক উঁচু হবে। প্লাষ্টারও মোটা হবে। উত্তর, পূর্ব দিকের সীমানা দেয়াল নীচু হবে।
গাড়ী রাখার গ্যারেজ থাকবে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব দিকে (যদি বেসমেন্ট করা)। যদি বেসমেন্ট না করা হয় তবে অগ্নি কোণে থাকবে। বেসমেন্ট করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে নৈঋত, পশ্চিম, দক্ষিণ দিকে বেসমেন্ট করা যাবে না।
বর্তমান সময়ে বহুতল আবাসিক বসবাসের ভবনে দোকান বা অফিস নির্মানের হিড়িক পড়েছে, যা বাস’শাস্ত্রের বিপরীতে। এতে করে হয় দোকানী লাভবান হয়ে যায়, নতুবা গৃহস্থ্য। এরূপ বহুতল ভবন বসবাসের জন্য নিম্নতম উপযোগী।
বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ী, ছোট বাড়ীর মেইন গেট ও গৃহ প্রবেশের মূখ্য দ্বার কোন দিকে কিভাবে রাখবেন তা চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হলো।
চিত্র:
|
সবুজ দাগ সমূহ টিক মার্ক মেইন গেট, স্বর্ণালী দাগগুলি গৃহ প্রবেশের মূখ্যদ্বার করতে হবে।জমির দৈর্ঘ্য প্রস্থ মেপে দ্বার প্রকরণ ঠিক করবেন।আমাদের এ কথা ভুললে চলবে না, যে মেইন গেট এবং মূখ্যদ্বার যদি আমরা সঠিক স্থানে স্থপন করতে না পারি তবে উক্ত ভবন বা বাড়ীতে ঋণাত্বক শক্তি বেশী থাকবে এবং একের পর এক দুঃখ দূর্দশা আমাদেরকে ভোগ করতে হবে।
পক্ষান্তরে আমরা যদি চিত্রানুযায়ী বাস্তুশাস্ত্র সম্মতভাবে প্রধান গেট ও ফ্ল্যাটে প্রবেশের মূখ্যদ্বার স্থাপন করি তবে ধণাত্বক শক্তির সক্রিয় প্রভাব আমাদের বা বসবাসকারীদের উপর বর্ত্তাবে এবং গৃহস্থ্যের ঘর ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ থাকবে যদি আভ্যন্তরীণ সকল নির্মাণ শাস্ত্রসম্মতভাবে হয় তবে।এই লেখা পড়ে কোন প্রকার ব্যঙ্গাত্বক, বা বিরূপ মন্তব্য করার পূর্বে নিজ নিজ অবস্থান অনুযায়ী, নিজেকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ রেখে চিন্তা করুন- মেইন গেট ও মূখ্য প্রবেশ দ্বার এবং আপনার পারিবারিক অবস্থা, দেখবেন আমি যা লিখলাম তা এক বিন্দুও প্রমাদযুক্ত নয়।
গৃহ প্রবেশের মূখ্যদ্বার খুব শক্ত, পুরু ও বাস্তুশাস্ত্রানুযায়ী শুভ বৃক্ষের নির্মাণ করা উচিত, গৃহের ভিতরের সকল দরজা সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া চাই।দরজা চৌকাঠ ও একই জাতীয় কাঠের হতে হবে।গৃহাভান্তরে দরজা জোড় সংখ্যার হতে হবে।প্রধান দরজার দৈর্ঘ্য যেন প্রস্থ্যের দ্বিগুণের বেশী হয়।প্রধান দরজা ভিতর থেকে ডান দিকে খুলবে অর্থাৎ Clockwise দরজা খোলা ও বন্ধের সময় যেন অতিরিক্ত শব্দ না হয়।শব্দহীন দরজা সর্বোত্তম।Please ধুড়-ম ধাড়-ম করে দরজা লাগাবেন না।
যতখানি সম্ভব, ঈশাণ, নৈঋত কোণ রান্নাঘরের জন্য অবশ্যই বর্জন করবেন।রান্নাঘর দক্ষিণ পূর্ব দিকের পূর্ব দক্ষিণ দিকে, অগ্নি কোণে সর্বোত্তম।এরূপ স্থান পাওয়া না গেলে বায়ু কোণ মন্দের ভাল।যিনি রান্না করবেন তাঁর মুখ থাকবে পূর্ব দিকে।রান্না ঘরে এডজাস্ট পাখা বসালে তা বসাতে হবে পূর্বে বা দক্ষিণে।পশ্চিম, দক্ষিণ দিকে আসবাব পত্র রাখার জন্য তাক তৈরী করে নিবেন।ভারী জিনিস নৈঋত কোণে রাখুন।
গোছলখানা বা বাথরুম পূর্ব দিকে নির্মাণ করতে হবে।ঈশাণ ও নৈঋত কোণে নির্মাণ করা যাবে না। গোছল করার সময় মুখ যেনথাকে পূর্ব দিকে, বেসিন বসালে এমন ভাবে বসাতে হবে যাতে করে দর্পন থাকে পূর্ব অথবা দক্ষিণ দিকে।গোছলখানা, শৌচাগার কোনক্রমেই রান্নাঘর, খাওয়ার ঘর সংযুক্ত ও বিপরীত দিকে যেন না থাকে।শৌচাগার বা বাথরুম থেকে খাওয়ার ঘর যেন সরাসরি দেখা না যায়।গোছল খানার পানি ঈশান কোন দিয়েই নির্গত হবে।শৌচাগার যদি গোছলখানার ভিতরেই হয় তবে প্যান বাথরুমের মেঝে থেকে আড়াই ফিট উঁচুতে বসাতে হবে।কমোড তো এমনিতেই উঁচু।শৌচাগারের দরজা প্লাষ্টিক বা এ জাতীয় ধাতব পদার্থ দ্বারা তৈরী করে বসালে চলবে।তবে ধাতব দরজা পরিত্যাজ্য।
খাওয়ার জায়গা যেটাকে আমরা ডাইনিং রুম বা হল বলি, সেটা থাকবে পশ্চিম দিকে, খাওয়ার টেবিল এমন ভাবে বসাতে হবে যাতে করে খাওয়ার সময় মুখ থাকে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে।খাওয়ার স্পেস থেকে শৌচাগার, বাথরুম যেন দেখা না যায়।
প্রধান শোবার ঘর নৈঋত বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে নির্মাণ করতে হবে এবং এই রুমটি হবে কর্তা-কর্ত্রীর জন্য।অন্যান্য শোবার ঘর, বায়ু কোণে, উত্তর ও পূর্ব দিকে হবে। সব সময় শোবার সময় মাথা থাকবে দক্ষিণ দিকে।
বাংলাদেশের দক্ষিণে সাগর বিদ্যমান।তাই বারান্দা, ব্যলকনী দক্ষিণ দিকে নির্মাণ করা যাবে না। উত্তর, পূর্ব এবং ঈশাণ কোনেই নির্মাণ করতে হবে।বায়ু কোন মন্দের ভাল।
বহুতল ভবনের ছাদে যদি কোন কক্ষ নির্মাণ করা প্রয়োজন বোধ করেন তবে তা দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে, অথবা দক্ষিণে পশ্চিমে করবেন।অন্য দিক ও কোণে নির্মাণ করবেন না।
ঈশান কোণ, উত্তর, পূর্বদিকে জমি ফাঁকা রাখতে হবে অপেক্ষাকৃত অন্যান্য দিক ও কোণের তুলনায়।কিন্তু এত বহুতল ফ্ল্যাট বাসী বিশেষ কাজে লাগাতে পারবেন না, যদি আপনি এই ফাঁকা ও খোলা জায়গায় কিছু করতে চান, তবে ঈশাণ কোণে সর্বোত্তম, পানির ফোয়ারা করা, যদি রঙ্গিন পানির ফোয়ারা করেন তবে রঙ্গীন পানি যেন সোনালী বা হলুদ বর্ণের হয়।আবার সুন্দর ঘাসের লনও করতে পারেন।কিন্তু তুলসী গাছ ব্যতীত অন্যান্য গাছ লাগানো যাবে না।আপনি আপনার ফ্ল্যাট-এর অথবা বাড়ীর দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে এবং নৈঋত কোণে উঁচু বড় গাছ পাতা বাহার গাছ, বা এই দিক ও কোণে রকগার্ডেনও করতে পারেন।
নীচের তলা থেকে উপরের তলা উচ্চতায় কম হবে।নীচের তলা বরাবর দরজা যেন উপরের তলার স্থানে না হয় ২/৩ ইঞ্চি এদিক সেদিক করে রাখতে হবে।একইভাবে অন্যান্য তলা।
যত বেশী উপরে বসবাস করা যায় বায়ু চলাচল তত বেশী পরিমাণে সহজ হয়।যত বেশী উপরে থাকবেন দূষণের হার তত কম এবং মহাজাগতিক রশ্মির বা কসমিক এনার্জির তীব্রতা তত বেশী।বহুতল ভবনের ভূমিতল জমির স্তর থেকে চার থেকে ছয় ফুট উঁচু করতে হবে।ভুমিতল কম থাকলে মাটির মধ্যে অবস্থিত ঋণাত্বক বস্তু থেকে বিচ্ছুরিত ঋণাত্বক শক্তি সহজে আসতে সক্ষম হবে।কিন্তু ভুমিতলের উচ্চতা বেশী হলে ঋণাত্বক শক্তির প্রভাব কম হবে।বহুতল ভবনের প্রধান ষ্ট্রাকচার অপরিবর্তিত রেখে ঋণাত্বক বস্তু, যেমন- সিরামিক, কাঠ, সুরকি, পাথর, ক্রিষ্টাল, পিতল ইত্যাদি ব্যবহার বাড়ালে ফ্ল্যাটের গৃহস্থ্যদের জন্য উত্তম।ভবনের রংয়ের ক্ষেত্রে এ্যাক্রিলিক রং, সিন্থেটিক ভিনাইল, ফ্লোরিং, ফ্লোরোসেন্ট রং, পরিত্যাজ্য করতে হবে।কেননা এগুলি ঋণাত্বকবসস্তু এবং সর্ব প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর।ঋণাত্বক শক্তি মানব দেহে সিরোটিনিন ও হিষ্টামাইন উৎপন্ন করে, অসি’রতা বৃদ্ধি করে, হতাশা বাড়ায়, রোগের প্রকোপতা বৃদ্ধি করে।
তাই প্রাকৃতিক বস্তু ব্যবহার সর্বদিক দিয়ে শুভদায়ক।এই জন্য চুনকাম এবং ডিসটেম্পার ব্যবহার করা ভাল।কেননা এগুলি বাতাসকে শোষণ করে প্ররিস্রুত করতে সক্ষম।
ফ্ল্যাটের ছয়তলার উপর থেকে যত উপরে উঠবেন ততই ঋণাত্বক শক্তির প্রকোপতা কম।
দক্ষিণ-পশ্চিম শেষে উত্তর-পশ্চিম দিকে ঢালু বাড়াতে হবে, তবে অপেক্ষাকৃত বেশী ঢালু থাকবে ফ্ল্যাটের উত্তর, পূর্ব ও ঈশাণ কোণে।
পূর্বেই লিখেছি মূখ্য প্রবেশদ্বারের উচ্চতা মেইন গেটের তুলনায় অবশ্যই বেশী হতে হবে।
ফ্ল্যাটের দক্ষিণ-পশ্চিম দিক আবদ্ধ করে রাখবেন এবং উত্তর ও পূর্ব দিক খোলা মেলা রাখবেন।
বহুতল বাড়ী তৈরীর সময় স্লাব, বিম, কলাম ইত্যাদির অংশের প্লাষ্টার পুরু করতে হবে যাতে চৌম্বকীয় শক্তি হ্রাস পায়।
বহুতল ফ্ল্যাটের সর্বশেষ তলের ছাদ অবতল রাখা সব দিক থেকেই ভাল, এতে করে ছাদে পানি জমতে পারে না।সূর্য রশ্মি সরাসরি বা খাড়া না পড়ে কাত হয়ে পড়ায় ছাদও গরম কম হয়।
শুভনক্ষত্রাশ্রিত শুভ সময়, শুভদিনে, সম্পূর্ণ শুচিতা অবলম্বণ পূর্বক, নব বস্ত্র পরিধান করে মুসলমান সমপ্রদায়ভূক্তরা কোরান তেলওয়াত করিয়ে ও নিজে করে নব গৃহে প্রবেশ করবেন।হিন্দু সমপ্রদায়রা বাস্তু পূজো করিয়ে নিবেন, সঙ্গে বা পূর্বে, পরে পাঞ্চাঙ্গ স্বস্ত্যয়ন অষ্টাঙ্গ স্বতস্থ্যয়ন ক্রীয়াকর্ম করে নেয়া সর্বোত্তম বোধ করি।
এ কাজটা জ্যোতিষ ব্রাহ্মণ করতে সিদ্ধহস্ত, পূজোর ব্রাহ্মণ অনেক প্রকার পূজো করেন বিধায়, বাস্তু পুজো অনেক সময় তালগোল মিলিয়ে ফেলেন, তথাপি আপনার মনোনিতকে দিয়ে করানো সর্বোত্তম।
মুসলমান সমপ্রদায়রা প্রবেশ দ্বারের বাহিরে উপরে “বিস্মিল্লাহহির রাহমানির রাহিম” লেখা টাঙ্গিয়ে রাখবেন, ভিতরের দিকে “আয়াতুর কুরসী” বা অন্যান্য আয়াত, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা নিজ নিজ ধর্মানুসারে মাঙ্গলিক চিহ্ন স্থপন করবেন।
কিন্তু উত্তরের পূর্বাংশ বা ঈশাণ কোণ নিয়ে যেন না ঘুমায় সে বিষয়ে সচেষ্ট হতে হবে।দরজা বরাবর যেন না ঘুমায় সেটাও লক্ষ্য রাখবেন।
বাস্তুমতে খামারবাড়ি
আধুনিক যুগে বড় বড় শহরে ব্যবসা- বাণিজ্য, অন্যান্য পেশায় ব্যস্ত জীবন থেকে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে এবং শহরের দূষণ থেকে কিছু সময়ের জন্য রেহাই পেতে গ্রাম্য পরিবেশে ফাঁকা নিরালায় সবুজায়ন করার ঝোঁক দেখা দিয়েছে।চারদিকে তরি-তরকারির খেত, নানারকম ফলের বাগান, কোথাও আবার গরু-মোষের গোয়াল, হাঁস-মুরগির পোল্ট্রি, মাঝখানে বাংলো ধরণের বসবাসের বাড়ি।কোনও কোনও খামারবাড়ি বা ফার্ম হাউসে পুকুর বা ছোট হৃদও থাকে।যাতে থাকে সুইমিং পুলের ব্যবস্থা।অনেক ফার্ম হাউসই বর্তমানে হলিডে রিসর্টে রূপান্তরিত হয়েছে।
এই সব ফার্ম হাউসের জন্যও বাস্তুবিদ্যার কিছু নিয়মের কথা বলা হয়েছে।ফার্ম হাউসের উত্তর ও পূর্ব দিকে যতটা সম্ভব বেশি ফাঁকা জায়গা রাখা উচিত।পূর্ব ও উত্তর দিকে দরজা হলে ভাল হয়।সুইমিং পুল থাকলে সেটিও হবেউত্তর-পূর্ব দিকে।কোনও অবস্থাতেই মাঝখানে সুইমিং পুল করা ঠিক নয়।
রান্নাঘর হবে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে।খাওয়ার জায়গা হবে রান্নাঘরের পশ্চিম দিকে।শোওয়ার ঘর হবে দক্ষিণ-পশ্চিম অথবা দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে।খাট, বিছানা এরকমভাবে পাততে হবে যাতে শোওয়ার সময় মাথা থাকবে দক্ষিণ, পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে।
শৌচাগার উত্তর-পশ্চিম বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে হবে।তবে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে শৌচাগার করতে হলে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের দিকটা ফাঁকা রেখে তবেই তা করতে হবে।উত্তর-পূর্ব দিকে শৌচাগার না করাই ভাল।
পূর্ব ও উত্তর দিকে বেশি খোলা বা জানালা করতে হবে।উত্তর ও দক্ষিণ দিকে থাকলে খুবই ভাল হবে।ছোট পাহাড় বা ঠিলা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে থাকলে তো কথাই নেই।খুবই শুভ, খুবই ভাল।
সংক্ষেপে একটা বাড়ির জন্য বাস্তুবিদ্যায় যে সব নিয়ম মেনে চলার কথা বলা আছে তার সবটাই খামারবাড়ির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
হলিডে হোম ও হলিডে রিসোর্ট
হলিডে হোম হল বাড়ির বাইরের এমন এক বাস্তুস্থান যেখানে গিয়ে মনের শান্তি ও দেহের বিশ্রাম হয়।ঘরোয়া পরিবেশে প্রাত্যহিক একঘেয়ে জীবনযাত্রার মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন ও একটু বৈচিত্রের স্বাদ পেতেই মানুষ হলিডে হোম অথবা রিসর্ট -এ ছুটে যান।এই হলিডে হোম ও রিসর্টের জন্যও বাস্তুবিদ্যায় কিছু নিয়ম আছে।অন্যান্য বাড়িঘরের মতোই হলিডে হোম বা হলিডে রিসর্টের জন্য জমি বাছাই করতে হবে যাতে সেখানকার আকর্ষণে মানুষ ছুটে যাবেন।
এ ধরণের জমিতে সুফল পেতে হলে উত্তর, উত্তর-পূর্ব অথবা পূর্ব নিচু থাকবে।নদী, হ্রদ, পুকুর, ছোট্ট নদী, জলাশয়, ঝরনা, জলপ্রপাত বা ফোয়ারা যদি থাকে তা হলে তার পানি বা স্রোত পশ্চিম দিক থেকে পূর্বমুখী অথবা দক্ষিণ থেকে উত্তরমুখী হলে খুব ভাল হয়।যদি প্রাকৃতিক পানির কোনও ব্যবস্থা না থাকে তা হলে ওই ‘দিক’ সংক্রান্ত নিয়ম মেনে কৃত্রিম ঝরনা বা জলপ্রপাত তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে।পাহাড়, পর্বত, টিলা ইত্যাদি দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে থাকলে ভাল ফল পাওয়া যায়।হলিডে রিসর্ট অথবা হলিডে হোমে ধ্যান বা যোগাভ্যাসের জন্য হলঘর বা ঘর উত্তর-পূর্ব অথবা উত্তর দিকে তৈরি করতে হবে।এতে মনের প্রকৃত শান্তি পাওয়া যাবেই।
পূর্ব ও উত্তর দিকে পার্ক অথবা ফুলের বাগান করা হলে ভাল হয়।দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে সুন্দর সুন্দর বড় গাছ লাগানো যেতে পারে।
হেল্থ ক্লাব, পার্লার সাওনা বাথ, মালিশ প্রভৃতির ব্যবস্থা রাখতে হবে পূর্ব দিকে।গলফ, টেনিস, ব্যাডমিন্টন, স্কোয়াশ কোর্ট ইত্যাদি উত্তর-পশ্চিম দিকে তৈরি করতে হবে।নানা রকমের খাবারের রেস্তরাঁ থাকবে দক্ষিণ-পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে।
রিসর্টের কটেজ অথবা সুন্দর কুঁড়েঘর তৈরি করতে হবে দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে।এইগুলিতে ঢোকার দরজা পূর্ব, উত্তর-পূর্ব অথবা উত্তর দিকে খোলা থাকবে।এই কটেজগুলিতে শোওয়ার ব্যবস্থা এরকমভাবে করতে হবে যাতে ঘুমোনোর সময় মাথা থাকে পূর্ব, পশ্চিম অথবা দক্ষিণ দিকে।ঘুমোবার সময় উত্তর দিকে মাথা কিছুতেই নয়।বিদ্যুৎচালিত সাজ-সরঞ্জাম যেমন হিটার, এয়ার কন্ডিশনার ইত্যাদি কটেজের দক্ষিণ-পূর্ব দিকেই থাকবে।
মিউজিক রুম বা প্রমোদভবন তৈরি করতে হবে উত্তর-পশ্চিম দিকে।এই দিক্টির ফাঁকা জমিতে মিউজিক বা এন্টারটেনমেন্ট রুম থাকলে ভাল হয়।