বাস্তুশাস্ত্রে ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া অত্যন্ত বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।জমির লক্ষণ, জমি (মাটি) পরীক্ষা বিধি, কম্পাস দিয়ে যথার্থভাবে দিক্ নিরূপণ, ভূমি শোধন, উত্তম ভূ-খণ্ডের চয়ন ইত্যাদি হল ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়ার প্রাথমিক স্তর।বাড়ির জন্য যে জমি নির্দিষ্ট করা হবে তার আশপাশের পরিবেশ, প্রতিবেশীদের আকাশছোঁয়া বাড়িঘর, মসজিদ, ঢিপি, পাহাড়, পুকুর, কুয়ো নদী, গাছ-গাছালি সবকিছুই ওই জমিকে প্রভাবিত করে।সুতরাং, কোনটা গ্রহণ করতে হবে আর কোনটা ত্যাগ করতে হবে, তা বাস্তুবিদ্যার অধ্যয়ন, মনন এবং ব্যবহারিক জ্ঞানের মাধ্যমেই জানা যেতে পারে।প্রথমে আমাদের দিক্ ও কোণগুলি সম্পর্কে জানতে হবে।নীচের ছবিতে সেটা বুঝানো হয়েছে।
বাস্তুবিজ্ঞানে এই চার দিক্ ও তার সহায়ক কোণগুলির বিশেষ গুরুত্ব আছে।আমাদের জ্ঞানী-গুণীরা আধুনিক বিজ্ঞান প্রসারের কয়েক হাজার বছর আগে সূর্যরশ্মির জীবনদায়ী তত্ত্বগুলির খোঁজ পেয়েছিলেন।এজন্যই তাঁরা বাস্তুস্থানকে পূর্বমুখী করার বিধান দিয়েছিলেন।এই সঙ্গে অন্যান্য কোণের অধিপতি গ্রহ-নক্ষত্রের অনুরূপ
চিত্র:
গৃহনির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন।এর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল মানুষের সুখ, সমৃদ্ধি ও আরোগ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা পাওয়া।
জমির দিক্ নির্ণয় : জমি যদি আয়তাকার অথবা বর্গাকার হয় তবে তার কেন্দ্র বের করে সেখানে কম্পাস রেখে উত্তরের দিক্টি নির্ণয় করতে হবে।তারপর ওই রেখা ওই নকশায় এঁকে নিতে হবে।এরপর এই রেখা থেকে ২২.৫ অংশ (পূর্ব) এবং ২২.৫ অংশ (পশ্চিম) এর দুটি কোণ (কেন্দ্র থেকে) তৈরি করে রেখা টানুন।
চিত্র:
ভূখণ্ডের বিভাজন :
খণ্ড ১ ও ২ মিলিয়ে উত্তর খণ্ড
খণ্ড ২ ও ৪ মিলিয়ে পূর্ব খণ্ড
খণ্ড ১ ও ৩ মিলিয়ে পশ্চিম খণ্ড
খণ্ড ৩ ও ৪ মিলিয়ে দক্ষিণ খণ্ড
উপরে ভূখণ্ডের দ্বি-বিভাজন ও চতুর্বিভাজন দেখানো হয়েছে।এ ছাড়াও জমিকে প্রয়োজনানুসারে বিভিন্ন আকারে বিভাজিত করা যায়।নীচে ১২টি অংশে বিভাজিত ভূখণ্ডের চিত্র দেওয়া হল।
চিত্র:
আটটি দিকের গুরুত্ব :
বাস্তুবিজ্ঞান অনুসারে মানবজীবনে আটটি দিকের প্রভাব অবশ্যম্ভাবী।
কোনও ভবন নির্মাণ করানোর সময় অতি অবশ্যই র্পূব দিক্টি খোলা ও ফাঁকা রাখতে হবে। পূর্ব দিক্টি হল পৈতৃক স্থাপূর্ব দিক্ খোলা না রাখলে পিতৃপক্ষের হানি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আগ্নেয় দিক্ মানবজীবনের স্বাস্থ্য প্রদান করে।
দক্ষিণ ধনধান্য, সমৃদ্ধি, প্রসন্নতা ও শান্তি দেয়।
নৈঋত নিজের আচারবিচারের জন্য দায়ী হয়।নৈঋতে কোনও রকমের গুরুতর দোষ রাখা অকালমৃত্যুকে আমন্ত্রণ জানানোর সমান।
পশ্চিম দিক্ সাফল্য, যশ ও ভদ্র ব্যবহার প্রদান করে।
বায়ব্য দিক্ অন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রিত করে।বন্ধুত্ব ও শত্রুতা উভয়ই এর মধ্যে আছে
উত্তর দিক্ হল মাতৃস্থান বাড়িতে উত্তর দিকে ফাঁকা স্থান না ছাড়লে মাতৃপক্ষের হানির আশঙ্কা থাক
উত্তর দিক্ হল মাতৃস্থান বাড়িতে উত্তর দিকে ফাঁকা স্থান না ছাড়লে মাতৃপক্ষের হানির আশঙ্কা থাকে।
ভূখণ্ডের বিভাজন :
বাস্তুর জন্য ব্যবহৃত ভূখণ্ডকে সাধারণত আটটি ভাগে বিভক্ত করা হয়।তবে বাড়ি করার জন্য সর্বদাই যে সুষম আকারের জমি মিলবে তা নয়।জমি বিষম আকারেরও হতে পারে।তাই বিষম আকারের জমিকে কৌণিক বিভাজনের মাধ্যমে বিভিন্ন দিক নির্ধারণ করলে তবেই বাড়ির বিভিন্ন ঘর বাস্তুসম্মতভাবে কোথায় হওয়া উচিত তা জানা যাবে।নীচে আটটি এবং ষোলটি অংশে বিভাজন দেখানো হল।
চিত্র:
এখনও পর্যন্ত যে সব চিত্র দেখানো হয়েছে সেগুলি উত্তর-দক্ষিণ সমান্তর কোণের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।কিন্তু ব্যবহারের সময় দেখা যায় অধিকাংশ ভূখণ্ড সমান্তর হয় না।সুতরাং, দিক্ নির্ণয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হয়।বাস্তুশাস্ত্রে দিক্ নির্ণয় করার বেশ কয়েকটি প্রাচীন পদ্ধতি আছে।কিন্তু বর্তমানে কম্পাস দিয়ে দিক্ নির্ণয় করা অত্যন্ত সহজ এবং দ্রুতভাবে হয়।সুতরাং, প্রাচীন পদ্ধতিগুলির ব্যবহার আর হয় না।যে কেউ কম্পাস দিয়ে অনায়াসে দিক্ নিণয় করতে পারেন।
দিক্ পরীক্ষা ও নির্ধারণ:
ভবন নির্মাণে দিক্ শোধন করা অনিবার্য।দিক্ শোধনের অভাবে দিকের যথার্থ জ্ঞান না থাকার দরুণ নির্মাণ কার্যের সময় ঘর এবং দ্বার ইত্যাদিতে ত্রুটি হওয়ায় সম্পুর্ণ ভবনটির অবস্থান বদলে যাবে।আর বাস’শাস্ত্র অনুসারে যে দিকে যে দ্বারের স্থান নির্ধারণ করা হবে সেগুলি সব বিপরীত অবস্থানের জন্যই হতে পারে।শাস্ত্রেও দিক্ শোনের প্রয়োজনের উল্লেখ পাওয়া যায়।
মসজিদ, রাজপ্রাসাদ, গৃহ, দরজা এবং দ্বারের বাইরে বারান্দা, পুকুর ইত্যাদির জন্য দিক্ জানার উদ্দেশ্য যথার্থ দিক্ নির্ণয় করা জরুরি।সুতরাং, শাস্ত্র অনুসারে পূর্ব-পশ্চিম ইত্যাদি দিক্ নির্ধারণের পর তবেই সংশ্লিষ্ট জমিতে ভবন নির্মাণ করা দরকার।শঙ্কুরোপণ-এর মাধ্যমে ছায়ার ভিত্তিতে ধ্রুবতারা অনুসারে এবং নক্ষত্রবোধের ভিত্তিতে প্রাচীন গ্রন্থে দিক্ শোধনের উল্লেখ পাওয়া যায়।
আধুনিককালে বাস’শাস্ত্রীরা কম্পাস দিয়ে চৌম্বকীয় ভত্তিতে দিক্ নির্ণয় করে প্রয়োজনে দিক্ সংশোধন করে নেন।অতএব দিক্ শোধন করার পরও ভবন নির্মাণ করার দরুণ ভবনে তৈরী ঘর ও দ্বার ইত্যাদির যথার্থ দিক্ নির্ধারণ করা যেতে পারে।বর্তমান সময়ে বাস’শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞেরা বাড়ি তৈরী হয়ে যাওয়ার পর দিক্ নির্ণয় করে ওই সব সুন্দর বাড়ি ঘরের কাটছাঁট ও পরিবর্তন করেছেন।এ এক বিরাট সমস্যা।এমনটি হওয়া উচিত নয়।এই সমস্যার সমাধান বাড়ি তৈরী হওয়ার আগেই হওয়া উচিত।দিক্ সংশোধন করে ঠিকভাবে বাস’শাস্ত্রের সিদ্ধান্তগুলি মেনে তবেই বাড়িঘরের নির্মাণ কাজ শুরু করা উচিত।প্রবেশদ্বার ও বাতায়ন ইত্যাদি ছাড়াও প্রতিটি ঘর ঠিক দিকে তৈরি করতে হবে।আর তা করলে বাস্তুসংক্রান্ত কোনও রকমের সমস্যা দেখা দেবে না।এতে বাড়ির কর্তাসহ সকলেই সুখ ও সৌভাগ্য লাভ করবেন।এমনকি বাড়ির ভৃত্যসহ পশুপাখিও থাকবে সুখে।(মুসলমানদের বাড়িতে পশু-পাখি না রাখাই সর্বাত্তম তবে গ্রামে রাখা যাবে।)
বাস্তুশাস্ত্র মতে মানুষের উপর দিকের প্রভাব:
দিক্ | প্রভাব |
পূর্ব | বংশ, পৈতৃক সম্পর্কীয় |
উত্তর | মাতৃ সম্পর্কীয়, বুদ্ধি ও চাতুর্য |
দক্ষিণ | সমৃদ্ধি ও শান্তি, নিরুপদ্রব জীবন |
পশ্চিম | নাম, যশ ও অবস্থার উন্নতি |
উত্তর-পূর্ব (ঈশান) | বংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক |
দক্ষিণ-পূর্ব (আগ্নেয়) | শারীরিক ও মানসিক স্থৈর্য, শক্তি ও উদ্দীপনা |
দক্ষিণ-পশ্চিম (নৈঋত) | দীর্ঘজীবন ও লোক ব্যবহার কৌশল |
উত্তর-পশ্চিম (বায়ব্য) | পরস্পরের সঙ্গে মৈত্রী ও শান্তি |
চারটি মধ্যবর্তী দিকের প্রত্যেকটিকে দুটি সমানভাগে ভাগ করা যেতে পারে।নিচের চিত্রে সেটা দেখানো হয়েছে।
আমরা যদি পূর্ব দিক্টিকে ৯টি ভাগে বিভক্ত করি তা হলে পূর্বের দুটি ভাগ উত্তর ও উত্তর-পূর্ব হয়ে যাবে।পশ্চিমের দুটি অংশ উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম হয়ে যাবে।কেন্দ্রবর্তী ৫টি অংশ উত্তর দিক্ বলে গণ্য হবে এবং চক্রনাভির একটি সমান ভাগ এই ৫টি অংশে মিশে যাবে।
যদি পশ্চিমকে ৯টি সমান ভাগে ভাগ করা হয় তা হলে পূর্ব হয়ে যাবে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব কেন্দ্রে অবস্তিত ৫টি চক্রনাভিযুক্ত তা মিশে যাবে এবং দক্ষিণ দিক্ বলে গণ্য হবে।
এরকমভাবেই প্রতিটি দিকের ৯টি অংশ।মূখ্য অংশের ৪টি অংশ মধ্যবর্তী দিকে ৪টি অংশ এবং ১টি অংশ চক্রনাভির সঙ্গে যুক্ত।
অঙ্কের মাধ্যমে এটা প্রমাণ করা যেতে পারে।এ ক্ষেত্রেও পূর্বের চিত্রের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।নীচে বিষয়টিকে সে রকমভাবেই দেখানো হল।যদি আমরা একটি মূখ্যদিকের ৯টি স্প্যানকে অপর একটি মূখ্যদিকের ৯টি স্প্যানের সঙ্গে গুণ করি তা হলে আমরা পাব ৮১টি বর্গ অথবা সমান স্প্যানের আয়তাকার।
উত্তর-পূর্ব – ২২ = ৪ | দক্ষিণ-পশ্চিম – ২২ = ৪ |
পূর্ব – ৪৪ = ১৬ | পশ্চিম – ৪৪ = ১৬ |
দক্ষিণ-পূর্ব – ২২ = ৪ | উত্তর-পশ্চিম – ২ ২ = ৪ |
দক্ষিণ – ৪৪ = ১৬ | উত্তর – ৪৪ = ১৬ |
চক্রনাভি – ১১ =১ |
সব মিলিয়ে ৮১টি বর্গ দুটি চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হল।
পুরাতন মত
চিত্র:
আধুনিক মত
চিত্র:
কম্পাসের ব্যবহার ও চৌম্বকধর্ম
চুম্বকত্বের শক্তি এমনিতে দেখা যায় না।কিন্তু চুম্বক যখন কোনও ধাতুর টুকরোকে নিজের শক্তির দ্বারা টেনে আনে বা আকর্ষণ করে সেটা কিন্তু সকলেই পরিষ্কারভাবে দেখতে পায়।একটি পদার্থ যা লোহা-সহ অন্য কয়েকটি ধাতুকে আকর্ষণ করে তাকে চুম্বক বলে।প্রতিটি চুম্বকে দুটি দণ্ড থাকে যাতে চৌম্বকীয় তত্ত্ব থাকে।যে এলাকায় চৌম্বকীয় শক্তি প্রভাব বিস্তার করে তাকে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র বা ‘ম্যাগনেটিক ফিল্ড’ বলা হয়।এই পৃথিবীটাই একটা বিশাল চুম্বক।এর চৌম্বকীয় দণ্ড দুটি হল ভৌগলিক উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু।একটি চৌম্বকীয় দণ্ড পৃথিবীর উত্তর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রকে আকর্ষণ করে, অপর দণ্ডটি দক্ষিণের চৌম্বকীয় ক্ষেত্রকে আকর্ষণ করে।
ভৌগলিক উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু পৃথিবীর অক্ষরেখায় অবস্থান করে এবং এই অক্ষরেখাকে কেন্দ্র করেই পৃথিবী ঘুরছে।এই রেখা অবস্থানই পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রকে বোঝাচ্ছে।যে স্থানগুলি এই রেখাগুলির কাছাকাছি এসেছে সেই স্থানটি সব চেয়ে বেশি শক্তিশালী।
দিক্নির্ণয় যন্ত্র বা কম্পাস:
একটি কম্পাস বিভিন্ন দিক নির্ণয় করে।প্রায় এক হাজার বছর আগে আরবের নাবিকরাই প্রথম কম্পাস বা ম্যাগনেটিক কম্পাসের ব্যবহার শুরু করেছিলেন।এই ম্যাগনেটিক কম্পাসের ভিতরে একটি কাঁটা থাকে।এটি অনায়াসে একদিক থেকে আর একদিকে ঘোরে।
কম্পাস ব্যবহারের নিয়ম:
অনন্তপক্ষে ২ ইঞ্চি ব্যাসের উন্নতমানের কম্পাস হাতে নিয়ে ৩৬০ ডিগ্রী চক্রাকার স্কেলটি দেখতে হবে।কম্পাসে ইংরাজি ‘N’ বুঝায় নর্থ অথবা উত্তর , ‘S’ বুঝাচ্ছে সাউথ বা দক্ষিণ অনুরূপে ‘E’ ইষ্ট বা পূর্ব ‘W’ ওয়েস্ট বা পশ্চিম, ‘SE’ সাইথ-ইস্ট বা দক্ষিণ-পূর্ব, ‘NE’ নর্থ-ইস্ট বা উত্তর-পূর্ব, ‘SW’ সাউথ-ওয়েস্ট বা দক্ষিণ-পশ্চিম এবং ‘NW’ নর্থ ওয়েস্ট বা উত্তর-পশ্চিম।এইভাবে কেন্দ্রবিন্দু থেকে ৮টি দিকে রেখা চলে গিয়েছে।এর যে কোনও দুটি মধ্যস্ত কোণ হবে ৪৫ ডিগ্রী।
চিত্র:
উত্তর দিক্ নির্ণয়ে কম্পাস ব্যবহার বিধি:
কম্পাস ব্যবহার করে জমির উত্তর দিক্ খুঁজে বের করার আগে জমির মোটামুটি মাঝখানে ৮ ইঞ্চি X ৮ ইঞ্চি স্থানটি পরিষ্কারের পরে সমতল করে নিয়ে তাতে কম্পাসটি রাখতে হবে।দেখা যাবে কম্পাসের মধ্যস্থলে অবস্থিত কাঁটাটি এ দিক ও দিকে ঘুরতে ঘুরতে কাঁটার মাথায় অবসি’ত লাল চিহ্নিত একটি বিশেষ স্থানে এসে থেমে যাবে।তখন আস্তে আস্তে কম্পাসটা এরকমভাবে ঘোরাতে হবে যাতে N লেখা অক্ষরটা লাল চিহ্নের তলায় চলে যায়।এতে দেখা যাবে কাঁটা উত্তর-দক্ষিণ দিকে অক্ষাংশে চলে গিয়েছে এবং লাল চিহ্নযুক্ত দিক্টিও চৌম্বকীয় উত্তরের দিকে চলে গিয়েছে।
যদি জমির ধারে ইতিমধ্যেই রাস্তা হয়ে গিয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে দেখতে হবে জমির সীমানাগুলি যেন চৌম্বকীয় অক্ষের লাইনে থাকে।এখন কম্পাসটি একদিক থেকে আর এক দিকে ঘোরালে কাঁটাটি থেকে যাবে এবং চৌম্বকীয় উত্তর দিক্টি নির্দিষ্ট করবে, যেমনটি এখানে বর্ণনা করা হয়েছে।এখন দেখতেহবেজমির সীমানাগুলি অক্ষরেখার লাইনে পড়েছে কি না।যদি না পড়ে থাকে তা হলে কম্পাসটিকে আস্তে আস্তে ঘোরাতে হবে যাতে জমির সমদ্বিখণ্ডক রেখা-এগিয়ে পড়ে।এক্ষেত্রে লাল চিহ্নিত কাঁটা ও ঘ অক্ষরের মধ্যে ডিগ্রির তফাত বুঝিয়ে দেবে জমিটি কতটা প্রতিকুল দিকে সরে আছে।যদি এই সরে আসা ১০ ডিগ্রি হয় তা হলে জমিটি ভালই বলে গণ্য করতে হবে।এই প্রতিকুল দিক্ যদি বেশি হয় তা হলে সে ক্ষেত্রে বাস্তুবিদ্দের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
কম্পাসের সাহায্যে জমির চৌম্বকীয় ত্রুটি নির্ণয় :
উত্তম জমি বাছাই
ভূমি পরীক্ষণ:
১।আকার(Shape)
২।রং(Colour)
৩।গন্ধ(Odour)
৪।স্বাদ(Taste)
৫।কাঠিন্যতা(Hardness)
৬।ঘনত্ব(Density)
৭।রন্ধ্রতা(Porousness)
৮।তল(Level)
৯।জমির আনুপূর্বিক ইতিহাস(History of Land)
জমির আনুপূর্বিক ইতিহাস:
বাড়ি করার জমি বাছাইয়ের সময় জমির আনুপূর্বিক ইতিহাস সম্বন্ধে বিশেষভাবে যত্মবান হতে হবে।তা না হলে বসবাসের জায়গার সম্পূর্ণ সুফল লাভ করতে সমর্থ হওয়া যাবে না।যেমন, পৌরাণি গ্রন্থ “শিল্পরত্ম” অনুযায়ী যে সব জমিতে “দাহকার্য” হয়েছে বা যে জমি আগে কবরসথান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে বা যে জমিতে সাপ বাস করে বা যে সব জমিতে পশুনিধন কার্যাদি হয়েছে সে সব জমিতে বাড়ি তৈরি না করাই মঙ্গল।এ ছাড়া যে জমিতে খুন, আত্মহত্যা, দলবদ্ধভাবে নারী নিগ্রহ ইত্যাদি হয়েছে, সে সব জমিও বাড়ি তৈরির পক্ষে অনুকূল নয়।
যে জমিতে আগে কোন মসজিদ ইত্যাগির অবস্থান ছিল কিন্তু পরে বাস’জমিতে রূপান্তরিত হয়েছে অথবা গ্রামাঞ্চলে মসজিদ, মন্দির বা দেবালয় অধিষ্ঠানের জায়গা বা যে জমি “ঘোড়ার আস্তাবল” কিংবা যে জমি ভূমিকম্প ও বজ্রপাতের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমনকি যে জমিতে আগে ইট ভাটা ছিল, সেই জমিও বাড়ি তৈরী করার পক্ষে একান্তভাবেই অনুপযুক্ত।ফলে বাড়ি তৈরি না করাই শ্রেয়।কিন্তু যে জমিতে আগে চাষাবাদ হত বা যে জমিতে আগে খেলার মাঠ, ফলের বাগান, গোশালা বা যেখানে জনগণের মিলনস্থান, রাস্তা বা রেলপথ হিসেবে ব্যবহৃত হত সেই সব জমি গৃহনির্মাণের পক্ষে আদর্শ।
জমির আকার :জমিতে পাঁচটি তত্ত্বের গুণাবলি বর্তমান।এই পরিপ্রেক্ষিতে সন্তানটি পরীক্ষার সময় মাটির গুণাবলি, মাটির শক্তি বা ধারণ ক্ষমতা, শব্দ, স্পর্শ, প্রকৃতি, স্বাদ ও গন্ধ প্রভৃতি বিশেষভাবে বিচার্য।
জমির কেন্দ্রস্থল বা ব্রহ্মস্থল এবং চারটি কোণ থেকে মাটির নমুনা সংগ্রহ করে এই পরীক্ষা করতে হবে।জমিতে যে পাঞ্চভৌতিক তত্ত্ব বিদ্যমান তা হল নিম্নরূপ:
জমির মাটির শক্তি :জমির মাটির পাঁচটি গুণ আছে।যথা- মাটি স্পর্শের (আকাশ) সময় তার শীতল বা উষ্ণতার সমতা (বায়ূ), তার সাধারণ কৃষ্ণাভ ধূসর বর্ণ (অগ্নি), এর স্বাদ (পানি) এবং গন্ধ।এই পাঞ্চভৌতিক তত্ত্ব যে জমিতে বর্তমান সেই জমি বাড়ি তৈরির পক্ষে বিশেষভাবে আদর্শ।
অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা:এতক্ষণ জমির গুণাবলির ব্যাপারে যা বলা হল তা একান্তই বাহ্যিক অর্থাৎ জমির উপরিভাগের নিরীক্ষণ বা পরীক্ষা।এবার জমির অভ্যন্তরীণ বা জমির অন্তর্ভাগের মাটির পরীক্ষার সম্বন্ধে সাধারণভাবে জানানো হচ্ছে।জমির কেন্দ্রস্থল নির্ধারণ করে সেই স্থানে ১৮ ইঞ্চি X১৮ ইঞ্চি মাপের গর্ত ১৮ ইঞ্চি গভীরতায় করতে হবে।এরপর সেই গর্তটি পানি দিয়ে সম্পুর্ণ ভর্তি করে দিতে হবে।এবার পানিপূর্ণ গর্ত থেকে ১০০ ফুট দূরে হেঁটে গিয়ে ফিরে আসা বা পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করার পর গর্তে পানির পরিমাণ পরীক্ষা করে দেখতে হবে।যদি দেখা যায় পানির পরিমাণ একই আচে তবে জমিটি উত্তম, যদি অল্প কমে গিয়ে থাকে তবে মধ্যম এবং যদি অনেকটা কমে যায় তবে জমিটি অনুপযুক্ত বলে মনে করতে হবে।
উপরের পরীক্ষায় যদি দেখা যায় যে পানিস্তর এক চতুর্থাংশের কম, তবে জমিটি উত্তম।যদি ৫০ শতাংশের কম হয় তবে জমিটি মধ্যম এবং যদি ২৫ শতাংশেরও কম হয় তবে জমিটি অধম।এই পরীক্ষাটির সাহায্যে জমির পানি শোষণ ক্ষমতা, অবিরলতা ও মাটির নীচের পানিস-রের পরিমাণ সম্বন্ধে ধারণা করা যায়।আবার যদি জমির পানি খুব কম শোষণ করে তবে সর্বোত্তম।এই জমিতে বাড়ি তৈরির সময় সাধারণ বুনিয়াদই যথেষ্ট।অর্ধেক পানি শোষিত হলে বুনিয়াদের গভীরতা বেশি করতে হবে এবং পানিস্তর ২৫ শতাংশ বা তার চেয়ে নীচে চলে গেলে বনিয়াদের গভীরতা আরও অনেক বেশি বাড়াতে হবে যা বর্তমানকালে খুবই ব্যয়সাপেক্ষ।এ ছাড়া আরও একটি পরীক্ষা সাধারণভাবে করা যেতে পারে।যেমন: জমির যে কোনও জায়গায় একটি গর্ত করে তার যে মাটি বের হবে সেই মাটি আলতো করে অর্থাৎ বেশি জোর না দিয়ে আবার গর্তে ঢেলে দিতে হবে।এতে যদি দেখা যায় যে কিছু মাটি বেশি রয়ে গিয়েছে তবে মনে করতে হবে জমিটি উত্তম।যদি গর্তটি সম্পূর্ণভাবে ভরে যায় তবে জমিটি মধ্যম মানের এবং গর্তটি যদি নিষ্কাষিত মাটিতে না ভরে তবে জমিটি নিকৃষ্ট অর্থাৎ পরিত্যাজ্য।
খাত পরীক্ষা করে শল্যদোষ সম্বন্ধে জানা যায়।জমির খননকালে যদি মাটিতে মানুষ, জীবজন’, সরীসৃপ ও পাখিদের অসি’ বা হাড় পাওয়া যায় তবে সেই জমিতে শল্যদোষ আছে বলে জানতে হবে।এ ছাড়া বৃক্ষাংশ অথবা আগুনে পোড়া গাছের অংশ, কয়লা, ইট, লোহার অংশ, সীসা ইত্যাদি থাকলেও সেই জমিতে শল্যদোষ আছে।শল্যদোষ কাটিয়ে তবে এইসব জমিতে বাড়ি করা উচিত।শল্যদোষ আছে কি না জানার আরও তিনটি প্রণালী আছে।যথা- সূত্র, প্রশ্ন ও পদছায়া।বাড়ি তৈরি করার জন্য প্রথমেই জমি কিনতে হবে।জমি কেনার আগে জমি বাছাইয়ের কাজটি অত্যন- সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে।
বসত বাড়ির জন্য অথবা অন্য প্রয়োজনে ভবন নির্মাণে জীবিত জমি বেছে নিতে হবে।যে জমিতে গাছপালা আছে অথবা যে জমিতে ভাল ফসল ফলে সেই জমিকেই জীবিত জমি বলা হয়।এর বাইরের জমি মৃত।ঊষর বা অনেকদিন ধরে পড়ে আছে এমন পরিত্যক্ত জমি বাড়ি তৈরির জন্য নেওয়া উচিত নয়। ফুটিফাটা, হাড়গোড় পড়ে থাকা, উঁই-ধরা উঁচু-নিচু জমি বাড়ির পক্ষে কখনওই ভাল হয় না।এই ধরণের জমি কিনলে অর্থনাশ হবে।ফুটিফাটা জমি প্রাণনাশকারী হয়।ঊষর জমি ধনসম্পদ নাশকারী, হাড়গোড়যুক্ত জমি সর্বদা ক্লেশদুঃখ সৃষ্টিকারী ও উঁচু-নিচু জমি শত্রু বৃদ্ধিকারী হয়।প্রাচীন গ্রন্থে এ সব কথা বলা হয়েছে।
ভূমির শ্রেণীবিভাগ
ভূমিকে চারটি শ্রেণীতে বিভাজিত করা হয়েছে।যথা গজপৃষ্ঠ, কূর্মপৃষ্ঠ, দৈত্যপৃষ্ঠ ও নাগপৃষ্ঠ (জ্যোতিষ নিবন্ধ)।
গজপৃষ্ঠ :দক্ষিণ, পশ্চিম, নৈর্ঋত ও বায়ব্য কোণের দিকের উঁচু জমি হল গজপৃষ্ঠ।এরকম জমিতে বাড়িঘর করে বসবাস করলে মানুষ ধনসম্পদ-ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ থাকে এবং তার আয়ূ বাড়ে।
কূর্মপৃষ্ঠ:মাঝখানে উঁচু এবং চারদিকে নিচু জমিকে কূর্মপৃষ্ঠ বলা হয়।কূর্মপৃষ্ঠ জমিতে বাড়ি করে বসবাস করলে প্রতিদিন উৎসাহ বৃদ্ধি হয়।প্রচুর পরিমাণে ধনধান্য বৃদ্ধি ও প্রতিষ্ঠা লাভ হয়।
দৈত্যপৃষ্ঠ : পূর্ব, অগ্নি, ঈশান কোনে উঁচু ও পশ্চিম দিকে নিচু জমিকে দৈত্যপৃষ্ঠ ভূমি বলা হয়।দৈত্যপৃষ্ঠ ধরণের জমিতে বাড়ি করলে সে বাড়িতে কখনও ধনধান্যে পরিপূর্ণ হয় না।এরকম জমিতে বসবাস করলে ধন, পুত্র ও পশু ইত্যাদির হানি ঘটে।
নাগপৃষ্ঠ : পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে লম্বা ও উত্তর এবং দক্ষিণ দিকে উঁচু ও মাঝখানে কিছুটা নিচু জমিকে নাগপৃষ্ঠ জমি বলা হয়।এরকম জমিতে বসবাসকারীর মৃত্যুভয়, স্ত্রী-পুত্রাদি হানি এবং পদে পদে শত্রুবৃদ্ধি ঘটে থাকে।
ব্যবহারিক ও শ্রেষ্ঠ জমির দিক্ নির্ণয় :
বাড়ি তৈরির জন্য আয়তাকার বা বর্গাকার জমি বাছতে হবে।এরূপ জমির চারটি কোণের প্রতিটিই ৯০ ডিগ্রির হবে।নীচের চিত্র-ক জমিটি হল আদর্শ জমির উদাহরণ।মি বাছাই করার সময় দিক নির্ণয়ের জন্য কম্পাস (ম্যাগনেটিক) ব্যবহার করে দেখতে হবে যে, চিত্র-ক অনুসারে যেন জমির দিক্ অবস্থান হয়।যদি জমিটির দিক অবস্থান চিত্র-খ অনুসারে হয় তবে জমিটি বাড়ি তৈরির পক্ষে অনুকুল নয়।যথার্থ দিক হলে তবেই বাস্তুবিদ্যার নিয়ম এবং সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে বাড়ি তৈরি করা যাবে।যে জমি আদর্শ ভূখণ্ড নয় সেই জমিকে বাস’বিদ্যা অনুসারে সংশোধিত করে সেখানে প্রকৃত পরিকল্পনা অনুযায়ী বাড়ি করা সম্ভব।
চিত্র:
আবার যদি কোন জমির দিক্গুলি প্রকৃত অবস্থানে না থেকে ১৫ ডিগ্রি থেকে ২০ ডিগ্রির তফাতে থাকে (চিত্র-গ) সেই জমি অনুকুল নয় বলে সেখানে বাস্তু সংশোধন ও পরিকল্পনা অনুসারী ছাড়া কখনওই বাড়িঘর করা উচিত নয়।
অনেক সময় দেখা যায় যে কোনও কোনও জমির অন্য দিক্গুলি বাস’ শাস্ত্রানুসারী হলেও উত্তর-পূর্ব দিক্টি কাটা থাকে (চিত্র-ঘ এবং চিত্র-ঙ)।এরূপ জমিতে বাড়িঘর করা কখনও উচিত নয়।কেননা এ ধরণের জমি ক্রেতার পক্ষে অশুভ।আবার যদি কোনও জমির অন্য দিক্গুলি বাস্তুসম্মত এবং ঈশান দিক্টি বর্ধিত হয় (চিত্র-চ এবং চিত্র-ছ) সেই জমিতে বাড়ি করা শুভদায়ক।গৃহস্বামর ঐশ্বর্য লাভ হবে।যে জমি উত্তর-পূর্ব দিকের কাটা অংশ বাস’শাস্ত্র অনুযায়ী সংশোধন করা সম্ভব, সেই সংশোধিত জমিতে বাড়ি করা চলবে (চিত্র-জ, ঝ)।
প্রকৃত পক্ষে একই রকম মাপের, সমান জমি পাওয়া শক্ত।বাড়ি তৈরি করার সময় সেটিকে ‘স্থান’ অনুসারেই তৈরি করাতে হবে।কম্পাস দিয়ে দিক্ নির্ণয় করে তা বাঁকা নয়, অথচ বাস্তুবিদ্যার নিয়ম অনুসারেই হয়েছে, এটা দেখতে হবে (চিত্র নং ক, খ, গ)।বাস্তুবিদ্যা অনুসারে জমির উচ্চতা ও নিচু অবস্থার পরিবর্তন সাপেক্ষে স্থানটিকেই কিনতে হবে।যদি কোনও ভূখণ্ড বা জমির পূর্ব বা উত্তর দিকে উঁচু টিলা থাকে, যা খুঁড়ে সরানো প্রায় অসম্ভব এবং দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে বড় বড় খাদ বা গর্ত থাকে, যা ভরাট করা অত্যন্ত ব্যয়সাধ্য, সে ক্ষেত্রে এরকম জমি না কেনাই শ্রেয়।চিত্রে দেখানো হয়েছে জমির ঈশান দিক্টি বেড়ে আছে (চিত্র-ঘ)।এ ধরণতে যাঁরা বসবাস করেন তাঁদের যশ, খ্যাতি লাভ হয়।এরকমজমি কেনা ভাল।
চিত্র অনুসারে (চিত্র-ঙ এবং চিত-চ) বায়ব্য ও নৈর্ঋতে বেড়ে থাকা জমি শুভ হয় না।এ ধরনের জমি না নেওয়াই ভাল।একইভাবে ঈশান ছাড়া অন্য যে কোনও দিকে বেড়ে থাকা জমি শুভ হয় না।
আদর্শ জমির বৈজ্ঞানিক তথ্য :
বসবাসের উপযুক্ত জমি হল সুষম আকারের জমি।মনে রাখতে হবে, প্রতিটি জমি নিজেই একটি চুম্বক।কাজেই জমির আকার যদি সুষম হয় তবে সেই জমিতে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র সমভাবে বণ্টিত হতে পারবে।আর জমির আকার যদি বিষম হয় তবে সেই জমিতে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র বিষমভাবে বণ্টিত হবে।এর ফলে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র পুরোপুরি জমির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে হয় জমির বাইরে চলে যাবে অথবা জমির মধ্যে বিষমভাবে বণ্টিত হবে।আবার, কোনও জমির সংলগ্ন জমি ক্রয়ের ব্যাপারেও কয়েকটি কথা মাথায় রাখতে হবে।বর্তমান জমির বর্ধিতকরণের ক্ষেত্রে অবশ্যই দেখতে হবে যে বর্ধিত সেই জমিতে উপকারী লাল উজানি রশ্মিস্রোত প্রচুর পরিমাণে পড়ে কি না।সেই কারণে কোনও জমির বর্ধিতকরণ উত্তর, পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব দিকে ভাল।কেননা ওই দিক্গুলি বর্ধিত করলে সেই খোলা অংশে দিয়ে সূর্যের উপকারী লাল উজানি রশ্মি সহজেই মাটিতে পড়ে বিকিরিত হতে পারবে।
চিত্র:
জমির অবস্থান : একদিকে রাস্তার ওপর অবসি’ত জমি নিম্নরূপ :
চিত্র:
উপরোক্ত জমির রাস্তা উত্তর দিকে।উত্তরের দিকে রাস্তার পাশের জমি ভাল।
চিত্র:
উপরের জমিটির রাস্তা পূর্বদিকে।পূর্বদিকে রাস্তাযুক্ত এ ধরনের জমিও ভাল।
চিত্র:
উপরোক্ত চিত্রে জমির রাস্তা রয়েছে দক্ষিণে।দক্ষিণ দিকে রাস্তার উপর জমি সাধারণ মানের।
চিত্র:
উপরোক্ত জমির রাস্তা রয়েছে পশ্চিম দিকে।পশ্চিমের রাস্তার দিকের জমি সাধারণ মানের।
দু দিকে রাস্তাযুক্ত জমি:
পূর্ব ও দক্ষিণ উভয় দিকে রাস্তা আছে এমন জমি সাধারণ মানের। এরকম জমিতে সতর্ক হয়ে বাড়ি করতে হবে। দক্ষিণ ও পশ্চিম উভয় দিকে রাস্তা যুক্ত জমি সাধারণ মানের।এমন জমিতেও সতর্ক হয়ে বাড়ি করতে হবে।
চিত্র:
উত্তর ও দক্ষিণ দিকে রাস্তা আছে এমন জমি এমনিতেই সাধারণ মানের।তবে এরকম জমিতে বাড়ির দু দিক দিয়েই প্রবেশপথ করা ঠিক নয়।
চিত্র
পূর্ব ও পশ্চিম দু দিকেই রাস্তা থাকলে সেই জমি সাধারণ মানের।এখানেও প্রবেশ পথ উভয় দিক্ দিয়ে করা উচিত নয়।
তিন দিকে রাস্তাযুক্ত জমি:
চিত্র:
উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম তিন দিকেরাস্তাযুক্ত জমি খুব ভাল।
উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম তিন দিকে রাস্তার ওপর অবস্থিত জমি সাধারণ মানের।
চিত্র:
উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব তিন দিকে রাস্তার ওপর অবসি’ত জমি সাধারণ মানের।
চার দিকে রাস্তা যুক্ত জমি:
চিত্র:
চারদিকে রাস্তা আছে এমন চৌকো জমি হল শ্রেষ্ঠ জমি।
যে জমি ইংরেজি বর্ণমালার ‘T’ অথবা ‘Y’ যুক্ত রাস্তার সংযোগসথলে রয়েছে সেই জমিতে বাড়ি করা উচিত নয়।কারণ এতে বাস্তুমতে ধনাত্মক শক্তির প্রাচুর্য কম থাকে।
চিত্র:
যদি কোনও রাস্তা জমির মাঝখানে এসে শেষ হয় তবে তা খুবই খারাপ।নীচের ছবিতে রাস্তা কোন দিক্ থেকে এলে জমিতে তার কী প্রভাব তা দেখানো হল।এই রকম জমিকে “বিধিশূল” বলে।“বিধিশূল” বলতে বোঝায় “বিঘ্ন বা প্রতিবন্ধক”।
চিত্র:
জমির দিশা চারদিকের কোনও দিকেই যদি প্রকৃতপক্ষে না থাকে এবং সংলগ্ন রাস্তাও যদি সোজাসুজি না গিয়ে কানাচে ভাবে যায় তা হলে বাড়ি করার সময় এমনভাবে নকশা করতে হবে যাতে বাড়ি রাস্তার সমান অর্থাৎ কোনাকুনিভাবে না করা হয়।এই রকম জমিতে বাড়ির নকশা যেন উত্তর-দক্ষিনের চৌম্বক-অক্ষের কাছাকাছি হয়।
সংক্ষেপে চিত্রের সাহায্যে দেখানো হল তিনদিক্ ও চারদিকে রাস্তাযুক্ত জমি সবচেয়ে ভাল।কিন্তু জমির যে কোনও দুটি দিকের কোণ যেন ৯০০হয়।বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ যেন অবশ্যই ৯০০হয়।
প্রকৃত পক্ষে একই রকম মাপের, সমান জমি পাওয়া শক্ত। বাড়ি তৈরি করার সময় সেটিকে ‘স্থান’ অনুসারেই তৈরি করাতে হবে। কম্পাস দিয়ে দিক্ নির্ণয় করে তা বাঁকা নয়, অথচ বাস্তুবিদ্যার নিয়ম অনুসারেই হয়েছে, এটা দেখতে হবে (চিত্র নং ক, খ, গ)। বাস্তুবিদ্যা অনুসারে জমির উচ্চতা ও নিচু অবস্থার পরিবর্তন সাপেক্ষে স্থানটিকেই কিনতে হবে। যদি কোনও ভূখণ্ড বা জমির পূর্ব বা উত্তর দিকে উঁচু টিলা থাকে, যা খুঁড়ে সরানো প্রায় অসম্ভব এবং দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে বড় বড় খাদ বা গর্ত থাকে, যা ভরাট করা অত্যন্ত ব্যয়সাধ্য, সে ক্ষেত্রে এরকম জমি না কেনাই শ্রেয়। চিত্রে দেখানো হয়েছে জমির ঈশান দিক্টি বেড়ে আছে (চিত্র-ঘ)। এ ধরণের জমিতে যাঁরা বসবাস করেন তাঁদের যশ, খ্যাতি লাভ হয়। এরকম জমি কেনা ভাল।
চিত্র অনুসারে (চিত্র-ঙ এবং চিত-চ) বায়ব্য ও নৈর্ঋতে বেড়ে থাকা জমি শুভ হয় না। এ ধরনের জমি না নেওয়াই ভাল। একইভাবে ঈশান ছাড়া অন্য যে কোনও দিকে বেড়ে থাকা জমি শুভ হয় না।
আদর্শ জমির বৈজ্ঞানিক তথ্য :
বসবাসের উপযুক্ত জমি হল সুষম আকারের জমি। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি জমি নিজেই একটি চুম্বক। কাজেই জমির আকার যদি সুষম হয় তবে সেই জমিতে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র সমভাবে বণ্টিত হতে পারবে। আর জমির আকার যদি বিষম হয় তবে সেই জমিতে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র বিষমভাবে বণ্টিত হবে। এর ফলে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র পুরোপুরি জমির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে হয় জমির বাইরে চলে যাবে অথবা জমির মধ্যে বিষমভাবে বণ্টিত হবে। আবার, কোনও জমির সংলগ্ন জমি ক্রয়ের ব্যাপারেও কয়েকটি কথা মাথায় রাখতে হবে। বর্তমান জমির বর্ধিতকরণের ক্ষেত্রে অবশ্যই দেখতে হবে যে বর্ধিত সেই জমিতে উপকারী লাল উজানি রশ্মিস্রোত প্রচুর পরিমাণে পড়ে কি না। সেই কারণে কোনও জমির বর্ধিতকরণ উত্তর, পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব দিকে ভাল। কেননা ওই দিক্গুলি বর্ধিত করলে সেই খোলা অংশে দিয়ে সূর্যের উপকারী লাল উজানি রশ্মি সহজেই মাটিতে পড়ে বিকিরিত হতে পারবে। চিত্র:
জমির অবস্থান : একদিকে রাস্তার ওপর অবসি’ত জমি নিম্নরূপ :
চিত্র:
উপরোক্ত জমির রাস্তা উত্তর দিকে। উত্তরের দিকে রাস্তার পাশের জমি ভাল।
চিত্র:
উপরের জমিটির রাস্তা পূর্বদিকে। পূর্বদিকে রাস্তাযুক্ত এ ধরনের জমিও ভাল।
চিত্র:
উপরোক্ত চিত্রে জমির রাস্তা রয়েছে দক্ষিণে। দক্ষিণ দিকে রাস্তার উপর জমি সাধারণ মানের।
চিত্র:
উপরোক্ত জমির রাস্তা রয়েছে পশ্চিম দিকে। পশ্চিমের রাস্তার দিকের জমি সাধারণ মানের।
দু দিকে রাস্তাযুক্ত জমি:
পূর্ব ও দক্ষিণ উভয় দিকে রাস্তা আছে এমন জমি সাধারণ মানের। এরকম জমিতে সতর্ক হয়ে বাড়ি করতে হবে। দক্ষিণ ও পশ্চিম উভয় দিকে রাস্তা যুক্ত জমি সাধারণ মানের। এমন জমিতেও সতর্ক হয়ে বাড়ি করতে হবে।
চিত্র:
উত্তর ও দক্ষিণ দিকে রাস্তা আছে এমন জমি এমনিতেই সাধারণ মানের। তবে এরকম জমিতে বাড়ির দু দিক দিয়েই প্রবেশপথ করা ঠিক নয়।
চিত্র:
পূর্ব ও পশ্চিম দু দিকেই রাস্তা থাকলে সেই জমি সাধারণ মানের। এখানেও প্রবেশ পথ উভয় দিক্ দিয়ে করা উচিত নয়।
তিন দিকে রাস্তাযুক্ত জমি:
চিত্র:
উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম তিন দিকেরাস্তাযুক্ত জমি খুব ভাল।
উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম তিন দিকে রাস্তার ওপর অবস্থিত জমি সাধারণ মানের।
চিত্র:
উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব তিন দিকে রাস্তার ওপর অবসি’ত জমি সাধারণ মানের।
চার দিকে রাস্তা যুক্ত জমি:
চিত্র:
চারদিকে রাস্তা আছে এমন চৌকো জমি হল শ্রেষ্ঠ জমি।
যে জমি ইংরেজি বর্ণমালার ‘T’ অথবা ‘Y’ যুক্ত রাস্তার সংযোগসথলে রয়েছে সেই জমিতে বাড়ি করা উচিত নয়। কারণ এতে বাস্তুমতে ধনাত্মক শক্তির প্রাচুর্য কম থাকে।
চিত্র:
যদি কোনও রাস্তা জমির মাঝখানে এসে শেষ হয় তবে তা খুবই খারাপ। নীচের ছবিতে রাস্তা কোন দিক্ থেকে এলে জমিতে তার কী প্রভাব তা দেখানো হল। এই রকম জমিকে “বিধিশূল” বলে। “বিধিশূল” বলতে বোঝায় “বিঘ্ন বা প্রতিবন্ধক”।
চিত্র:
জমির দিশা চারদিকের কোনও দিকেই যদি প্রকৃতপক্ষে না থাকে এবং সংলগ্ন রাস্তাও যদি সোজাসুজি না গিয়ে কানাচে ভাবে যায় তা হলে বাড়ি করার সময় এমনভাবে নকশা করতে হবে যাতে বাড়ি রাস্তার সমান অর্থাৎ কোনাকুনিভাবে না করা হয়। এই রকম জমিতে বাড়ির নকশা যেন উত্তর-দক্ষিনের চৌম্বক-অক্ষের কাছাকাছি হয়।
সংক্ষেপে চিত্রের সাহায্যে দেখানো হল তিনদিক্ ও চারদিকে রাস্তাযুক্ত জমি সবচেয়ে ভাল। কিন্তু জমির যে কোনও দুটি দিকের কোণ যেন ৯০০ হয়। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ যেন অবশ্যই ৯০০ হয়।